পলাশে চাকরিচ্যুতের পর এবার বাসস্থানও হারাচ্ছে শতাধিক হরিজন পরিবার - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday 17 September 2020

পলাশে চাকরিচ্যুতের পর এবার বাসস্থানও হারাচ্ছে শতাধিক হরিজন পরিবার

আল আমিন মুন্সী: 

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় অবস্থিত ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কর্মের জন্যে বসবাস করছেন প্রায় অর্ধশতাধিক হরিজন পরিবার। সারকারখানা কর্তৃপক্ষের চাকরির সুবাধে তাদের কেউ অফিসে, কেউ বাইরে, আবার কেউবা স্কুল কলেজে এবং বিভিন্ন হাট-বাজাওে ঝাড়–দারের কাজ করে আসছে এই হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা। সম্প্রতি পলাশ ও ঘোড়াশাল সারকারখানা দুটিতে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এবার তাদের বাসস্থানচ্যুত করার জন্য নোটিশ দেয়  কারখানা কর্তৃপক্ষ। এঅবস্থায় দিশেহারা এখানে বসবাসরত প্রায় অর্ধশত হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
সরেজমিন বুধবার সকালে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানার আবাসিক এলাকায় বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়ের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ, শিশু সহ বাইরে বসে আছে। চোখে মুখে যেনো হতাশার ছাপ। জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা গরীব, আমরা জাতে ছোট, তাই আমাদের কেউ চোখে দেখে না-মুল্যায়নও করে না। আমাদের থাকার ঘরে কারখানা কর্তৃপক্ষ এসে তালা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা কোথায় যাবো?, কি করবো?। কোথায়ইবা রাত কাটাবো? । আমাদের নিজস্ব নেই কোনো বাড়িঘর, কেউ দেয়না বাসা ভাড়াও। কথাগুলো বলার সময় অনেকের চোখেই পানি পড়তে দেখা গেছে।
একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা যায়,একটি দরজায় তালা ঝুলছে। জানতে চাইলে তারা এ প্রতিবেদককে আরও জানান, আমরা যাতে বাসায় রাত্রি যাপন না করতে পারি,সেজন্য সারকারখানা কর্তৃপক্ষ এসে তালা দিয়ে গেছেন।
ঘোড়াশাল সারকারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও বিভাগীয় প্রধান দিল আফরোজ আক্তার ২২ জুন স্বাক্ষরিত ০২৩/৫/৬০৮ স্বারকে বলা হয়েছে কারখানার আবাসিক এলাকার ই-টাইপ এবং এফ-টাইপ- বসবাসকারী যে সকল স্থায়ী অস্থায়ী শ্রমিক/কর্মচারী চাকরি হতে বাদ পড়েছেন এবং অবসরে গেছেন। তাদের মধ্যে যারা বাসা ছাড়েননি তাদের ৫দিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে না দিলে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। নোটিশ পেয়েও মাথাঘোজার ঠাই না পেয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা এখনে বসবাস করছেন। এই প্রেক্ষিতে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যদের পুনরায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিলে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ পলাশ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে তাদের পূর্ণবাসন সাপেক্ষে ব্যবস্থা করার জন্য গত ২৭ আগষ্ট পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প পরিচালক বরাবর একটি নির্দেশনা প্রদান করেন।
পরবর্তীতেও কারখানা কর্তৃপক্ষ হরিজন সম্প্রদায়ের পূর্ণবাসন না করেই তাদের বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের লোকজন দিয়ে হরিজনদের কয়েকটি বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ নরসিংদী জেলা শাখার যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক চন্দন বাসফোর বলেন, আমি আগে এখানে থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতাম। এখন ওখানেই বাসা পেয়েছি। এখানে আমার মা-বাবা থাকেন। তাদের কোথায় নিয়ে যাবো?। বাংলাদেশ হরজিন যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও এখানে বসবাসকারী পঙ্কজ বাসফোর জানায়, আমার বাবা-মা এখানে থেকে কাজ করেছেন। কর্তৃপক্ষ আমাদের চাকরিচ্যুত করেছে।এখন থাকার বাসস্থানও নিয়ে নিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পূর্ণবাসন সাপেক্ষে ব্যবস্থা করার জন্য। আমরাও তাই দাবি জানাই।
এখানে বসবাসরত সংগঠনটির পলাশ শাখার সভাপতি চন্দন বাসফোর, সাধারণ সম্পাদক কানাই বাসফোর জানান, আমাদের বাপ চাচারা এখানে থেকে চাকরি করে বৃদ্ধ হয়েছে। অথচ সারকারখানা কর্তৃপক্ষ এখন জোরপূর্বক আমাদেরকে চাকরিচ্যুত করে এখন বাসন্থানটিও কেড়ে নিচ্ছে। এখন আমরা কোথায় যাবো?। কেউ আমাদের বাসা ভাড়াও দেয় না । তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানা সিবিএ সভাপতি আমিনুল ইসলাম ভূইয়া জানান, যেহেতু দুটি কারখানাকে একত্রিত করে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। তাই তাদের সকলের প্রয়োজন না থাকায় কর্তৃপক্ষ তাদের বাদ দিয়েছেন। তবে তাদের পূর্ণবাসন ছাড়া বাসা থেকে বিতারিত করাটা অমানবিক। কারণ তাদেরকে কেউ বাসা ভাড়াও দিতে চান না। তারা পারিবারিকভাবেই থাকতে পছন্দ করে। তবে হঠাৎ করে বাসায় তালা দেওয়ার ঘটনাটি বসে মিমাংসা করার চেষ্টা করবে বলে জানান এ নেতা। জানতে চাইলে ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার প্রকল্প ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) অহিদুজ্জামান জানান, আমরা কাউকে চাকরিচ্যুত করি নি। এছাড়া আমরা কারও বাসা ছাড়ার জন্য নির্দেশও দেই নি।

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages