এবিএস রনি, যশোর জেলা প্রতিনিধি:>>>
বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর ফুলচাষীরা।
এই তিন দিবস উপলক্ষে সারাদেশের ফুলের চাহিদা যোগান দিতে পর্যাপ্ত ফুল উৎপাদনে দিনরাত ফুলবাগান পরিচর্যা করছেন তারা। এবার বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও মহান ভাষা দিবসে ভালো বেচাকেনার আশা করছেন চাষীরা।
আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় ফুলের ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানান তারা। দিবসগুলো উপলক্ষে এবার ফুলের এ রাজধানী থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা যা গত বছরের চেয়ে ২০ কোটি টাকা বেশি।
সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচাকেনা হয় এর অন্তত ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি-পানিসারায় উৎপাদিত হয়। এবার ফুলের যেমন উৎপাদন বেশি, তেমনি চাহিদাও অন্যান্য যেকোনো বারের তুলনায় বেশি। তাই গদখালির ফুল দিয়ে বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি হাবিবুর রহমান মুকুল জানান, চোরাপথে ফুল আমদানি হওয়ায় ফুলের বিক্রিমূল্য কম হচ্ছে। ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবু আসন্ন বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে এবার ফুলচাষিরা ৭০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
গদখালির পটুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নজরদারিতে এবার ফুলের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন। তাছাড়া গদখালির ফুল উন্নতমানের হওয়ায় এখনকার ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। তিনি অভিযোগ করেন, ফুলহাটে ইজারাদারের বিভিন্ন সিন্ডিগেটের কারণে কখনো কখনো ফুলের বাজার অস্থিতিশীল হয়। এ সমস্যা সমাধানে তিনি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সৈয়েদপাড়া গ্রামের রমজান আলী জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ফুল উৎপাদন খরচ বেড়েছে। শ্রমিক খরচ, চারার দ্বিগুণ মূল্য, সার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ফুলের দাম একটু বেশি। তিনি আরো বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ছাড়াও দেশের ছোটবড় এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন। কিন্তু এ হাটসংলগ্ন এলাকায় কোনো আবাসিক হোটেল না থাকায় ক্রেতারা অসুবিধা ভোগ করেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গদখালী অঞ্চলের ফুল চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ফুলচাষিরা কোরিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা সফর করেছেন। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি গদখালিতে ফুল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ। সরকার সেটির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজা ফুলের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু অসাধু লোক একই ফুল দিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করে এই ফুলশিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। এই প্লাস্টিকের ফুল স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরুপ। ফুলচাষিদের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে চায়না ও থাইল্যান্ড থেকে অবিলম্বে এই ফুল আমদানি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন আব্দুর রহিম।
ঝিকরগাছা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দীপঙ্কর দাস জানান, এবারো গদখালিতে ফুলের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। ২০১৮ সালে যে পরিমাণ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে, এবছর তা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ফুলচাষকে লাভজনক করতে কৃৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা করা হচ্ছেও বলে জানান এই কৃষিবিদ।
উল্লেখ্য, ভারতীয় বন্ধু রমেশ, সাতক্ষীরার আমজেদ, যশোরের নুর ইসলামের সহযোগিতায় ১৯৮৩ সালে প্রথম ফুলচাষ শুরু করেন শের আলী সরদার। তখন স্বল্পপরিসরে ফুল বিক্রি শুরু হলেও এখন তা দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তনি হচ্ছে। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার দুই হাটে ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে।
গদখালিকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী পানিসারা, শরীফপুর, মঠবাড়ি, সৈয়দপাড়া, টাওরা, বেনেয়ালী, কলাগাছি গ্রামে ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। নানা প্রতিকূলের মধ্যে এই এলাকার কৃষকেরা চলে আসলেও ফুলপ্রেমীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি হওয়ায় বর্তমানে ফুলচাষ একটি লাভজনক চাষে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে এখানকার ৫ হাজার কৃষক ফুলচাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment