একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঁশখালীতে সরবে-নিরবে যারা-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday 22 July 2018

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঁশখালীতে সরবে-নিরবে যারা-একুশে মিডিয়া


একুশে মিডিয়া, চট্টগ্রাম রিপোর্ট:
বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশাখালী) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যজোটের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠ চষে ফিরছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি বড় দুই দলই গ্রুপিং এর কারণে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ছাড়াও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলম, এ আসনের সাবেক সংদস এডভোকেট সুলতান উল কবির চৌধুরী ছেলে ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন এখন মাঠে রয়েছেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এবং একই পার্টির দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিকীও মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অপর দিকে এই আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হলেও জোটগতভাবে নির্বাচন না হলে এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিতে পারে জোটগত নির্বাচন না হলে এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন দক্ষিণ জেলা এলডিপি সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী।
এ ছাড়াও পৌরসভা বিএনপি সভাপতি দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ কামরুল ইসলাম হোছাইনি, ৮০’র দশকের ছাত্রদল নেতা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন এবং সাবেক দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল নেতা ও গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লেয়াকত আলী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন নেতা চট্টগ্রাম দারুল মা-আরিফ মাদরাসার মুহাদ্দিস হাফেজ ফরিদ আহমদ আনছারীও এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া এ আসনে নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, ১৫১ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলবর্তী বাঁশখালী থানা গঠিত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উপজেলার উত্তরে শঙ্খনদী ও আনোয়ারা উপজেলা, পূর্বে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা, দক্ষিণে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা আর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।

নানা কারণে এই উপজেলার বেশ পরিচিতি রয়েছে। মালকা বানু ও মনু মিয়ার প্রেমের কাহিনী সবার জানা। এই মালকা বানুর বাড়ি এই উপজেলায়। তা ছাড়া উপ-মহাদেশের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল করিমের জন্মভূমি বাঁশখালী।
বঙ্গোপসাগর আর পাহাড় বেষ্টিত এই উপজেলায় হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা একই সাথে বসবাসের সুখ্যাতি রয়েছে।

২০ দলীয় জোট বা মহাজোট প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চোধুরী এ আসনে ছয়বার নির্বাচন করেছেন। তিনি বিএনপি থেকে ১৯৭৯ সালে একবার এবং ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে দু’বার নিয়ে মোট তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএনপির দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৬ (দু’বার) ২০০১ ও ২০০৮ সালে মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ আসন থেকে। কাজেই জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে মূলত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনের পর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

এ কারণে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত হলেও এ আসনে বাঁশখালীর আলোচিত ব্যক্তিত্ব মরহুম নজির আহাম্মদ মাস্টারের ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মুজিবুর রহমান ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ আলোচিত হয়েছেন।

তেমনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর আপন ভাগিনা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন এখন এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন। তিনিও বেশ আলোচনায় রয়েছেন।
১৯৯১’র জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মরহুম সুলতানুল কবির চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী তৎকালীন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু ছালেহ চৌধুরী। এরপরই এ আসনটি চলে আসে বিএনপির দখলে।

এ আসনে বিএনপির আলহাজ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী টানা চারবার সংসদ সদস্য থাকাকালে উপজেলার অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেন। এ ছাড়া বেড়িবাঁধসহ এলাকার বেশ উন্নয়ন করেন তিনি। এ কারণে এলাকায় তারও অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ও দেয়ার বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক নেতাই দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় লবিং করছেন।

এটি তার গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে আমরা তার পক্ষ হয়েই কাজ করে যাবো।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আগামী নির্বাচনে দল মাঠ যাচাই বিশেষ করে যারা দলের এবং দেশের হয়ে ভালো কাজ করেছেন এবং যাদের মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এমন নেতাদের মূল্যায়ন করবে বলে তিনি মনে করেন।

সাম্প্রতিক সময়ের বড় দুই দলের নেতাদের কিছু তথ্য:
গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলে দুই দলই নিজেদের দ্বন্দ্ব বিভাজনকে সামনে নিয়ে এসেছেন। এ নিয়ে উভয় দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এমন বিরোধ দুই দলকেই কঠিন মাসুল দিতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর এমন দ্বন্দ্বের কারণে দারুনভাবে অস্বস্তিতে ভুগছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি বর্তমান ও সাবেক দুই সাংসদ। বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতার অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছেন। এরমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী গত ২জুন গ্রীণ পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার মাহফিল করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বিরুদ্ধেই বিষেদাগার করা হয়েছে বেশি। এ অনুষ্ঠানের ব্যানারে নিবেদক হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের নাম থাকলেও তিনি যাননি। সাংসদ অনুসারীরা জানান, এমপির সাথে বিচ্ছিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব চলছে। কয়েকজন পেছনের সারির নেতা দুই নেতার কান ভারী করে দ্বন্দ্বে ইন্ধন জুগিয়েছেন।
আব্দুল গফুরকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ইফতার মাহফিলেও দেখা যায়নি। এমপি বিরোধী হিসেবে পরিচিত পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও পৌরমেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী ৫জুন পৌরসভায় ইফতার মাহফিল করেছেন। সেখানে কোন নেতার পক্ষে অবস্থান না নিলেও সবনেতার অনুসারীদের দাওয়াত দেন তিনি।

অন্যদিকে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে নিজ অনুসারীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল করছেন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আবদুল্লাহ কবির চৌধুরী লিটন। প্রত্যেক মাহফিলেই তাঁর অনুসারী নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেখানেও বিএনপির রাজনীতির সমালোচনার পাশাপাশি নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করা হয়েছে। ১জুন নিজ বাড়িতে পিতা মরহুম মাস্টার নজির আহমদের স্মরণে ইফতার মাহফিল করেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান সিআইপি। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
যোগ দিয়েছিলেন এমপি বিরোধী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও। যদিও সেখানে রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে বিরত ছিলেন সবাই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার এমন দ্বন্দ্বে পিছিয়ে নেই বিএনপি। তাঁরাও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এ দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর একছত্র আধিপত্যে এবার ভাঙন ধরাতে চান বিকল্প পক্ষটি। তারা এবার নতুন প্রার্থী চেয়ে ম্যাডামের কাছে যাবেন বলেও ঘোষনা দেন। বিএনপির গ্রুপিংয়ের মধ্যমনি দুইজন। একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক পৌরমেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী। দুইজনের সাথে যোগ দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে জাফরুল ইসলামের সাথে আছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর কবির চৌধুরীসহ কয়েকজন সাবেক চেয়ারম্যান। অন্যদিকে কামরুল ইসলাম হোসাইনীর সাথে আছেন সাবেক চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিলসহ অনেকেই। কামরুল ইসলাম হোসাইনীর পক্ষটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জুয়েল ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে জানা গেছে। দুই পক্ষই একইদিনে পৃথক ইফতার মাহফিল করেছেন গত সোমবার। জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা খানখানাবাদ সেন্টার পুকুর পাড়ে এবং কামরুল ইসলাম হোসাইনীর অনুসারীরা পৌরসভার আলাওল ডিগ্রী কলেজ মাঠে ইফতার মাহফিল করেছেন। সেখানেও দুই নেতার অনুসারীরা প্রতিপক্ষদের সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে গত ১জুন আলাওল ডিগ্রী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এলডিপির ইফতার মাহফিল। সে অনুষ্ঠানে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও কামরুল ইসলাম হোসাইনীর অনুসারীরা যোগ দিয়েছেন। এলডিপির ইফতারে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল অলি আহমদ। তাঁর উপস্থিতিতেই সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages