‘ঋণের সুদ’ সিঙ্গেল ডিজিট: ব্যাংক মালিকদের ‘খুঁটির জোর’ কোথায় ? - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday 18 November 2019

‘ঋণের সুদ’ সিঙ্গেল ডিজিট: ব্যাংক মালিকদের ‘খুঁটির জোর’ কোথায় ?

ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামাতে ৬ দফা নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ৮ দফা * ব্যাংকের বেশিরভাগ মালিক প্রধানমন্ত্রীর কাছের হলেও তারা তার নির্দেশই মানছেন না। তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন -এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম


একুশে মিডিয়া, রিপোর্ট:>>>
ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এখনও মানছেন না বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মালিকরা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ৬ দফা এবং বর্তমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন ৮ দফা।=
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের ডেকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সুদের হার কমানোর শর্তে ব্যাংকগুলোকে ৫ ধরনের বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামাননি।=
এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মৌলিক কিছু প্রশ্ন তুলেছেন এ সেক্টরের কয়েকজন বিশ্লেষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার তারা যুগান্তরকে বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ১৪ দফা নির্দেশ দেয়ার পরও যখন সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামছে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- সরকার, না ব্যাংক মালিকরা বড়?=
সরকারের চেয়ে ব্যাংকের পরিচালকরা বেশি ক্ষমতাধর! কেননা দেশে শিল্পায়নের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে এতবার কথা বলার পরও তারা তা আমলে নেননি। তাহলে কী আমরা ধরে নেব- প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ওই নির্দেশ না মেনে ব্যাংক মালিকরা সরকারের প্রতি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন? কিন্তু সেটি তো হওয়ার কথা নয়।=
প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারপ্রধানের নির্দেশনা মেনে চলা প্রণিধানযোগ্য বিষয়। তারা বলেন, এর ফলে জনগণের কাছে সরকারের অবস্থান নিয়ে ভুল বার্তা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, নিশ্চয় এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে। থাকলে সেটা কী। সেটি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সচেতন মহল ব্যাংক মালিকদের খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই থাকবে।=
তারা যুগান্তরকে আরও বলেন, দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, গত দেড় বছরেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।=
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দু-একটি ছাড়া বাকি সব ব্যাংকের ঋণের সুদের হারই ডাবল ডিজিটে রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংকে শুধু ডাবল ডিজিট নয়, সীমার বাইরে সুদ কষা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ব্যাংক এখনও আমানত সংগ্রহ করছে ১০-১১ শতাংশে।=
মূলত ব্যাংক মালিকদের নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে চড়া সুদে আমানত নিয়ে ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া ঋণ প্রদানের নামে জাল-জালিয়াতির অন্ত নেই। খোদ ব্যাংক মালিকরাও এর সঙ্গে জড়িত।=
অভিযোগ আছে, কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালক নিজেরাই ভুয়া নামে ঋণ তুলে বিদেশে পাচার করছেন। এগুলো শক্তভাবে তদন্ত হওয়া দরকার। কিন্তু বাস্তবে রাঘববোয়ালদের কিছুই হচ্ছে না। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই ঘেরাটোপে পড়ে পুরো ব্যাংক খাত এখন খাদের কিনারে।=
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে উচ্চসুদে ঋণ দেয়ার বিষয়ে বেশকিছু ব্যাংককে শোকজ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যেসব ব্যাংক সুদের হার কমায়নি তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত চলছে।=
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণের সুদের হার কমাতে হলে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনতে হবে, বাড়াতে হবে ঋণ আদায়, কমাতে হবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এতে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমবে। তিনি মনে করেন, আমানতকারীদের আস্থা ফিরে এলে কম সুদেও গ্রাহকরা আমানত রাখবেন। তখন ঋণের সুদের হার কমানো সম্ভব হবে।=
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে পরিচালকদের অনিয়ম-দুর্নীতি একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলোর অপ্রত্যাশিত খরচ অনেক কমে যাবে। এটিও ঋণের সুদের হার কমাতে সহায়ক হবে।=
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।=
ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তাকে লক্ষ্য করেই তিনি এ নির্দেশ দেন।=
পরে সে নির্দেশ অনুযায়ী তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ঋণের সুদের হার কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। এর আলোকে অর্থমন্ত্রী চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংককে।=
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য তাদের বার্তা দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও ব্যাংকের পরিচালকদের দেন।=
এর আলোকে গত বছরের ২০ জুন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে এবং ছয় মাস মেয়াদি আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। সুদের এই হার তারা গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা জানায়।=
কিন্তু ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত সরকারি চার ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই কার্যকর করেনি। সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় গত বছরের ২ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।=
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ (২ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হবে। এ সিদ্ধান্ত গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে কার্যকর করার কথা। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি।=
সরকারের বর্তমান মেয়াদে গত ৩১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্পপণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েকদিন আগে আমরা বসেছিলাম, কীভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো যায়।=
আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম, সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। যেমন: আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে, ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হতো।=
ব্যাংক মালিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এটা যদি ফিফটি-ফিফটি করে দেয়া হয় তাহলে আমরা ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও কিন্তু করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম।=
কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার ৯ শতাংশে নামানো হল, কিন্তু সবাই তা করল না। পরে আবার বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬ শতাংশে নিয়ে গেল। তিনি ব্যাংক মালিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, কেন করল না, তাদের এই সুযোগটা দেয়া সত্ত্বেও?=
গত ১২ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংকের ভালো গ্রাহকদের ক্ষেত্রে একক ঋণসীমা থাকবে না। এটা তুলে দেয়া হবে। ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। ফলে ভালো গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাবেন।=
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর দু’দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঋণের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় গত ২৬ এপ্রিল তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হারের মতো পৃথিবীর কোনো দেশে এত বেশি সুদহার নেই।=
এই সুদহার ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এত বেশি সুদ দিয়ে কোনোদিন শিল্পকারখানা টিকে থাকতে পারে না। আমি নিজেও এক সময় ব্যবসায়ী ছিলাম। আমারও কিছু কারখানা ছিল। আমি নিজেও সুদ দিতে পারিনি। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুদ দিতে পারে- এমন নজির থাকে না। কারণ, সুদের হার বেশি ও ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা।=
গত ১৩ জুন চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের উপরে দেখতে চাই না।’ সুদের হার কমাতে ও খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি ঠেকাতে ব্যাংকিং খাতে ৬ দফা সংস্কার কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।=
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গত ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার কমানোর কথা বলে বেশ কয়েক দফা সুবিধা নিয়েছে মালিকপক্ষ। কিন্তু তারা সুদের হার কমায়নি। কেন কমায়নি সেটা আমরা দেখব। যারা কমায়নি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। সুদের হার বেশি হলে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। বিনিয়োগ বাড়ে না। সুদের হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নামাতে হবে।=
গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের সুদের হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে।=
গত ১ সেপ্টেম্বর রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিতে হয়। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে আমরা ইতিমধ্যে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছি।=
৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডি-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। এটি ব্যাংকগুলোকে মানতে হবে। না মানলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করে দেয়া হবে।=
৪ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে জ্যামিতিক হারে সুদ আরোপ করার সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। সরকার যেভাবে বলবে, সেভাবে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের নির্দেশ না মানলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।=
জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখনও প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসেন, তার নির্দেশ মেনে চলেন, তাকেই ভরসার স্থল মনে করেন; কিন্তু ব্যাংকের বেশির ভাগ মালিক প্রধানমন্ত্রীর কাছের হলেও তারা তার নির্দেশই মানছেন না।=
এরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছেন। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বারবার ব্যাংকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন তারা শুনছেন না। এমনকি তারা এ নির্দেশ কখনও মানবেন কি না, সেটা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চসুদের কারণেই আজ শিল্পের অধঃপতন হচ্ছে, ধীরে ধীরে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় শিল্প।=
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ১৩, ১৪ ও ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে সামাল দিতে পারছি না। আমি একা নয়, সবার একই দশা। একপর্যায়ে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এভাবে চলতে থাকলে শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।=
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ‘ঋণের সুদ বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের বিদেশে প্রতিযোগিতা করতে সমস্যা হয়। জরুরি ভিত্তিতে ঋণের সুদের হার কমানো উচিত। তা না হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।=
এদিকে ঋণের সুদের হার কমানোর শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে প্রায় এক বছর আগে ৬ দফা সুবিধা আদায় করে নেন ব্যাংকের পরিচালকরা। এগুলো হচ্ছে- সরকারি সংস্থার আমানত ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) কমানো, রেপো সুদহার কমানো, রেপোর মেয়াদ ২৮ দিনে বৃদ্ধি, প্রভিশনের হার ও কর্পোরেট কর কমানো।=
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে সরকারি সংস্থার মোট আমানতের ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা যেত, বাকি ৭৫ শতাংশ রাখতে হতো সরকারি ব্যাংকে। ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান করা হয়। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় তারল্যপ্রবাহ বাড়ে।=
নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে ব্যাংকগুলোয় তারল্যপ্রবাহ বেড়ে যায়। ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার উপকরণ রেপোর সুদের হার দশমিক ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। এর মেয়াদ ৭ দিন থেকে বাড়িয়ে ২৮ দিন করা হয়।=
এতে বেশি মেয়াদে কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গত অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্পোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়। ফলে তাদের মুনাফার পরিমাণ বেড়েছে।=
ব্যাংকগুলোকে আগে রফতানি বিল কেনা ও ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো। এখন এটি তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর এ খাতে তহবিল আটকে থাকার পরিমাণ কমেছে।=
অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তহবিল এসেছে। এর প্রভাবে কমেছে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়। এরপরও ব্যাংকগুলো কমাচ্ছে না ঋণের সুদের হার। অথচ ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার শর্তেই এসব সুবিধা নিয়েছে ব্যাংকগুলো।=
এতেও সুদের হার না কমানোর ফলে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০ মে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, যেসব ব্যাংক ইতিমধ্যে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনেনি, তারা সরকারি আমানত পাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হল, এই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। যুগান্তর অনলাইন সূত্র একুশে মিডিয়া রিপোর্ট।=



একুশে মিডিয়া/এমএসএ=

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages