সিলেটে জামায়াতের অনড় অবস্থানের নেপথ্যে-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday 23 July 2018

সিলেটে জামায়াতের অনড় অবস্থানের নেপথ্যে-একুশে মিডিয়া

একুশে মিডিয়া, সিলেট রিপোর্ট:
সিলেটের ভোটের মাঠে আলোচনায় জামায়াত। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে, নাকি কোনো নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সরে দাঁড়াবে- এ আলোচনা এখন কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ে। অনেকের ধারণা, শেষ মুহূর্তে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমের ইতি টানবে। তবে দলটির অভ্যন্তরীণ খবর- তারা সিদ্ধান্তে অনড়। বাতাসে ভেসে বেড়ানো এসব খবর কেবলই গুজব। এই গুজবে বিভ্রান্ত না হতে নেতাকর্মী-সমর্থক এবং নগরীর ভোটারদের সজাগ থাকতে বলছেন দলটির নেতারা।
নিকট অতীতে দলটির সঙ্গে তাদের শরিক বিএনপি এবং সাবেক মেয়রের শীতল সম্পর্কও নির্বাচনী মাঠের অবস্থান শক্ত করেছে। নির্বাচনী মাঠে থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ সামনে আনছে জামায়াত। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে তারা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জনগণের সঙ্গে আরো বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তারাও বিজয়ের আশা দেখছেন। জামায়াত নেতা বলেন, সিলেটে সাংগঠনিকভাবে আমরা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি, জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সেই বিবেচনায় নগরবাসী তাদের সমর্থন দেবেন বলে জামায়াতের এই প্রার্থী মনে করেন।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, বিএনপির সঙ্গে যে জোট রয়েছে তা মূলত: জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তবে স্থানীয় পর্যায়েও আমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে সমর্থন দিয়েছি। এর আগে অন্যান্য সিটি নির্বাচনেও আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি। জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপিকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এমনকি সিলেটের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় আরো দু’টি সিটি রাজশাহী এবং বরিশালেও তাদের সমর্থন দিয়েছি। তিনি বলেন, ১২টি সিটির মধ্যে একটিতে প্রার্থী দেয়ার কথা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম। জোটভুক্ত দল হিসেবে আমরা এটা দাবি করতেই পারি। কিন্তু তারা আমাদের সে দাবি মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, গত ২০১৩ সালের সিসিক নির্বাচনেও জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু পরে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করে নিই। তখন বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে আমরা আগে থেকেই এবার নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু করি। জোটের সঙ্গে আলোচনাও করি। আলোচনার ভিত্তিতেই আমরা জানিয়ে দিই এবারের নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী থাকবে। যেহেতু এটা জাতীয় নির্বাচন না, তাই জোটের প্রার্থী ম্যান্ডেটরি না। সরকারের সঙ্গে কোনো গোপন আঁতাতের মাধ্যমে সিলেট সিটিতে তারা লড়ছেন কিনা জানতে চাইলে জুবায়ের বলেন, জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা ছিল। ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারি ছাড়া অতীতের সব নির্বাচনেই তাদের অংশগ্রহণ ছিল। আমরা জনসম্পৃক্ত একটি রাজনৈতিক দল। আমরা মনে করি জনগণের সঙ্গে থেকেই জনগণের কল্যাণ করা সম্ভব। সম্প্রতি জামায়াতের শীর্ষ নেতার মুক্তির বিষয়টি সামনে আনলে তিনি বলেন, আঁতাতের রাজনীতি আমরা করি না। বলেন, আমার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মিথ্যা মামলায়। দীর্ঘ ১০ মাস তাকে কারাগারে রাখছে।
সব প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই তিনি মুক্তি পেয়েছেন। এখানে কারো অনুগ্রহে বা দয়া-দাক্ষিণ্যে মুক্তি পাননি। সর্বপর্যায়ের নেতারা একই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসছে উল্লেখ করে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন- এটা কি আঁতাত? বলেন, আঁতাতের রাজনীতি কারা করে আমরা জানি, অতীতে দেখেছি। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে এই নেতা বলেন, কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে পরিবেশ খুব ভালো না। কিছু কিছু জায়গায় হামলা হয়েছে, প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। পথসভা করতে দেয়া হয়নি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা মারধর করছে। এরা কারা জানতে চাইলে জামায়াত নেতা বলেন, এরা সরকার দলীয়।
জামায়াতের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেও তাদের ক্ষোভের কারণ জানা গেছে। তারা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের ওপরই বেশি নিপীড়ন চালানো হয়েছে। কিন্তু জোট থেকে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। গাজীপুরের প্রসঙ্গ টেনে এক তরুণ নেতা বলেন, ওই সিটিতে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ার পরই গ্রেপ্তার হন। তার ধারণা, নির্বাচনে প্রার্থিতা বহাল রাখলে তিনি গ্রেপ্তার হতেন না। সিলেটে কি সে কারণেই জামায়াত প্রার্থী বহাল রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সেই পরিস্থিতি নেই। আগে থেকেই পরিকল্পনা মাফিক এখানে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। নগর জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলা-মামলার কারণে দলটি দীর্ঘ সময় জনগণের কাছে যেতে পারেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের দ্বারে দ্বারে যাওয়ারও সুযোগ হচ্ছে তাদের। এই নির্বাচনে এটা তাদের আরেকটি অর্জন।
জামায়াতের আরেক নেতা বলেন, নগরে তাদের ৪০-৪৫ হাজার রিজার্ভ ভোটার রয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাদের প্রার্থী বহাল থাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা জয়ের টার্গেট নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরো কয়েকটি কারণে বিএনপি প্রার্থী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে দলটির। বিগত নির্বাচনে তারা আরিফের পক্ষে প্রচারণা চালালেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নগরীর বিভিন্ন ইস্যুতে সর্বদলীয় সভায় তাদেরকে ডাকা হয়নি। সেক্ষেত্রে তাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মনে করছে। এই নির্বাচনে আরিফকে শিক্ষা দেয়ারও টার্গেট রয়েছে তাদের-এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
এ ছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমানের হাতেগড়া মীরবক্স টুলা এলাকার সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে খারাপ আচরণ। রাস্তা প্রশস্ত করতে অধিগ্রহণ না করে জমি দখলে গেলে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ ধরনের নানা কারণে ব্যক্তি আরিফের প্রতি দলটির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির দাবি জামায়াত তাদের জয়ের ক্ষেত্রে বাধা হবে না। কারণ সিলেটে জামায়াতের অর্ধেক ভোট সব সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। কামরানের সঙ্গে বরাবরই জামায়াত নেতারা বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে মহানগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, এমন গুজব ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলতেই থাকবে। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আমরা সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্বাচনে লড়ছি না। মাঠে আছি, থাকবো। একুশে মিডিয়া।”

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages