অদ্ভুত মিল ‘গল্প’ : নওমি - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday 10 December 2019

অদ্ভুত মিল ‘গল্প’ : নওমি


একুশে মিডিয়া, ‍মুক্তমত রিপোর্ট:>>>
লেখিকা- ফাতেমা আক্তার নওমি:
আকাশে মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি হবে। মেঘেরও একটা রুপ আছে। আকাশে যখন মেঘগুলো ছড়িয়ে পড়ে তখন প্রাকৃতির এক অন্যরকম মুগ্ধতা দেখা দেয়। চোখে কাজল পড়া শ্যামলা মেয়েদের মায়াবী মুখের মতো লাগে।এদিকে অটোঅটোরিকশা থেকে নামার সাথে সাথেই মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। অনামিকা আমাকে ব্যাগগুলো এগিয়ে দিলো। 

-ইসস, দেখেছিস বৃষ্টি নেমে গেলো।  এখন কি করে বাসায় গিয়ে পৌঁছাবো বল তো?
আশেপাশে কোনো বাড়িও নেই। আমার সব শপিংগুলো ভিজে যাবে। 
-কিচ্ছু হবে না। তুই শুধু নিজেকে সামলে নে। যেই হিল পড়েছিস। এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারবি কিনা দ্যাখ।তোর শপিং সামলানোর দায়িত্ব আমার। 

-আমি জুতো খুলে নিচ্ছি।  সমস্যা নেই। 

ক্রমশ বৃষ্টি বেড়েই চলছে। আমি আর অনামিকা হেঁটে চলেছি। আমাদের সাথে কোনো ছাতা নেই৷ এদিকে গ্রামের কাঁচা রাস্তাটা প্রচন্ড পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আমরা প্রায় বাড়ির কাছেই চলে এসেছি।কিন্তু,  এই বৃষ্টির জন্য এগোতেই পারছি না। আমার খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু,  মহা সমস্যা হচ্ছে ম্যাডামের। 

এর মধ্যেই পেছন থেকে দিলো ডাক। 
-এই শোভন। দাঁড়া একটু আস্তে হাঁট ভাই। আমি তো জুতো খুলেও হাঁটতে পারছি না। এদিকে ভিজেও যাচ্ছি। 

আহ! কি যে একটা অবস্থা। 

ওর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম। অনামিকাকে এতো সুন্দর লাগছে। এই অবস্থাতেও?  চোখের কাজল কেমন লেপ্টে গেছে। চুলগুলো ভিজে কাক ভেজা হয়ে গেছে। ওর পড়নে ছিল বাদামী রঙের শাড়ী। আমি হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, 
- আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে চল। নাহলে পড়ে যাবি। তোর যা অবস্থা। সম্ভব হলে কোলে নিতাম। হিহি। 

-তুই হাঁসছিস? হাত ধরবো না যা।  পারলে কোলে নিয়েই দেখা। 

- আচ্ছা আর হাঁসবো না। তবু্ও এই অবস্থাতে কোলে উঠতে চাইস না। 

এই প্রথম কারও হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজার অভিজ্ঞতা হলো। কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে আমার। আমি একটু বেশিই ভেবে ফেলছি। অনামিকা তো আমার বড়। ২ বছরের বড় মামাতো বোন। তবে ওর সাথে আমার খুঁনসুটি সেই ছোটবেলা থেকেই। ও এবার গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেলেছে। আর আমি " ল" ডিপার্টমেন্টের ২য় বর্ষের ছাত্র। তাই বলে, ওকে আমি কখনও আপু বলে ডাকি নি। ঝগড়াটা বরাবরের মতোই ওর সাথে বেশি হতো। আবার জমিয়ে আড্ডা দেওয়া বেশি ওর সাথেই হয়েছে।আমরা দুজনেই ঢাকা হলে থেকে পড়াশোনা করছি। যে কোনো দরকার এ সবার আগে ও আমাকে খোঁজে।  মেয়েটা আমার বয়সে বড় ঠিকই
কিন্তু ওর সবকিছু আমারই সামলে নিতে হয় বেশি। হয়তো আমি ওকে অনেক ভালো বুঝি তাই। আমি কখনও অনিহা দেখাই না ও যখন ডাকে তখন ই সুড়সুড় করে চলে যাই ওর ক্যাম্পাসে। সবসময় অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি ওর প্রতি। ওকে নিয়ে ভাবতেও খুব ভালো লাগে। ছোট বেলায় আমি ওকে সবচেয়ে বেশি কাঁদিয়েছি। কিন্তু, এখন ওর চোখে জল আসার মতো কিছু হলে আমার কষ্ট বেশি লাগে। তাই তো ওর সমস্ত বায়নাগুলো মাথা পেতে নেই। 
আচ্ছা? কেউ তো বলে না আমি ওর ছোট! আমাদের দেখেও নাকি মনে হয় না। হবে কি করে, আমরা মনের দিক থেকেও অনেক মিল এমনকি আমার অনেক সময় মনে ই থাকে না ও আমার বড়। পাগলীটাকে খুব ইচ্ছে করে এভাবে সারাজীবন আগলে রাখতে। কিন্তু, কি করে এ সমাজ, আমাদের পরিবার কেউই আমার ভালোবাসাকে মেনে নিবে না। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, অনা নিজেই তো মানবে না। ও আমাকে ভালো বন্ধুর মতো ভবে মাত্র। আমি ওর জন্য হেল্পফুল তাই ও আমাকে সবকিছুতে সবার আগে ডাকে৷ তাই বলে কি, জীবনসঙ্গী করবে আমাকে?  এভাবে সারাজীবন পাশে রাখার দায়িত্বটা কি আমাকে দিবে? এছাড়াও অনা আমার থেকে ভালো স্টুডেন্ট।  ছোট বেলা থেকেই ওর সফলতার গল্প শুনে এসেছি। নানুবাড়িতে ওর বেশ কদর এই জন্য। আমার নানুবাড়ি আর ওর দাদাবাড়ি। তাই সবাই একটু শুনিয়েই বলে অনা মেয়ে হয়ে পারলে তুই কেন পারবি না? তবে, এ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। বরং আমারও গর্ব হয়। আমাকে তো সবাই একটা অপদার্থ ই ভাবে।  আর যাইহোক পানি দুইভাগ করা গেলেও আমার কাছে অনাকে বিয়ে দিবে না। তাই যতদিন না ওর বিয়ে হচ্ছে ওর সেক্রেটারী হিসেবে বিনা বেতনে এই চাকুরীটা করে যাই। আমি কিন্তু এই চাকুরীটা সেচ্ছায় করি।এবং করতে ভালো লাগে খুব। সারাজীবন করতে পারলে তো কপাল ই কপাল। হ্যাঁ, আমি অনামিকাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। হয়তো কোনোদিন বলার সাহস হয়ে উঠবে না।
গ্রামে নানুবাড়িতে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে।আগামী পরশু অনার বিয়ে!হ্যাঁ, অনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে ডক্টর। ভালো পরিবার।  এতো ভালো ছেলে কি আর হাতছাড়া করা যায়? বিয়ে তো সমানে সমানে হয়। অনা এবার ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে গ্রাজুয়েট হয়েছে। ভালো একটা জব ও পেয়ে গেছে। তবে, স্বামীর সাথে দেশের বাইরে চলে যেতে হবে সেই সুবাদে চাকুরীটা নাকি ছেড়ে দিতে হবে। দেশের বাইরে গিয়ে যদি নতুন করে কিছু করে। 
ঢাকা থেকে অল্প কিছু শপিং অনা আমাকে সাথে নিয়ে করে এসেছে। আমার নানাদের গ্রামে মস্ত একটা বাড়ি। এ বাড়ির কারও বিয়ে হলে ঢাকাতে নয় গ্রামেই হয়। তবে, আয়োজনে বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকে না। শুনেছি, মায়ের বিয়েও নাকি এই বাড়িতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু,  মা বিয়ের দিন ই পালিয়ে যায় বাবার সাথে।  পরে অনেক ঝামেলা হয় তারপর এক সময় মেনে নেয় সবাই। সে গল্প এখন শুনলে খুব হাঁসি পায়। সে খুব লম্বা কাহিনী। 
এখন না হয় আমার কথাই বলি। মাঝে মাঝে ভাবি,  ইস যদি অনাও আমার সাথে পালিয়ে যেতো!সে কি সম্ভব?  সম্ভব হলে কি আর বিয়ের জন্য রাজি হয়? কতো খুশি মনে আজ সারাদিন বিয়ের টুকিটাকি শপিংগুলো করলো মেয়েটা।  অথচ,  আমার বুক টা হঠাৎ করেই কেঁপে উঠে।  অনার বিয়ে! অনা অন্য কারো হয়ে যাবে।  আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। অথচ,  অনা কোনোদিন জানতে ও পারবে না। কেউ একজন ছিল যে অনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো। আমি ওর জন্য সব কিছু করতে পারি। ওকে  খুশি রাখার জন্যই তো কোনোদিন অনাকে জানতে দিবো না। আমি ওকে ভালোবাসতাম।
ওর মুখে তো হাঁসি লেগেই আছে। খানিকক্ষণ পর পর হবু বরের সাথে অডিও, ভিডিও কলে কথা বলছে। ও কি করে বুঝবে আমার মনের খবর? 
মাথাটা কেমন যেন করছে একটু ঘুমাই। চোখ বুজতেই অনার ডাক,
-শোভন!  এই শোভন। আরে কই গেলি?  চল না ভাই। 
হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠে বের হয়ে বাইরে আসলাম। অনা ডেকেছে যে। 
- হ্যাঁ, কি হয়েছে বল? ডাকছিস কেন? ও হাঁসতে হাঁসতে বলে, 
- কিরে এই অসময়ে ঘুম? প্রেমে পড়েছিস নাকি কারো?
--ধুর। কার প্রেমে পড়বো?  আর প্রেমে পড়লে বুঝি ঘুমায়?  একটু দুর্বল লাগছিলো তাই শুয়েছিলাম৷ বল ক্যান ডাকছিস?
চোখেমুখে একটা খুশির ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে অনা বললো,
-চল একটু বের হই।অয়ন ও আসবে। 
-হিহি তোর ওর ভাবওয়ালা ডক্টর আসবে?  এটা আমি বিশ্বাস করি না। আর পরশু তোর বিয়ে এতো ঘুরাঘুরি কিসের?  যা গিয়ে ঘুমা। ঘুমিয়ে চেহারা ঠিক কর।নাহলে দেখবি বিয়ের দিন গাঞ্জাখোরের মতো লাগবে তোকে!
রাগে কড়মড় করে চেয়ে অনা এবার বললো, 
-যাবি কিনা বল। অনয় আসছে মানে আসছে। তুই না গেলে আমি একাই যেতে পারবো। 
-এই না আমি এমনি মজা করলাম।  বিয়ের কনে বলে কথা এই অবস্থায় তোকে একা ছাড়া যায় নাকি?  তুই তো মেকাপ লাগিয়ে ফেলছিস। দাঁড়া আমি শুধু শার্টটা নিয়ে আসছি রুম থেকে। 
বেলা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। চারদিকে কেমন অন্ধকার।  গ্রামে এই এক সমস্যা। রাত হলে কেমন অন্ধকারে ছেয়ে যায় চারিদিক।  সমস্যা তো ওর হচ্ছে। আমার বাঁ হাতটা চাঁপ দিয়ে ধরে রেখেছে অনা। এই মেয়েটা আবার ভয়ও পায়।
-আল্লাহ ই জানে অয়ন ভাইয়া তোকে কিভাবে সামলাবে?
- ক্যান তোকে নিয়ে যাবো। 
-হয়েছে। ভাইয়া আমাকে মাইর দিবে। নাহলে তোকে বকা দিবে। বলবে,  তোমার এই ভাইয়ের সাথে এতো কি হুম? তখন দেখবি কেমন জ্বলবে৷ 
অনামিকা চুপ করে রইল। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলে, 
-জানিস ও আমাকে আজ কি বলেছে? ও নাকি আমাকে অনেক ভালোবাসে৷ আমার দ্বায়িত্ব নিতে নাকি ওর খুব ভালো লাগবে। গ্রামের এই খোলা পরিবেশ ওর নাকি খুব ভালো লাগে। ভাবা যায় বল? লাইফের বেশি ভাগ সময় কানাডায় কাটিয়েছে অথচ দ্যাখ কতো অমায়িক একটা ছেলে। আমি ওকে যতো দেখছি অবাক হয়ে যাচ্ছি। অনেক দুর্বল হয়ে যাচ্ছি ওর প্রতি। আমার মনে হয় কি জানিস ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমাকে অনেক বুঝে।  আমার মতামতের  অনেক গুরুত্ব দেয়।
- তাই!  অয়ন ভাই তোকে অনেক বুঝে? আচ্ছা, তুই কি করে বুঝলি তোকে অনেক ভালোবাসে?  শুধু তার মুখের কথা শুনে? 
-আরে না। শুধু কি তাই নাকি। আমাদের মেয়েদের একটা ক্ষমতা আছে। কেউ আমাদের প্রেমে পড়লে বা ভালোবাসলে তার আচরণে বুঝতে পারি।
- তাহলে কি তুই সব বুঝিস? সব কিছুই কি বুঝে ও অবুঝের মতো করিস?
-হুম। বুঝেছি তো। নাহলে কি তোকে বলতাম। ওকে ও আমি বলে দিয়েছি। 
- কি বলেছিস?
- আমিও ভালোবাসি ওকে। 
-ওহ।আচ্ছা। ভালো তো।
আমি সহ্য করতে পারছি না এতো আয়োজন।  সারাবাড়ি সাজসজ্জায় আলোকিত করা হয়েছে। হাতে হাতে আমিও করেছি। অনার পছন্দ মতো সব হচ্ছে। কাল সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারি নি। অঝোরে অশ্রুপাত হচ্ছিলো। কি যে হচ্ছে আমার! মামাতো বড় বোনের বিয়ে। কই আমি আনন্দ করবো তা না করে মিথ্যেই ভালোবেসে বসে আছি। এমন কেন মনটা? একটু কঠিন হতে পারতো না? সহ্য করতে পারছি না। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। এতো অভিনয় করা যায় নাকি? শুধু কয়েক ঘন্টা সময়। তারপর তো অনা অন্যের বউ হয়ে যাবে। ভাবতেই বুকটা ধুক করে উঠে। প্রচন্ড ব্যাথা করছে বুকটা আজ। মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছি না। প্রিয়জনের বিয়ে কি এতো সহজে মেনে নেওয়া যায়? এতো আয়োজন এতো আনন্দ সবার। অথচ একটা কাক পক্ষীও জানেনা আমার মনের খবর। কালকে অনেক বার মনে হয়েছিলো, অনাকে একবার মনের কথাটা বলেই দেই। কিন্তু না হলুদ সন্ধ্যায় এতো বেশি খুশি ছিল ও। ভাবলাম, হাঁসি মুখটা বিরক্তিকর পরিবেশ করার কি দরকার।  ও তো আমাকে মানবে না। উল্টো বিরক্তির কারণ হয়ে যাবো।
দামী দামী শাড়ি অলংকার পড়ে বধুবেশে মনে হচ্ছে কোনো এক রাজ্যের রাজকন্যা। কতো ভাগ্যবান আমি! নিজের ভালোবাসার মানুষকে এতো কাছ থেকে দেখতে পারছি তার বিয়ের দিন কনে বেশে। 
অনার হবু শশুর বাড়ি থেকে লোকজনরা এসে গেছে। ও সবার সাথেই হাঁসিমুখে কথা বলছে। সবাইকে দেখছে।  সবাইকে সময় দিচ্ছে। আর আমি?  আমি শুধু ওর পাশে বসে ওকেই দেখছি। জানিনা আর কোনোদিন এতো ভালো করে দেখার সুযোগ হবে কিনা! চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। আর বলতে ইচ্ছে করছে, অনা তুই শুধু আমার। আমাকে এভাবে একা করে চলে যাবি না, প্লিজ। আমি হয়তো দামী শাড়ি গয়না দিতে পারবো না। কিন্তু, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে পারবো। 
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম কে যেন হাতে চাঁপ দিয়ে ধরেছে। বাঁ দিকে ঘুরে দেখি অনা। চোখে ইশারা দিয়ে বললো রুমে চল। আমি সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়লাম।  আর কে ই  বা আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে? বিয়ের দিন সবার চোখ তো বর-কনের দিকে পড়ে। আমি তো একজন নগন্য ব্যক্তি। 
রুমে এসে অপেক্ষা করছি অনার জন্য। কেন আমাকে রুমে ডাকলো হঠাৎ? 
চিন্তা করতে করতেই অনা এসে হাজির, 
-শোভন। কি হয়েছে তোর?  তোর চোখ লাল কেন? উলটাপালটা কিছু খেয়েছিস নাকি? বল আমাকে কি হয়েছে?
একটু হাঁসি দিয়ে বললাম। 
-কি হবে?  আর তুই আমাকে নিয়ে কেন ভাবছিস? তোর বিয়ে আজ।  দেখেছিস অয়ন ভাইয়াকে কতো সুন্দর লাগছিলো বর বেশে?
-দ্যাখ,শোভন নিজেকে খুব চালাক ভাবিস না। কি হয়েছে বল? আমার কথার উত্তর দে। নাহলে আমি বিয়ে করবো না। 
--আরে কি হবে? তুই আমাকে নিয়ে পড়ে আছিস কেন? আই এম ফাইন। আমি ঠিক আছি।বইন। তুই যা। বিয়ে কর। 
রাগ হয়ে অনা বলে,
- সত্যিটা বলবি?  আমি বিয়ে করবো না ব্যস। তুই কি ভাবিস? তুই আমাকে একা বুঝিস আর আমি তোকে একটুও বুঝি না? 
-কি বুঝিস তুই শুনি? আর শোন, আমি তোর ছোট বুঝছিস?  বড় হিসেবে কি আর বুঝবি বল?বড়বোন বড় বোনের মতো থাক।  অয়ন ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।  যা সময় নষ্ট করিস না। মন্ডবে যা। 
-আচ্ছা যাবো। আগে বল কালকে রাতে কেন কাঁদছিলি? আর আমার দিকে এমন করে আজ কেন তাকিয়ে ছিলি? তুই ভাবিস তো আমাকে বড় বোন? কোনোদিন কি ভেবেছিস? আমাকে ভালোবাসিস শোভন?  চুপ করে থাকবি না সত্যিটা বল। 
কথাটা শুনে থমকে গেলাম আমি। মুখ দিয়ে না বলতে চাইলেও অন্তর সাঁয় দিচ্ছিলো না। চেঁপে রেখে কি লাভ!  পাবো না সেটাও জানি। আমি বলে দিলাম,
- হ্যাঁ ভালোবাসি তো? কোনো দাম আছে এই ভালোবাসার?  আমি তোর বয়সে ছোট। এই সমাজ, এই পরিবার কেউ মেনে নিবে? নিবেনা। আর সবচেয়ে বড় কথা আজ তোর বিয়ে। আর যার সাথে বিয়ে তাকে তুই ভালোবাসিস। তাহলে কেন জানতে চাইছিস শুধু শুধু?
অনামিকা ঠাস করে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে  আমার বুকে মাথা রেখে বলে, 
- তুই কি মেনে নিবি ২ বছরের বড় বউ? সারাজীবন মেনে নিতে পারবি? 
- মেনে না নিলে কি আর ভালোবেসেছি!
-তাহলে পালাচ্ছিস না কেন আমাকে নিয়ে। চল পালাই। হাত ধর।  সারাজীবনের জন্য দিয়ে দিলাম আগলে রাখার দায়িত্ব।  আমার একটা জব আছে না! দিব্যি চলে যাবে দুজনের। সব স্বামীরাই তো নিজের সংসার চালানোর দায়িত্ব নেয়। আমি না হয় বউ হয়ে নিলাম।  যতদিন না তুই পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকুরী পাচ্ছিস। 
-- আচ্ছা। চল চল। বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু,  একটা কথা। এখনি কোলে উঠতে চাইস না৷ তাহলে দৌড়াতে পারবো না।
বেড়িয়ে পড়লাম ভালোবাসার পরিনতি ঘটাতে। সমাপ্ত।






একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages