গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুই গরু গাড়ী এখন নবীন-প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Friday 10 January 2020

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুই গরু গাড়ী এখন নবীন-প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি


উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে:>>>
নড়াইলের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুই গরু গাড়ী এখন নবীন-প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুই গরু গাড়ী এক মানুষের দ্বারা চালিত কাঠ বাশেঁর উপকরনে বিশেষ তৈরি গরুর গাড়ি। আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে ধুত্তুর- ধুত্তুর-ধুত্তুর’ সানাই বাজিয়ে যাবো তোমায় শ্বশুরবাড়ী নিয়ে’- জনপ্রিয় এই গানটি সিডি–টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এখনও শোনা গেলেও উপজেলার কোথাও গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন আর চোখে পড়ে না। 
জানা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগেও গরুর গাড়ী ছাড়া বিয়ের কনে ও বরযাত্রীদের যাতায়াত কল্পনাই করা যেত না। বিয়েতে গরুর গাড়ীর ব্যবহার ছিল গ্রামবাংলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের এক এলাকা হতে অন্য এলাকার হাট-বাজারে পণ্য বহনে একমাত্র ভরসা ছিল গরুর গাড়ী। ফসল ঘরে তোলা বা বাজার জাতকরণ থেকে জমির ধান কাটার পর সেই ধান, পাট ও অন্যান্য কৃষী পন্য সরবরাহ হত গরুর গাড়ীতে।
তাছাড়া একসময়ে গ্রামবাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানান ডিজাইনের গরুর গাড়ী। সেই এ্যনালগ সময়ে গরুর গাড়ী অন্যদের মালামাল পরিববণের জন্য ভাড়াও দিয়ে থাকত অনেকেই বলে জানা যায়।
যুগের পরিবর্তনে-ডিজিটাল যুগের ছোঁয়ায় মানুষজন গরুর গাড়ীর পরিবর্তনে এখন ওই একই কাজে ব্যবহার করছে রিক্সা,ভ্যান, অটোরিক্সা, ভটভটি, নছিমন-করিমন, মাইক্রোবাস,কার ও বাস-ট্রাকসহ ইঞ্জিনচালিত নানান বাহনে। সে সময় ছিল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে নতুন ধান কাটার নবান্নের উৎসবে গরুর গাড়ীর প্রতিযোগিতার মানে নির্মল আনন্দের উপকরণ।
গরুর গাড়ী প্রতিযোগিতাও হত একেক এলাকার খোলা মাঠে। ওই খেলাটিও হারিয়ে গেছে কালের আবর্তনে ডিজিটাল যুগের ছোঁয়ায়। গরুর গাড়ী সম্পুর্ন হারিয়ে যাওয়ার শেষ সময়ে ছোটবেলায় দেখেছি আত্মিয় স্বজনসহ অন্যান্যদের বিয়ের সময় বর-কনে উভয় পক্ষই গরুর গলায় ঘণ্টা লাগিয়ে টোপর উঠিয়ে নানা রঙে গরুগাড়ী সাজিয়ে গরুর গলায় ঘুগরা ও ফুলের মালা পরিয়ে বর-কনে আনা নেয়া করত ওই গরুর গাড়ি কাপড় দিয়ে ঘিরে বোরকা বানিয়ে।
গরুর গলার ঘুগরার বাজনা আর সারিবদ্ধ গরুরগাড়ী সে এক অপরূপ শোভা সৃষ্টি হত সে সময়। সেই দৃশ্য দেখতে গ্রামের শিশু, কিশোর ও নারী-পুরুষেরা বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতো রাস্তার ধারে।
এমন দৃশ্যের কথা এখন ভাবাই যায় না। নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে ওই সব স্মৃতির দিনগুলো। তবে বাংলা নববর্ষ এলেই এদেশের মানুষ নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে মেতে ওঠে ইচ্ছা করে সল্প সময়ের জন্য।
তখন বাংলা নববর্ষ বরণ শোভাযাত্রায় কিছু গরুর গাড়ি দেখা যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তাছাড়া উপজেলার কিছু এলাকায় দু একটা গরুর গাড়ির দেখা যায়। কালের আবর্তনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী উপজেলার প্রায় এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। হারিয়েছে প্রায় ইউনিয়ন থেকেও। এখন নবীন-প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি।
দ্রুত বয়ে চলা সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্য ভুলে এখন গ্রাম-বাংলার মানুষজন হয়ে গেছে যান্ত্রিক। যার দরুন হিসেবে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ী শব্দটির সাথে পরিচিত নয়।
এমনকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গরুর গাড়ী যাদুঘরে গিয়ে দেখতে হবে বলে ধারণা অনেকের। জেলার বিভিন্ন এলাকায় খুব অল্প কিছু দেখা যাওয়া প্রাচীন ঐতিহ্য গরুর গাড়ি ও চলাচল। তাই পুনরায় আগের মত চলাচল বৃদ্ধি এখন কার অনেকের কাছে সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।




একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages