কুতুবদিয়ায় অভাবের দুর্ভোগে জেলে পরিবার। একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Tuesday 28 May 2019

কুতুবদিয়ায় অভাবের দুর্ভোগে জেলে পরিবার। একুশে মিডিয়া


কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:>>>
সারাদেশে সামনে আসছে ঈদের আমেজ ফুটে উঠলেও মুখে হাসি নেই সাগর কন্যা দ্বীপ কুতুবদিয়া জেলে পরিবারের মাঝে।  ইলিশের ভরা মৌসুমে ৬৫ দিন মাছ ধরা সরকারি ভাবে নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ দ্বীপের জেলে পরিবারে হাহাকার শুরু হয়েছে।
এছাড়াও এলাকার অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বলবত থাকবে এই মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা।
সূত্রে প্রকাশ, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো তারা মৌসুম শুরুর আগে থেকেই জাল-ট্রলার মেরামত করে সাগরে মাছ আহরন করবে এ মনোভাব পোষন করবে। এজন্য মহাজনের কাছ থেকে টাকা আগাম দাদনসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণগ্রহণ করেছেন তারা। এ ছাড়া অনেকে এলাকার সুদের কারবারিদের থেকেও চড়া সুদে টাকা এনে সাগরে যেতে না পেরে এখন দেনায় ডুবু ডুবু। বেকার হয়ে পড়া হতদরিদ্র জেলে পরিবারে এখনই হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে করে কাজ হারানো জেলেদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকই চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজের সন্ধানে বেরিয়েছে। এবার জেলে পরিবারে আগের মতো আর ঈদ উৎসব পালিত হবে না। ঈদের আমেজও থাকবে না।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবারের জীবিকা নির্ভর করে সাগরে মাছ আহরনের ওপর। কিন্তু সরকারের দেওয়া ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার কারণে জেলেরা সপ্তাহ ধরে মাছ শিকারে যেতে না পারায় পরিবারগুলোর সদস্যরা অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী মো. জিল্লুর করিম, মোয়াজ্জেম , মো. ইসমাঈল, হোছাইন আনাচ, হেলালসহ অনেকে জানান,  এ দ্বীপাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য মৎস্য আহরনের উপর নির্ভরশীল। সাগরে মাছ না পড়লে ব্যবসায়ও মন্দা দেখা দেয়। এ বছর ইলিশ মৌসুমে রমজানের ঈদ। কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সবাই হতাশায় পড়েছেন।
কুতুবদিয়ার দ্বীপের ট্রলার মালিক মো. বাদশা মিয়া, জকির আলম ও নুরুল কবিরসহ অনেকে জানান, এ সময়ে সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। সরকারের দেয়া ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার
কারণে সপ্তাহ ধরে মাছ আহরন বন্ধ‌ রয়েছে। কোনদিন ত্রাণ খুজিনি, যখন ব্যবসা চালু ছিল তখন দুঃখ কষ্ট করে হলেও মাঝি- মল্লাদের নিয়ে চলছিলাম। এখন দু'মাস ৫ দিন সরকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার কারনে নিজে চলতে কষ্ট হলেও মাঝি মল্লাদের সপ্তাহে এক'দু হাজার দিয়ে তাদের পরিবারকে চালাতে হয়। যেখানে নিজের পরিবারকে নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। চলতেছে রমজান, সামনে আসতেছে ঈদ, এখন ৬৫ দিন নিষিদ্ধ করা সময় শেষ হতে না-হতেই কোরবান ঈদ হবে। আমরা আগে দুঃখ কষ্টে সব চালিয়েছি, কিন্তু এখন করার কিছু নেই। সরকার ২ মাস ৫ দিন নিষিদ্ধ করায় মাঝি ও -মল্লাদেরকে ২ হাজার টাকা হবে না বলতেছে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। নাহয়, তারা ট্রলারে থাকবে না বলেও জানিয়ে দেয়। যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন চালাতে হবে। এক ট্রলারে বর্তমানে ৫/৭ জন মানুষ থাকে। তারা ট্রলার দেখাশুনোর জন্য রাখতে হয়। অথচ তাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা অগ্রীম থাকলেও বলার কিছু নেই।
বন্ধ পর্যন্ত তাদের দিতে হবে। ট্রলার মালিকরা এই টাকা জোগাড় করতে আগে সাগর থেকে মাছ আসতো তাই সবাই ধার দিতো। এখন  তাও দিতে চাই না ভাই বন্ধুরা। যারা সুদি কারবারী তারা আগে দাদন দেওয়ার জন্য বাড়ীতে আসত, এখন আসে না। নিজে সুদের জন্য ৫০ হাজার টাকার জন্য গেলে আইডি কার্ড, সাড়ে ৩ হাজার মাসিক লাভ এবং ৩শত টাকার মূল্য ষ্ট্যামে লিখিত  দিয়ে নিতে হয়। আগে এ সমস্ত থেকে দূরে ছিলাম, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে বলে জানান। এতে জেলে ও ট্রলার মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মোঃ নাজেম উদ্দিন , ছৈয়দ আহমদ, নুরুল কালাম, দিল মোহাম্মদ, রুবেল ও কালু মিয়াসহ অনেক জেলে জানান, ভরা মৌসুমে সাগরে নামতে না পারায় সব জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। এখন ঘরে মজুত থাকা চাল-ডালও শেষ হয়ে গেছে। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একাজ ছেড়ে অন্য কাজে যাওয়ার জন্য পথ খুজতেছে। না খেয়েতো পারবে না, বাঁচাতে হবে পরিবারকে । এ অবস্থায় পরিবারকে নিয়ে আগের মতো আর ঈদ উৎসব পালিত হবে না।
জেলেরা আরোও জানান, সরকারের কাছ থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পায় না।  এক-চতুর্থাংশের জেলের নিবন্ধন থাকলেও, বাকীরা অনিবন্ধিত । ট্রলার মালিকরা যা দেয় তা নিয়ে জীবন যাপন করে। কষ্ট হলেও থাকতে হয়। কারন এ পেশা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারে না। এবার এই ৬৫ দিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পরিবার কীভাবে যে চলবে? বাচ্চাদের লেখাপড়া, ঋণ আছে, দৈনিক বাজার, খরচ এসব চালানোই তো আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। এ'ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতি, কুতুবদিয়া উপজেলা যুগ্ন-আহবায়ক ও জাতীয় ছাত্র সামাজের উপজেলা সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, সরকার সাগরের ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলে সকল জেলেরা জালসহ নৌকা নিয়ে কুলে ও বাড়িতে চলে আসেন। সাগরের মাছ ধরে বিক্রয়ের আয়ের মাধমে জেলেগণ সংসারের খরচ যোগায়। র্দীঘদিন সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় চিন্তিত জেলেরা। চরম দূর্ভোগে জীবন-যাপন করছে জেলেদের পরিবার। সাগর কন্যা দ্বীপ কুতুবদিয়ায় ঘূর্ণিঝড়সহ সাগরের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত ক্ষতিগ্রস্থে বাড়ি মেরামত ও পরিবারে বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এসময়ে জেলেগণ সংসারের খরচ চালিয়ে নিতে চরম হিমশিম খাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে প্রকৃত জেলেদের কে আর্থিক সহযোগিতার জোর দাবি জানাচ্ছি।
জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতি কুতুবদিয়া উপজেলা আহবায়ক ও জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল মোনাফ জানান, সরকারের ৬৫ দিন সাগরের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জেলেগণ চরম আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। সরকারের ৬৫ নিষেধাজ্ঞা কে কমিয়ে ৩০ দিন এবং জেলেদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা নাছিম আল মাহমুদ জানান, কুতুবদিয়ায় নিবন্ধিত জেলে ৮,৪১৩ জন। প্রত্যেক জেলেদেরকে সরকারীভাবে  ৬৫দিনে ৮৬ কেজি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। ৮৬ কেজির মধ্যে মাসে ৪০কেজি হারে ২মাসে ৮০ কেজি ও বাকী ৫ দিনের জন্য ৬ কেজি নিয়মে চাউল সহায়তা পাবে।
গতকাল সরকারি ভাবে দেয়া ১মাসের খাদ্য সামগ্রীর সহায়তা পত্র পেয়েছি। তাদের মধ্যে উত্তর ধুরুং ২৫১৩ জন, দক্ষিণ ধুরুং ১২০২জন, লেমশীখালী ৫৮৫ জন, কৈয়ারবিল ৩৯৬ জন, বড়ঘোপ ১৮১০ জন এবং আলী আকবর ডেইল ১৯৫৩ জনসহ মোট ৮৪১৩ জন  নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ঈদের পরে সরকারিভাবে  খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হবে।
এছাড়াও ৪ - ৫ হাজার জেলে যারা নিবন্ধনের আওতায় আসেনি তাদের মধ্যে বেসরকারি ভাবে ১২শত প্যাকেটকে ২৪শত জেলেকে  বিতরন করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে- চাউল, ডাল, তৈলসহ ১৪ রকম খাদ্য সামগ্রী।




একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages