স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়ন ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নয়। তবে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দুর্গত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে ব্যাপক হারে মাঠে প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনাগ্রহের দৃশ্য চোখে পড়েছে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা ঘুরে।
এসব এলাকার বেড়িবাঁধের ওপর স্থাপিত ঘর-বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দারা ঘরেই রয়ে গেছেন। তাদের গবাদি পশু গরু ছাগল হাঁস মুরগী সর্বত্র বিচরণ করছে। চাষীরা লবণ মাঠে লবণ উত্তোলন, লবণের মাঠ প্রস্তুতে পানি সিঞ্চন, জেলেরা মাছ ধরার কাজ স্বাভাবিক রেখেছে। তবে গভীর সাগরে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ স্থানে ফিরেছে।
উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপর থাকা বাসিন্দাদের দ্রুত সরাতে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী ( সিপিপি)র সদস্যদের তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি বাঁশখালীর উপকূলীয় ১০টি ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ১৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
খানখানাবাদ ইউনিয়নে সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ পরিদর্শন করেন এবং দুর্গত মানুষদের ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্তক ও সচেতন হবার পরামর্শ দেন।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, উপকূলের বাসিন্দারা অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ি অরক্ষিত তাই পুলিশ প্রশাসন আইন শৃংখলা রক্ষার্থে সর্বত্র মাঠে রয়েছে এবং সর্তক করে তুলছে গ্রামবাসীকে।
উপকূলীয় এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে, গন্ডামারা বেড়িবাঁধের ওপর থাকা বসতবাড়ি গৃহবধূ ফাতেমা বেগম বলেন, মোখা কেমন আঘাত করবে জানি না। তাই আমরা ঘরে রয়ে গেছি। তাছাড়া আমাদের কষ্টে উর্পাজিত সম্পদ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। গরু ছাগল ও হাঁস মুরগী গুলো স্বাভাবিক রয়েছে। একই বক্তব্য দিয়েছেন অন্ততঃ ১০/১২ জন গৃহবধূ।
ওখানকার লবণ চাষী আব্দুর ছালাম বলেন, আমরা আগে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কোন সর্তকবার্তা পায়নি। একারণে লবণ মাঠে ৩০ শতাংশ লবণ রয়ে গেছে। ব্যাপক প্রচারণা দরকার ছিল। সরলের গৃহবধূ নার্গিস বেগম বলেন, মাঠে প্রচুর লবণ রয়ে গেছে, স্বামী মাঠে লবণ উঠাতে গেছে। সব কিছু শেষ করে রবিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠবেন। কাথরিয়ার হালিয়া পাড়ার কৃষক দিনমজুর মো. আলী বলেন, বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা তাই স্থানীয় মেম্বার জনপ্রতি ৫০০টাকা করে দিয়েছেন। ১০ জনে মিলে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ নিজেরা নির্মাণ করছি। বেড়িবাঁধের ওপর দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার ঘুরে কোথা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি)’র চোখে পড়েনি। ১৪ কিলোমিটার এলাকায় বাহারছড়া সমুদ্র চরে আব্দুল আলিম নামে এক সিপিপি সদস্য চোখে পড়েছে। তাও লুঙ্গি পড়া অবস্থায়। হাতে নাই সর্তকতামূলক পতাকা এবং প্রচারের জন্য মাইক।
তবে তিনি দাবি করেন লুঙ্গি পড়া থাকলেও গ্রামবাসীকে সর্তক করে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। ওর পাশে থাকা গৃহবধূ সালমা আক্তার এবং বৃদ্ধ ফরমান আলী বলেন, ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে আত্মীয় স্বজনকে হারিয়েছি। এখন আমরাও মরে যাবো অসুবিধা কী ? ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে আমাদের সহায় সম্পদ পাহারা দেবে কে ? খানখানাবাদের কদম রসুল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মোখার সর্তক বার্তার মধ্যে এক শ্রেণির দুস্কৃতিকারী স্কেভেটর দিয়ে সমুদ্রের বালু কেটে ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।
এর কিছুদির গিয়ে দেখা গেছে, ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেংগে গেছে। ওই ভাঙ্গা অংশ স্থানীয় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার লোকজন দিয়ে মেরামত করছেন। তিনি বলেন, ওই মেরামত কাজের জন্য পানি উন্নয়ত বোর্ড ১ হাজার বস্তা সরবরাহ করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা ওখানে নেই। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি আপনাদের নিজেদের সর্তকতা খুবই প্রয়োজন। আপনারা নিজেদের বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিন। গবাদি পশুদের সুরক্ষা করুন।
No comments:
Post a Comment