মানবাধিকারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ: খোরশেদ আলম - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday 8 June 2020

মানবাধিকারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ: খোরশেদ আলম

একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:
লেখক : মোঃ খোরশেদ আলম:
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) যার জন্ম না হলে আল্লাহ্ তায়ালা দুনিয়া সৃষ্টি করতেন না। বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত,মানবতার মুক্তির দিশারী 'রহমাতুল্লিল আলামীন' নবীজি (সাঃ) বলেছেন, 'কুল্লু মাউলুদিন আলাল ফিতরা' অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি স্বভাবের ওপর। পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে বহু বড় বড় মানিষীর জন্ম হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন দুনিয়াতে মানবতার মুক্তির জন্য’।
পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা আল ইমরান এ আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন,'কুনতুম হায়রি উম্মতি উহরিজিত লিননাছ' এর অর্থ হলো -- তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানব জাতির কল্যাণের জন্য। 'মদিনা সনদ'- এর কথা পৃথিবীর সকল মানুষ জানে না।মানবতার ইতিহাসে বড় সাক্ষী 'মদিনা সনদ' যাকে বলা হয়েছে মিসাক আল মদিনা বা 'মদিনার চুক্তি '। রাসূল (সাঃ) ইহুদিদের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন। এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান। এর আগে কোন রাষ্ট্রের পক্ষে লিখিত কোন সংবিধান ছিল কি না তা সুস্পষ্ট নয়’।
এ সংবিধানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপকভাবে বলা হয়েছে - যেমন রাষ্ট্র কেমন হবে এবং শাসক কে হবেন। বিভিন্ন গোত্র বা গোষ্ঠী কার কি দায়িত্ব কর্তব্য বা অধিকার তাও এতে বলা হয়েছে। এটি একটি শুধু সাংবিধানিক দলিল নয়, এটি মানবাধিকার দলিলও বটে। পৃথিবীর ইতিহাসে মানবাধিকার দলিলের মধ্যে মদিনা সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। মানবাধিকার নিয়ে অনেক দেশ, জাতি, প্রতিষ্ঠান অনেক কাজ করেছে। সেখানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ সহ বহু বিধি-বিধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার কোন একটি দলিল মানবাধিকারের কাজটি আগে হয়নি।’
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ United Nations Declaration of Humans Right এর মাধ্যমে মানব ইতিহাসে বিভিন্ন ঘোষণার দলিলে বা লিখনির দ্বারা সেগুলোকে মানবাধিকার বলে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা এখনকার জাতিসংঘের সব রাষ্ট্র একমত হয়ে দলিল প্রণয়ন করে। এদিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে মানব জাতির সব রাষ্ট্রের স্বাধীন ইচ্ছার একটি প্রতিফলন ঘটেছে। এটি অস্বীকার করা না গেলেও যেহেতু এ প্রশ্নটি ছিল এবং আছে যে ইসলামে মানবাধিকার দিয়েছে কি না। দিলে কতটুকু দিয়েছে তার আলোচনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম যেহেতু একটি নৈতিক শক্তি সেহেতু মানবাধিকারের ব্যাপারে তার একটি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ওআইসি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকে এজন্য সব ইসলামিক চিন্তাবিদ, আইন বিশেষজ্ঞ ও ফিকাহবিদদের একত্রিত করে ওআইসির ফিকাহ একাডেমি একটি দলিল তৈরি করে। এটি একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল। পরে নেতৃবৃন্দ চিন্তা করে যে একটি মানবাধিকার দলিলও তৈরি করা দরকার। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে ১৯৯০ সালে মিশরের রাজধানী কায়রাতে দলিলটি পাস করা হয়’।
১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে বিশ্বের মুসলমানদের অধিকার রক্ষা ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের মানুষের ধর্মীয় চেতনার ওপর আঘাত হানার বিরুদ্ধে জোরালোভাবে বলেন,প্রত্যেক ব্যক্তি, রাষ্ট্র বা সমাজের কর্তব্য হলো অধিকারকে যে কোনোভাবে অপমান বা অপদস্ত থেকে রক্ষা করা।’
২০১৭ সালে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারে রাখাইন অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মম নির্যাতন ও আঘাত হানা হয়েছে। নারী,শিশু, আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মানবিক মূল্যবোধের কারণে তাকে Mother of Humanity অর্থাৎ মানবতার মা উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের গণতন্ত্রের নেত্রী অংসান সুচি যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তার সেই পুরস্কারটি রহিত করা হয়েছে। মিয়ানমার ঘটনায় মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে’।
একদা রাসূর (সাঃ) এক ইহুদির লাশ দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা) গণ রাসূল (সাঃ) কে ইহুদির লাশকে সম্মান জানানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন, মানুষ হচ্ছে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ সৃষ্টির সেরা জীব। তার কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ্ তার বিচার করবেন,আমাদের কারো কিছু করার নেই। ইসলামে নির্দেশিত আছে,কোনো কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা হারাম বা নিষিদ্ধ। এমন কোন কাজ করা যাবে না যা মানবাধিকার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সৃষ্টিকর্তার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কারো জীবন রক্ষা করা শরিয়াহ নির্দেশিত একটি কর্তব্য। শারীরিক ক্ষতি বা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়া অধিকার সবার জন্য সুরক্ষিত। জোর করে কেউকে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এটি মদিনা সনদের পরিপন্থী।’
মানবাধিকারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মদিনা রাষ্ট্র গঠনের সময় ইহুদিদের সাথে রাসূল (সাঃ) যে চুক্তি করেছিলেন তার বিভিন্ন দিক রয়েছে সেগুলো সমাজ,পরিবার ও রাষ্ট্র চালানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে নারী অধিকারকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামী আইনে একজন নারীর জন্য পিতার সম্পত্তিতে যে অধিকার রয়েছে, পাশাপাশি স্বামীর সম্পত্তিতেও তার অধিকার রয়েছে। এটা ইসলাম ধর্মে নারীদের অগ্রাধিকারেরই বহিঃপ্রকাশ। মানবজাতি বা সব মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমতা ঘোষণা করা হয়েছে অর্থাৎ লিঙ্গ, জাতি,রাজনৈতিক মতাদর্শ ভেদাভেদ না করে মতবাদ নির্বিশেষে সবাই যে আল্লাহ্ তায়ালার অধীনস্থ বান্দা এবং তারা মানুষ হিসাবে সমান। তাই ইসলামে পিতা-মাতার অধিকার, ভাই -বোনের অধিকার, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার, শিশুর অধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের অধিকার প্রতিবেশীর অধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে’।
ইসলাম ধর্ম সমগ্র পৃথিবীর সাথে তার প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরতে মদিনা সনদের কথা যথাযথ প্রচার ও প্রকাশ হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের অনৈক্যের কারণে অথবা ওআইসিতে জোরালো ভূমিকা পালনে আন্তরিকতার অভাবে মদিনা সনদের দলিল সারা পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়নি। এর ফলে শুধুমাত্রমুসলিম বিশ্বের লোকজনই নয় অন্যান্য ধর্মালম্বীরাও রাজনৈতিক ও মানবাধিকারের এমন একটি সুন্দর দলিল সম্পর্কে জানা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এটি একটি চরম ব্যর্থতা।’
আশা করি ভবিষ্যতে ইসলামের আলোকে এটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে এবং প্রচার হবে। এর ফলে জাতি,রাষ্ট্র ও সমাজকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এবং এর আলোকেই একটি সুন্দর ও সমাধিকার রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে আমাদের চেষ্টা করতে হবে’।

লেখক:

 মোঃ খোরশেদ আলম:
শ্রম বিষয়ক সম্পাদক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ।




একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages