ক্লাস না করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ! - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday 25 November 2019

ক্লাস না করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ!


একুশে মিডিয়া, রাবি প্রতিনিধি:>>>
নিয়ম ভেঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের সারাবছর ক্লাস না করলেও অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে। এদিকে নিয়মিত ক্লাস করা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীরা বলছে, ‘আমাদের কি সময়ের মূল্য নেই? ডিস-কলেজিয়েট হবার ভয়ে সারাবছর ক্লাস করেছি। কিন্তু যারা ক্লাস করেনি তারাও আমাদের ন্যায় পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে যদি তাদের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বিভাগে এই সমস্যা লেগেই থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে- চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ন্যুনতম ৭৫ শতাংশ ক্লাসে অবশ্যই উপস্থিতি থাকতে হবে। তবে কোনো কারণবশত উপস্থিতি ৭৫ শতাংশের কম হলে জরিমানা সাপেক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু উপস্থিতি ৬০ শতাংশের কম হলে কোনো ভাবেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হিসাব অনুযায়ী প্রথম বর্ষের ৭৫ জনের মধ্যে নন-কলেজিয়েট ১৪জন ও ডিস-কলেজিয়েট ১৪জন, দ্বিতীয় বর্ষের ৫৪ জনের মধ্যে নন-কলেজিয়েট ২০ জন ও ডিস-কলেজিয়েট ১০ জন, তৃতীয় বর্ষে ৫৫ জনের মধ্যে নন-কলেজিয়েট ৯ জন ও ডিস-কলেজিয়েট ১২ জন, চতুর্থ বর্ষের ৫০ জনের মধ্যে নন-কলেজিয়েট ১৬ জন ও ডিস-কলেজিয়েট ৮ জন এবং মাস্টার্সের ৫৬ জনের মধ্যে নন-কলেজিয়েট ১৬ জন ও ডিস-কলেজিয়েট হয় ১২ জন। সব মিলিয়ে দেখা যায় বিভাগের মোট ২৯০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এ বছর নন-কলেজিয়েট হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ এবং ডিস-কয়েজিয়েট হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এসব ডিস-কলেজিয়েট শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন সারাবছরে ১০ শতাংশ ক্লাসও করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর অনার্সের চারটি বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম-ফিল-আপের পূর্বে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি হিসেব করে দেখা যায় ডিস-কলেজিয়েটদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা বিভাগের আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন শিক্ষক সভাপতিকে ডিস-কলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনুমোদন দিতে বলেন। পরবর্তীতে একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে এ নিয়ে কথা হলে উপস্থিত ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন শিক্ষক উপস্থিতি সর্বোচ্চ ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া যেতে পারে উল্লেখ করে ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে ঘোর বিরোধীতা করেন। কিন্তু মিটিংয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতির ভিত্তিতে উপস্থিতি ১ শতাংশেরও কম রয়েছে এমন শিক্ষার্থীসহ সব ডিস-কলেজিয়েটদের পরীক্ষা দেওয়ার হয়।

ফোকলোর বিভাগ সুত্রে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর বিভাগের বিএনপিপন্থী অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগামী ০২ ডিসেম্বর তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে এবং আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক মোস্তফা তারিকুল আহসান সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। মেয়াদ শেষে কেউ যাতে কোনো বিষয়ে অভিযোগ তুলতে না পারে সেজন্য আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের হাতে রাখতে তাদের কথামতো ডিস-কলেজিয়েটদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে পূর্ণসমর্থন জানান। অন্যদিকে ডিসকলেজিয়েটদের পরীক্ষায় সম্মতি প্রদানকারী শিক্ষকদের অধিকাংশই বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে অনিহা থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমনও আছে এদের কয়েকজন সারাবছরে মাত্র ১-২টি ক্লাস নিয়েছেন। তবে অধিকাংশই একটি বর্ষে সারাবছরে ১২-১৩টির বেশি ক্লাস নেন নি। পরীক্ষার হলে ঠিকমতো দায়িত্বপালন না করা, ঠিকমত পরীক্ষার খাতা না দেখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। অনেকটা নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতেই ডিস-কলেজিয়েটদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা শিক্ষার্থীদের।
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের ক্লাসের আমিসহ দুইজন ডিস-কলেজিয়েট ছিলাম। পলিটিক্যাল পাওয়ার না থাকায় আমাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। ওই বছর চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী গর্ভবতী থাকায় ডিসকলেজিয়েট হয়। এজন্য তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে মাস্টার্স না করেই চলে যান তিনি। এর আগে দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালে আমাদের এক বান্ধবী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। হাসপাতালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল, কিন্ত তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে এখন নাকি উপস্থিতি একেবারে না থাকলেও পরীক্ষা দেওয়া যায়।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, ‘ডিস-কলেজিয়েট শিক্ষার্থীরা সভাপতি বরাবর পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে আবেদন করে। বিভাগের সভাপতি হিসেবে আমি বিষয়টি সবার সাথে শেয়ার করি এবং একাডেমিক মিটিং ডেকে বিষয়টি উপস্থাপন করি। এসময় বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকের সমর্থনে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন একটি নিয়ম আছে তেমনি বিভাগের একাডেমিক কমিটিরও একটা নিজস্ব ক্ষমতা আছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন সভাপতি হিসেবে আমি তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কোনো বিভাগ চাইলে ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পারে। কিন্তু ফোকলোর বিভাগের বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছে কিনা সেটি নথি দেখে বলতে হবে।




একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages