নির্দেশ অমন্য করে বাঁশখালীতে এনজিও সংস্থাগুলো কিস্তি আদায় করছে। দৃষ্টিহীন স্থানীয় প্রশাসন! - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday 24 March 2020

নির্দেশ অমন্য করে বাঁশখালীতে এনজিও সংস্থাগুলো কিস্তি আদায় করছে। দৃষ্টিহীন স্থানীয় প্রশাসন!

‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের এনজিও সংস্থা ফ্লিস অফিসার মঙ্গলবার সকালে কিস্তির টাকা আদায় করছেন বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের পূর্ব কোকদন্ডী গ্রাম থেকে।
মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম, চট্টগ্রাম:
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন না, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁদের খেলাপি গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) থেকে সনদপ্রাপ্ত দেশের সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য। এ নিয়ে গতকাল রোববার এমআরএ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
উপরে উল্লেখিত নির্দেশ অমন্য করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লোকজন চলাচলও সীমিত করে দেয়া হয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান কমে গেছে।
এতে দিনমজুর-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন স্থানে চলছে এনজিওর ঋণ আদায় কার্যক্রম। এতে এনজিওর ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র মানুষ এখন বিপাকে। তাদের দাবি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিত করার।
চট্টগ্রামে বাঁশখালী উপজেলা পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, খানখানাবাদ, বাহারচড়া, বৈলছড়ী, কাথরিয়া, সরল, শীলকুপ, গন্ডামারা, চাম্বল, ছনুয়া, পুঁইছড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়  বিভিন্ন এনজিও সংস্থা গুলোর নির্ধারিত দৈনিক সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্থির টাকা আদায় করছেন।
এইদিকে বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের পূর্ব কোকদন্ডী গ্রামে ‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামের এনজিও সংস্থা ফ্লিস অফিসার মঙ্গলবার সকালে কিস্তির টাকা আদায় করছেন, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কয়েক জন সদস্য তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাদের পূর্বের জমানো সঞ্চয় থেকে কিস্তির নির্ধারিত টাকাগুলো সদস্যদের বিনা স্বাক্ষরে কেটে নেন। বলে জানিয়েছেন সদস্যরা।
পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র বাঁশখালী শাখার  ফ্লিস অফিসার (০১৮২২-২৭০৮৮৭) নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি একুশে মিডিয়াকে বলেন, আদেশ-নির্দেশ বুঝি না চাকুরি করি অফিসের তাই অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী কিস্তির টাকাগুলো আদায় করছি। আপনার লিখলে লিখতে পারেন আমার কিছু করার নেই।
এসব নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কোন ধরণের উদ্যোগ বা দৃষ্টিহীন রয়েছেন।
এদিকে নাটোর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কলাপাড়া ও অভয়নগরে ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
একুশে মিডিয়া’র প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): ভূঞাপুরে এনজিওর কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাট-বাজারে মানুষ নেই। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় নেই। খেটে খাওয়া মানুষেরা হয়ে পড়ছেন বেকার। এমতাবস্থায় এনজিওর সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তির টাকা জোগাড় দূরের কথা খাবার কেনার টাকা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলায় শতাধিক এনজিও নিয়মিত ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব এনজিও থেকে কয়েক হাজার মানুষ ঋণ সংগ্রহ করেছেন। এতে ঋণগ্রহীতারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভুক্তভোগীরা জানায়, কিস্তির টাকা না দিলে কর্মীরা জন্য রাত অবধি বসে থাকেন, গালমন্দ করেন, হুমকি দেন। গোবিন্দাসী এলাকার ভ্যানচালক আমিনুর জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করায় মানুষ ঘর থেকে কম বের হন। সারা দিনে ভ্যান চালিয়ে যে উপার্জন হয় তাতে সংসারই হয় না আবার কিস্তি দেব কোথায় থেকে।
ফলদা বাজার হাটের মুদি দোকানদার হাসান জানান, হাটে লোকজন প্রয়োজন ছাড়া আসছে না। বেচাকেনা খুবই কম। ইভাবে চললে সংসার চালান খুবই কঠিন।
ইউএনও নাসরীন পারভীন বলেন, এনজিওগুলোর কিস্তি আদায়ের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
গাইবান্ধা: করোনাভাইরাস দুর্যোগে কিস্তি মওকুফে সংশ্লিষ্টদের বাধ্য করাসহ ৭ দফা দাবিতে মঙ্গলবার বাসদ (মার্কসবাদী) শহর শাখার উদ্যোগে গাইবান্ধা পৌর মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলনের হাতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এর আগে পৌরসভা চত্বরে বাসদ (মার্কসবাদী) শহর শাখার সংগঠক আবু রাহেন শফিউল্যাহ খোকনের সভাপতিত্বে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্য নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, লীজা উল্যাহ, মাসুদা আকতার প্রমুখ।
গুরুদাসপুর (নাটোর): নাটোর জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ হতদরিদ্রদের আয় কমায় সব এনজিওর ঋণ আদায় বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এনজিও কর্মকর্তারা সে আদেশ অমান্য করে ঋণের কিস্তি আদায় করছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এনজিও থেকে ঋণগ্রহীতা জাহানার বেগম, আসমা খাতুন, রোকেয় বেগমসহ অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ঋণ নিয়েছেন। প্রায় সবাই ওই ঋণের টাকা নিয়ে অটো ভ্যান ক্রয় করেছেন। তাদের স্বামীরা অটো ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। খাবার কেনার পর সেখান থেকে বাঁচিয়ে ঋণের কিস্তি দেন।
তারা জানান, দুই সপ্তাহ হল করোনার কারণে মানুষজনের চলাফেরা কমে গেছে। আগে ৩ থেকে ৫শ’ টাকা রোজগার হতো। বর্তমানে ১০০ টাকা কামাই হয় না। তা দিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসারই চলে না, কিস্তি দেবে কোথায় থেকে। কিন্তু এনজিওর স্যারেরা এসে জবরদস্তি করছে। এমনকি গালমন্দও করছে।
ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশ দিয়েছেন জুন পর্যন্ত কোনো এনজিওর ঋণের কিস্তি নেয়া যাবে না। কোনো এনজিও নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): ইউএনও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কিস্তি জুন পর্যন্ত না নেয়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে রায়পুরের ২৩ এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে কয়েকটি এনজিওর মাঠকর্মীদের কিস্তি উত্তোলন করতে দেখা গেছে।
উপকূলীয় অঞ্চল চরআবাবিল ও চরবংশী ইউনিয়নের কয়েকটি জেলে পরিবার গ্রামে এনজিও কর্মীরা কিস্তি আদায়ের জন্য বাড়িতে বাড়িতে অবস্থান করছে। দিনমজুর ও জেলে পরিবারকে কিস্তি পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করতে দেখা যায়।
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করলেও এখনও বন্ধ হয়নি কুয়াকাটায় এনজিও কর্মীদের ঋণের কিস্তি আদায়। মঙ্গলবার সকালে বেসরকারি সংস্থা আশার মাঠকর্মীরা কুয়াকাটা পৌরসভার ইসলামপুর মহল্লার বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে কিস্তি টাকা আদায় করেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
২৩ মার্চ পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করছেন। কিন্তু এনজিও কর্মকর্তারা তা মানছেন না। কিস্তির টাকা পরিশোধে অনেকে অনীহা প্রকাশ করলে এনজিও কর্মীরা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। নতুন করে ঋণ নিতে অসুবিধা হবে বলেও সতর্ক করা হচ্ছে ওই সব এনজিওর পক্ষ থেকে।
জাহিদ হোসেন নামে এক এনজিও মাঠকর্মী বলেন, কিস্তি আদায়ে আমাদের ওপরের কোনো নির্দেশ পাইনি। তাই আদায় করছি।
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সরকারিভাবে এনজিওর কিস্তি তোলার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে। এরকম অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভয়নগর (যশোর): ২৪ মার্চ যুগান্তরে অভয়নগরে এনজিওর কিস্তি আদায় শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে উপজেলা প্রশাসন কিস্তি আদায়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার অভয়নগর ইউএনও নাজমুল হুসেইন খানের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম রফিকুল ইসলাম উপজেলার সব এনজিও প্রতিনিধি ও স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিভিন্ন সমিতির কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত তাদের দেয়া ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর): রামগঞ্জ উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কিস্তি আদায় বন্ধ করে দিয়েছেন ইউএনও মুনতাসির জাহান। করোনাভাইরাসজনিত কারণে দেশে লকডাউনে কিস্তি গ্রহীতারা সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি পরিশোধে সমস্যা হবে মর্মে ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় লিখিত আদেশ জারি করেন।
লিখিত আদেশে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়ায় পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ থাকবে।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages