রেখা মনি, রংপুর:
ভারী
বর্ষণ আর উজানের ঢলে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে তিস্তা নদী। পানি বৃদ্ধি পেয়ে
বিদৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি
হয়ে পড়েছে তিস্তা তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার
প্রায় দশ হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ওই দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে
করে শুকনা খাবার সংকটসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের
হাহাকার।
শনিবার
(১১ জুলাই) সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৭
সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া পয়েন্টের সবকটি
জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে বেলার বাড়ার সাথে সাথে পানি কিছুটা
কমেছে। দুপুর ১২টার দিকে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত
হয়েছে।গেল টানা তিন দিন বৃষ্টি আর উজানের ঢলে রংপুরের তিস্তা, যমুনেশ্বরী ও
ঘাঘটে পানি বাড়তে শুরু করেছে। হু হু করে পানি বাড়ায় তিস্তা অববাহিকতার
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে আছে হাজারো পরিবার। গঙ্গাচড়ার
কোলকোন্দ ইউনিয়নের একটি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধটির ১’শ ফুট
ভেঙে গেছে।
তিস্তা
ব্যারাজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) এ এস এম আমিনুর রশিদ জানান,
শুক্রবার (১০ জুলাই) দিনভর ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে
থাকে। রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হয়।
শনিবার সকালে তা কিছু কমে আসলেও এখন বিপদসীমার মধ্যেই উঠা-নামা
করেছে।তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গাচড়ার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর
ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝা, চর চল্লিশাসালের প্রায় আড়াই হাজার
পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় ১৭’শ
পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চরের হুমায়ুনের
বাঁধের ১’শ ফুট ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে ২ হাজার মানুষ
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গজঘন্টা
ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব, রাজবল্লভের কিছু অংশ নদী পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ফলে ইউনিয়নের ৫’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মর্ণেয়া ইউনিয়নের চর
মর্ণেয়া, নীলারপার এলাকার ১ হাজার পরিবার, নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর
নোহালী, বৈরাতি’র প্রায় ২ হাজার পরিবার, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের
হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেবসহ ৫টি গ্রামের প্রায় ৫’শ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
কাউনিয়া
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই,
গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া ও তালুক শাহবাজপুরের কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে
করে বালাপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এছাড়া
টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরন শর্মা, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, টাপুর
চর, হয়বৎ খাত চরের ২ হাজার পরিবার আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যায় ফসলি খেত, ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে। অনেকে তিস্তা নদীর বাঁধে গবাদীপশু
নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
দেখা দিয়েছে।
বন্যা
পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দি লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে এসব মানুষের
মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
গঙ্গাচড়া
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী জানান, শুক্রবার রাত
থেকে তিস্তায় পানি বেড়েছে। ফলে নদীর বামতীরের প্রায় সব এলাকার মানুষ
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি অসহায় মানুষদের জন্য শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয়
সহায়তা প্রদানে সরকার ও বৃত্তবানদের প্রতি আহ্বান তিনি জানান।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment