ঝিনাইদহে ২০৪ হেক্টর জমির ফুল নষ্ট হচ্ছে - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Wednesday 15 April 2020

ঝিনাইদহে ২০৪ হেক্টর জমির ফুল নষ্ট হচ্ছে


রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ:
ক’দিন আগেও মাঠের পর মাঠ দোল খাচ্ছিল লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। এসব এলাকার কৃষকেরা ফুলের রঙে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল।
ঠিক তারাই এবার জানালেন ফুল নিয়ে চরম হতাশা আর দুঃস্বপ্নের কথা। কৃষক আনোয়ার হোসেন তিন বিঘা জমিতে গাঁদা, রজনীগন্ধা আর গ্লাাডিয়াস ফুলের চাষ করেছেন । দু’সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল ।
এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছও মরে যায়। এক বিঘা জমির গাছ থেকে একবার ফুল তুলে ফেলে দিতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। দু‘সপ্তাহে দু’বার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিয়েছেন তিনি। এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে করোনার মহামারী থাবায়।
এ ভাইরাসের কারণে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে আছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন এ বছর প্রায় দুই লক্ষাধিক টাক খরচ করে এই চাষ করেছিলেন। যা করোনার থাবায় মাটি হয়ে গেছে। একই অবস্থা জেলার কয়েকশত ফুলচাষির।
এবছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ২০৪ হেক্টর জমিতে । গত বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টরে। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলার সদর উপজেলার গান্না এলাাকায় ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। যশোরের গদখালির পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলনগরী হিসাবে খ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা।
১৯৯১ সালের কথা। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ প্রথম ফুল চাষ শুরু করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে।
সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার কয়েকশত কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছেন। সাথে কর্মসংস্থানও হয়েছে হাজার হাজার ফুলকর্মী নারী-পুরুষের। চলতি মৌসুমে বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। ২৩ মার্চ থেকে ফুলের বাজার বন্ধ। প্রতিবছর এ জেলার ফুলচাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নব বর্ষ উদযাপন সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিয়ে থাকে।
এ সময়ে ভালো লাভপান কৃষকরা। এবছর স্বাধীনতা দিবসের আগে থেকে ফুল বেচাকেনা বন্ধ। এখনো সামনে রয়েছে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের। কিন্তু কৃষকের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে করোনা ।
ফুল বেচাকেনা না থাকায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছে এই স্বম্ভাবনাময় ফুলচাষের সাথে জড়িতরা। বেশি বিপদে পড়েছে ফুলকর্মীরা যারা ফুল তোলা ও গাথার কাজ করে সংসারের খরচ যোগান দিত। এদিকে সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলাকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনেক জায়গায় দেখা যায় কৃষকরা ফুলসহ গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান একুশে মিডিয়াকে জানান, এবছর তিনি আট বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেন। অনেক জমিতে ফুল তোলা শুরু করাও হয়। এখন ফুল বেচাকেনা বন্ধ। জমিতে ফুল পঁচে নষ্ট হচ্ছে। কিছু ফুল তারা গবাদি পশু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। অনেকে জমির ফুল গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছেন।
জেলার  বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট সহ দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপারী আর ফুল কর্মীদের হাকডাকে মুখরিত থাকতো  এলাকা। সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন।
অনেক স্থানে দেখা গেলো কৃষকরা ফুলসহ গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছেন। ক’দিন আগেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট সহ দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপারী আর ফুল কর্মীদের হাকডাকে মুখরিত থাকতো এলাকা। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তুপ করে সাজানো হতো ফুল।
ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। সেখানে এখন আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একই রকম অবস্থা জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারেও। সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানান, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছেন।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস একুশে মিডিয়াকে জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা চরম বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। অনেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।



একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages