আরাফাত বিন হাসান, চট্টগ্রাম:>>>
‘অটিজম’ শব্দটি খুব একটা অপরিচিত না হলেও সর্বত্রে খুব যে পরিচিত একটি শব্দ তা নয়। অটিজম মূলত শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে অটিজম আক্রান্তের সাংখ্যা প্রায় পনেরো লাখ।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরাবিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিস্টিক। অটিজম কোনো জন্মগত বা মানসিক রোগ না হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এটি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা হয়েছে। তাই অটিজম আক্রান্তদের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক গবেষণা এবং উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আধুনিক গবেষণা এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টার প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স’ এর আয়োজন করে থাকে। এবছরও ‘আন্তর্জাতিক অটিজম কনফারেন্স -২০২০’ এর আয়োজন করেছে ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টার।
অটিজম বিষয়ে প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টেরও আয়োজন করা হয় কনফারেন্সটিতে। এর মধ্যে একটি ছিলো অটিজম বিষয়ে গবেষণামূলক পোস্টার প্রেজেন্টেশান প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে অটিজম বিষয়ক গবেষণাপত্র আহ্বান করে ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টার।
পরবর্তীতে গবেষণাপত্র যাঁচাই-বাছাই করে মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিযোগী মনোনীত করে প্রতিষ্ঠানটি। অটিজম বিষয়ে গবেষণামূলক পোস্টার প্রেজেন্টেশানের এই ইভেন্টের মূল প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাইশটি দল মনোনয়ন পেয়ে অংশগ্রহণ করে।গত ১০-১২ ই জানুয়ারি ভারতের কলকতার ইমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত তিনদিন ব্যাপী এ কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছে ‘ইন্টারনেশনাল ফেডারেশন ফর মেডিকেল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ’ (আইএফএমএসএ বাংলাদেশ') এর একটি দল।
সেই দলে ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী আলভী আহসান, মুমতাহিনা ফাতিমা, রাইসা নাওয়াল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা আরাফাত ইসলাম। প্রাথমিকভাবে ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টারে গবেষণাপত্র জমা দিয়ে মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় তারা। আর অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে 'নলেজ অফ অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজর্ডার এমোং সেকেন্ড - ফোর্থ ফেইজ এমবিবিএস স্টুডেন্টস অফ বাংলাদেশ' বিষয় নির্ধারণ করে একটি পোস্টার জমা দেয় ইন্ডিয়া অটিজম সেন্টারে। আর এতেই বিচারকদের রায়ে অন্যসব প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠ হওয়ার গৌরব অর্জন করে ‘আইএফএমএসএ বাংলাদেশ’ এর দলটি।
কনফারেন্সটিতে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. রোনাল্ড রীফ, কেভিন গার্স, লরী উম্ব সহ অটিজম গবেষণায় খ্যাতি অর্জন করা বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। বিজয়ী দল হিসেবে ‘আইএফএমএসএ বাংলাদেশ’ এর দলটিকে পুরষ্কাররস্বরূপ ১০ হাজার রুপী অর্থমূল্য এবং সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়।
‘আইএফএমএসএ বাংলাদেশ’ এর সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা আরাফাত ইসলামের দেশের বাইরে এটাই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ।দেশের বাইরে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দলীয়ভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার অনুভূতি জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে। তিনি বলেন, "দেশের হয়ে এমন বড় কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। আর শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনুভূতি তো আসলে বলে বোঝানোর মতো না, এটা আসলেই স্পেশাল কিছু আমার জন্য।" এছাড়াও দেশের সর্বত্র অটিজম নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কর্মজীবনেও অটিজম নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানালেন কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী ‘আইএফএমএসএ বাংলাদেশ’ দলের সদস্যরা।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment