রাবিতে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday 9 April 2019

রাবিতে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, রাবি প্রতিনিধি:>>>
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও থেমে নেই মাদকের ব্যবহার। ক্যাম্পাসকে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদকসেবীরা। হাত বাড়ালেই কিংবা ফোন করলেই পাওয়া যায় ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ারের মতো ভয়াবহ মাদক দ্রব্য।
এতে ধ্বংসের পথে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকরা। আর এসব মাদক সরবরাহের কাজগুলো মূলত করে থাকে স্থানীয় যুবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী এবং কিছু শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে ক্যাম্পাসের নির্জন জায়গাগুলোতে জমে উঠে মাদকের আসর। ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয় এসব মাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, বহিরাগতসহ মাদকে লিপ্ত রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার প্রদক্ষেপ নিয়েও মাদকসেবীদের ভয়াবহতা থামাতে পারছেন না। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে মাদকসেবীদের সংখ্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে থেকে সন্ধ্যার পর মাদকদ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উৎসবে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের আসর নিত্যদিনের ঘটনা। এসব চিত্র এখন আর সন্ধ্যা বা রাতের বেলায় সীমাবদ্ধ নেই। দিনের বেলাতেও ক্যাম্পাসে গাঁজার আসর অহরহ চোখে পড়ছে।
মাদক সেবনের পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলাদা আলাদা গ্রুপ করা থাকে, নির্ধারণ করা থাকে স্থানও। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের মাদক সেবনের জন্য সবাই হাজির হন তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, কৃষি প্রকল্পের গোডাউনের বারান্দা, বিনোদপুর গেট সংলগ্ন আইবিএস ভবন যাওয়ার রাস্তায়, সৈয়দ আমীর হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়, নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পার্শ্বের মাঠ, শাহ মখদুম হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের দুই পার্শ্বে, মাদার বখশ ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের মাঠে, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ সংলগ্ন মাঠগুলোর অন্তত তিনটি পয়েন্টে, তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে তুঁতবাগান এলাকায়, দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের ব্রীজে, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পেছনে চায়ের দোকানে, প্রথম বিজ্ঞান ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাঠে পানির ফোয়ারার নিচে, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ও রবীন্দ্র কলা ভবনের ছাদে, রোকেয়া হলের পশ্চিম দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাজার গেটে রাস্তার পার্শ্বের মাঠে, পুরাতন ফোকলোর মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে, জুবেরি মাঠের দক্ষিণ কোনাসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থান।
স্থানগুলোতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বহিরাগতরাও অবাধে আসর বসিয়ে সেবন করেন মাদকদ্রব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব স্থানে সকালে পাওয়া যায় মাদক সেবনের আলামত।
মাঝেমাঝে ছাত্রীদের হলগুলোর সামনে কিংবা পাশে ফেলে আসে তারা মদ বা ফেনসিডিলের বোতল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা কার্য সাধন করে উধাও হয়ে যায়। ফলে চেনা যাচ্ছে না তাদের। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে তারা। শুধু ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি হলেই এখন মাদক সেবন চলছে।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বহিরাগতরা ছাড়াও অনেক ছাত্রীও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। গত বছরের ১৬ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের ছাদে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেন। যার মধ্যে মেয়ে ৪ জন। একজন মেয়ের ব্যাগ থেকে ৩ পিস ইয়াবা, ৩ প্যাকেট গাঁজা ও সিগারেট উদ্ধার করা হয়।
কিভাবে আসে এসব মাদকদ্রব্য সেই তথ্য জানতে গিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাহিরে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরনের মাদক। ক্যাম্পাস সংলগ্ন স্টেশন বাজার, মির্জাপুর, কাজলা, কাটাখালিসহ বিভিন্ন স্থানের নির্দিষ্ট একাধিক ব্যক্তির কাছে এবং দোকানে মিলে এসব মাদকদ্রব্য। তাছাড়া নগরীর সাহেব বাজারের একাধিক স্থানে মদসহ অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাত ধরেই আসে ক্যাম্পাসে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুর উপর নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করলেই হাতে পৌছে যায় মাদক।
স্থানীয় এক মাদক সরবরাহকারী বলে, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। যদি আমাকে কেউ ফোনে বা সরাসরি মাদকের কথা বলে তাহলে কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় তাদের চাহিদা মেতাবেক নিয়ে আসি। আমার মাধ্যমে তারা পায় এবং আমাকেও ফ্রিতে খাওয়ায়। আমার কাছে মূলত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এবং আমাদের স্থানীয় ছেলেরাই মাদকের জন্য আসে। বেশ কয়েকদিন আগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছেলে তার বান্ধবীসহ এসেছিলো। আমরা এসব বিভিন্ন জায়গা থেকে পাই। ইয়াবা পেতে হলে একটু গোপনে খোঁজ রাখতে হয় আর গাঁজা পাওয়া খুব সহজ।
গাঁজা সেবনকারী বিশ্বদ্যিালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের ভিতরেই আমাদের অনেক লিংক আছে। তারা মাদক সেবনের পর যা বাকি থাকে তা বিক্রি করে। আর যদি না পাই তাহলে চলে যাই বাহিরে। বাহিরের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযান চালানোর ফলে ক্যাম্পাসে এখন গোপনে এসব চলে। তবে বাহিরে একটা লিংক ধরতে পারলেই মাদক পাওয়া সহজ হয়ে যায়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এবং অনেক সময় হলের রুমে বসেই খাওয়া যায়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাডেমিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। তার উপর মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে। গত দুদিন আগেও মাদকে ভেজালের ফলে প্রাণ গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে মাদকের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। কিন্তু তারপরও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। দিন দিন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু যদি কেউ ক্যাম্পাসের বাহিরে মাদক সেবন করে সেটা আমাদের জানা খুব কষ্টকর। এজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। যাদের পরিচিতরা মাদক সেবন করছেন তারা যদি এসে আমাদের খবর দেন তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। এছাড়া ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রয় ও সেবনের বিরুদ্ধে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সবসময় সক্রিয় রয়েছে।





একুশে মিডিয়া/এমএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages