মেঘলামা ‘গল্প’: নওমি - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Saturday 16 November 2019

মেঘলামা ‘গল্প’: নওমি



একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:>>>

লেখক- ফাতেমা আক্তার নওমি:
অনেক দিন পর নানুবাড়িতে আসা।আর নানু বাড়িতে আসা মানে ই তো সারাদিন হৈহুল্লর।
যাই হোক, পড়ন্ত বিকেলে মিম, মিমের আম্মু, নানু সবাই উঠানে বসে আড্ডাই মজেছে।মিম হলো ক্লাস টু এ পড়া একটি বাচ্চা মেয়ে। দেখতে যেমন কিউট তেমনি নানুবাড়িতে সবার কাছেই আদরে আটখানা। একটা ছোট বেলুন নিয়ে মিম খেলছিল। হঠাৎ খেয়াল করলো কিছু দূরে কে যেন মিম দের বাড়ির দিকেই আসছে। একটা ছেলে পড়নে জিন্স, গেঞ্জি।  আর সাথে একটা মেয়ে।  মেয়েটি পড়নে ছিল গারো কমলা রঙের শাড়ী।  দেখতে দেখতেই বাড়ির মধ্যে চলে আসলো। ছেলেটি কথা বলছিল মিম এর নানুর সাথে। আর মেয়েটি এসেই মিম কে কোলে তুলে নিলো।  মিমকে আদর করতে লাগলো।  মূহুর্তের  মধ্যেই মিম এর কাছে মেয়েটিকে বেশ পছন্দ হয়ে গেল। মিম মেয়েটি কে বললো,
-তোমার নাম কি?
মেয়ে: মা।  মা বলো আমাকে।
মিম একটু লজ্জা পেয়ে গেলো।
-মা কেন বলবো আমার তো মাম্মাম আছে। আমি তোমার নাম জানতে চেয়েছি।
মেয়ে : আমার নাম মেঘলা। তুমি আমাকে মেঘলামা বলে ডাকতে পারো।
মেঘলা আসলে সাথের ছেলেটির সদ্য বিয়ে করা বউ। আর ছেলেটি হলো মিম এর বড় মামার বন্ধু সফিক। সফিক আর মেঘলা দুজন দুজন কে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছে। নতুন বউ কে নিয়ে কোথায় যাবে?  তাই বন্ধুর বাড়িতে বেশ কয়েক দিন থাকবে বলে এসেছে।
এদিকে মিমরা ও বেড়াতে এসেছে বেশ কয়েক দিন হলো। মিম এর মা,বাবা স্থির  করেছে কালই চলে যাবে। সদ্য বিবাহিত দুজন কাপল থাকবে,  সেখানে মিমদের চলে যাওয়াই ভালো। মিম এর মা খুব ভালো মানুষ এই দিক গুলো বিবেচনা করে কাল সকালেই চলে যাওয়ার জন্য মন স্থির করলো।
আর ওরা পালিয়ে বিয়ে করে, এখন কোথায়ই বা যাবে?  মেঘলা দেখতে বেশ সুন্দরি। 
পরদিন সকালের নাস্তা খেয়ে মিমের বাবা মা নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন্য তোরজোর করছিল।
মিমকে রেডি করাবে বলে বার বার ডাকলো,কিন্তু মিম মেঘলার কোল থেকে নড়ছেই না। 
আর বলছে,না আমি মেঘলামাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। এই এক দিনে এতো বেশি মেঘলার সাথে মিমের  ভাব হয়ে গেছে, যে বউটাকে ছেড়ে  যেতেই চাচ্ছে না বাচ্চা মেয়েটা। কাল অবধি  সারাক্ষণই মেঘলার কাছে ছিল মিম।
মা মিমকে অনেক বুঝালো, চলো আম্মু তোমাকে বাসায় নিয়ে এটা দিবো ওটা দিবো। এই সেই কতো কিছু।
নাহ!মেয়েটা নাছোড়বান্দা। অনেক চেষ্টা করেও সবাই ব্যর্থ।  সে তার মেঘলামার কাছেই থাকবে।
পরিশেষে,  মিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেল।
মিমের  বাবা মা মিম এর নানানানু কে বলে গেল।দেখ, যদি পারো, ওকে বুঝিয়ে বাসায় দিয়ে এসো। এমনি অনেক দিন স্কুল বন্ধ দিয়ে ফেলেছে।
মেঘলাও যেন সবাই কে আপন করে নিয়েছে, নিজে হাতে সবার জন্য রান্না করে।  মিম এর নানুকে কোনো কাজই করতে দেয় না। মিমকে গোসল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়, সাজিয়ে দেয়, আবার ঘুমও পারিয়ে দেয়। আর সময় পেলে মিম তার মেগলামার সাথে লুকোচুরি খেলে।  লুকিয়ে আবার ঝাপ্টে এসে জড়িয়ে ধরে মেঘলা মাকে। ছোট ছোট দাঁত দিয়ে খলখলিয়ে হাসে মিম।কেউ ওদের দেখে বলবে না যে, ওরা মা মেয়ে নয়।
মেঘলাই বা কেমন বয়স হবে, খুব বেশি হলে ১৬/১৭।  এর উপরে হবে না। মিম আর মেঘলার হাসির খলখলানি তে সারাবাড়ি ঝলমল করে।
এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছু দিন। মিম তো এখন একেবারেই বাসায় যাওয়ার কথা ভুলে গেছে । ওকে মনে হয় আর বাসায় পাঠানো যাবে না।
এদিকে মিমের আম্মু ফোন দিয়ে বারবার বলছে, মিমকে দিয়ে যেতে। এই অবস্থা দেখে মিমের  নানানানু বললো মেঘলা তুমি আর সফিক যাও মিমদের বাসায়।
ওকে সাথে নিয়ে যাও। যতদিন ইচ্ছে থেকে আবার এখানে চলে এসো। সফিকও একটা ভালো চাকুরী পেয়েছে, ইলেকট্রিক কাজের চাকুরী।  এমনিতেও সফিককে ঢাকায়ই যেতে হয় প্রতিদিন।  আর মিমের নানুবাড়িও ঢাকা থেকে খুব বেশি দূর নয়।
পরদিন সকাল সকালই চলে আসলো মিমকে নিয়ে। ওদের বাড়িতে মেঘলা আর সফিক। এখানেও মিম তার মেঘলামাকে চোখে হারায়। স্কুলে গেলেও মেঘলামাকে নিয়ে যায়।
বেশ কিছুদিন পরে, একদিন  হঠাৎ এক লোক আসলো মিমদের বাড়িতে।লোকটা  বলে,  এখানে মেঘলা নামে কেউ আছে?
মিমের মা একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়ে বলে,
-না তো! কেন?  আপনি মেঘলাকে কেন খুঁজচ্ছেন? আমার ভাইয়ের বউ এর নাম মেঘলা।  আপনি কি ওর বাড়ির লোক? যদি বাড়ির লোক হয়ে থাকেন,  তাহলে দেখুন ওরা ওদের নিজেদের পছন্দমত বিয়ে করেছে সম্পর্কটাকে মেনে নেন। আর ওরা বেশ ভালো আছে।
লোকটা বিচলিত হয়ে বলে,
-না,  আসলে আমি মেঘলার বাড়ির লোক নই।মেঘলার স্বামীর নাম কি সফিক?  ইলেক্ট্রনিক কাজ করে? আজ উনি এক দূর্ঘটনায় বেলা ১১ টার দিকে মারা গেছেন।  উনার পরিবার কে খরব দেওয়ার ছিল। তাই বলতে এলাম।
কথা গুলো লোকটা বলেই চলেছিল । কিন্তু,  কারোই বিশ্বাস হচ্ছিল না। পাশের থেকে মেঘলা সব শুনতে পারে।ছুটে এসে বলে,
- কোথায় সফিক?  কি হয়েছে ওর?  আমাকে এখনি নিয়ে যান ওর কাছে।
পেছন থেকে মিমের আম্মু বলে উঠলো,  পাগলামি করো না। দাঁড়াও বোন, আমিও যাবো। লোকটির সাথে যাওয়ার পর লাশটাকে সনাক্ত করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো।
সফিকের বাড়ির লোকজনও ততক্ষণ এ জেনে গেছে। সফিক ভালো পরিবারেরই ছেলে।  কিই বা ভুল ছিল ওর? মেঘলাকে ভালোবেসেই তো ঘর ছেড়েছে।  হয়তো যদি, ওর এই নিষ্পাপ ভালোবাসাটাকে পরিবারের লোকজন মেনে নিতো।তাহলে হয়তো সবাইকে ছেড়ে লাশ হতে হতো না।
নিয়তির পরিহাস আজ এই পথে এনে দাঁড় করিয়েছে মেঘলা সফিককে।
দাফন কাফন শেষ করে মিমের মা মেঘলা কে নিয়ে বাসায় আসে। সেদিনও মেনে নেয় নি সফিকের পরিবার মেঘলাকে। উলটা সব কিছুর জন্য তাকেই দায়ী করেছে।
মেঘলা থমকে গিয়েছিলো,  সে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না, কি হয়ে গেলো তার সাথে।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে না।  ভিতর থেকে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। অথচ, চোখদুটো দিয়ে পানি আসছে না।

এই করুন অবস্থায় মিম সবসময়ই মেঘলার পাশে ছিল।
মেঘলাকে কান্না করতে দেখলে।চোখ মুছে দিয়ে বাচ্চা মেয়েটা বলতো, মেঘলামা তুমি কেঁদো না। আমি তো আছি তো। মেঘলামা। 
মিমের মাও মেঘলাকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলো না।তবুও যতটুকু পারতো ছোট বোনের মতোই দেখতো মিমের বাবা মা দুজনেই।

মিমের মা একদিন হঠাত মেঘলা কে বলে উঠলো,  আচ্ছা তোমার বাড়ির লোক কেউ নেই? একটা বার তোমার খবরও নিচ্ছে না। কেমন বাবা মা তোমার?
মেঘলা কান্না বিজড়িত কন্ঠ নিয়ে বলে, আমার পৃথিবীতে কেউ নেই। বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছেন।  একটা ভাইয়া আছে। সে খুব খারাপ।  ভাইয়া আর ভাবি আমাকে অনেক অত্যাচার করে। সফিকের  সাথে বিয়ে হওয়ার আগে খুব মারতো আমাকে,  ঠিক মতো খেতেও দিতো না। সফিকই ছিল আমার একমাত্র ভরসা।
কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল, মিমের মা। এইটুকু একটা মেয়ে এতো কষ্ট চেপে রেখেছে! আল্লাহ কেন তুমি এই ভালো মানুষ গুলোকে এতো কষ্ট দেও!
-জানি না, বোন তোমাকে শান্তনা দেবার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তুমি যতদিন ইচ্ছে আমাদের বাসায়ই থেকো।  কিছুদিন আমার বাসায় আর কিছুদিন আমার মায়ের বাসায়। আশা করি তোমার আর কোনো কষ্ট হবে না। তোমার মতো ভালো মেয়েকে কেই বা চাইবে না রাখতে?
এভাবে প্রায় কয়েক মাস কেটে গেল,  মিম আর মেঘলামার বন্ধন টা বেড়েই চললো। মিমের পরিক্ষার রেজাল্টও খুব ভালো হতো। তার অবদান রয়েছে মেঘলার,  সে মিমকে যা বলতো মিম তাই শুনতো।
সব দিক থেকেই মেঘলার উপর সন্তুষ্ট ছিল মিমের পরিবার। মিমের পরিবারের উপরও মেঘলা খুব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো। উনাদের মতোই বা ভালো মানুষ কয় জন আছে। যারা দিনের পর দিন অজানা একটি মেয়েকে আশ্রয় দিয়েছে।

আরও ৬ মাস পর.
মিমের বড়মামা সাথে করে মেঘলার ভাই কে নিয়ে এলো । মেঘলা তার ভাইকে দেখা মাত্রই লুকানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু,  মেঘলার ভাই মাহিন কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো,  বোন আমার! ভাই কে ক্ষমা করে দে। আর অভিমান করে থাকিস না বোন। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি জানি আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোর ভাবিও আর আগের মতো নেই। অনেক ভালো হয়ে গেছে সে। তোর এই বিপদের সময় আমি ভাই হয়ে পাশে থাকবো না, এটা কি হয়?
চল বোন আমার সাথে চল।  আর রাগ করে থাকিস না।  আমরা তোকে অনেক ভালো রাখবো।  নিজের ভাইয়ের কাছে থাকবি না?
কথাগুলো বলেই চললো মেঘলার ভাই মাহিন।

...দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মেঘলাকে তৈরি হতে বললো। মিম এর মা ও অনেক কথা শুনিয়েছে মাহিনকে। আর বলছে মেঘলা যাবে না। আবার যদি কষ্ট দেন তাহলে কিন্তু মেঘলা যে কোনো সময় চলে আসবে আমাদের বাসায়। আমার বাড়ির দরজা মেঘলার জন্য সারাজীবন খোলা থাকবে। মেঘলা সফিকের দেওয়া কয়েকটা শাড়ি গুছিয়ে নিলো।
মিম এর আম্মু বলে, একি আমার দেওয়া থ্রি -পিছ গুলো নিচ্ছো না যে?
- না থাক,  আপা।  যদি কখনো বেড়াতে আসি। এখানে এসে পড়বো কি? তাই ওগুলো এখানেই থাক আপনি রেখে দিয়েন।
.
. অবশ্যই রাখবো মেঘলা।  তুমি আমার ছোট বোনের মতো।  আমার কোনো বোন নেই।  সত্যি তোমাকে পেয়ে অনেক হ্যাপি ছিলাম আমরা।  আমার মেয়েটার যে কি হবে।
ওকে কিভাবে বুঝাবো।
যাওয়ার কথা শুনার পর থেকেই মিমের  এক বায়না, মেঘলা মা যাবে না।  আমিও যাবো সাথে। মেঘলামার হাতটা ছাড়ছেই না মিম।  খুব আঁকড়ে ধরে আছে।
চলে যাওয়ার সময় রাস্তা পর্যন্ত মেঘলার কোলেই ছিলো মিম।
..
.মেঘলা যখন রিক্সায় উঠছিল,  দুজনেই অনেক কান্না করছিল। মিম ও মা দুজনেই মেঘলাকে যেন হারিয়ে ফেলছে।
ওইকুটু একটা বাচ্চা মেয়ে কখনো ভাবতে পারেনি। এটা কি হচ্ছে তার সাথে?
.... শুধু চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলছিলো বারবার,  মেঘলামা আমার মেঘলামা,  তুমি যেও না। তুমি যেও না আমাকে ছেড়ে।
মেঘলা মিমের হাতটা ছেড়ে দিলে রিক্সা চলা শুরু করলো ।
অনেক কান্না করেছে মিম, কিছুতেই থামাতে পারছিলো না মা মিমকে।
.মেঘলামাকে এনে দাও। আমার মেঘলামাকে এনে দাও।
মিম খাওয়া-দাওয়া করছে না একদমই। শুধু মেঘলামা মেঘলামা করে পুরো বাড়ি কান্নাময়।
মিমদের বাড়িটা একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে। মিমের মায়েরও মনটা খুব বেশি ভালো নয়। সত্যি খুব বেশিই মায়া পড়ে গিয়েছিলো মেয়েটার উপর। 

এভাবে দিন যেতে লাগলো।  মিমও আস্তে আস্তে  স্বাভাবিক হয়ে গেলো। তবে ফ্যামিলির কেউই মেঘলার কথা বলে না। মনে মনে আজও সবাই ওকে খুব মিস করে।কিন্তু মিমকে কষ্ট দিতে চায় না।
ও যেন তার মেঘলামাকে ভুলে থাকতে পারে।এ জন্যই ওর সামনে কেউ ওই নামটা নেয় না।
মা মাঝে মাঝে ভাবে, মেঘলাটা কি আমাদের ভুলে গেলো? চলে গিয়ে একটা বারও ফোন করে তো যোগাযোগ রাখতে পারতো? ভাই ওকে সত্যি ভালো রেখেছে তো?নাকি আবারো শুরু হয়েছে ওর উপর নানারকম অত্যাচার?
এসব কথা ভাবলেই কেমন যেন মনটা খারাপ হয়ে যায়।

. দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১১ টা বছর। মিম এখন নিজেই ১৭ বছরের যুবতী।  কিছুদিন পর এইচ.এস.সি এক্সাম দিবে। নানারকম ব্যস্তময় জীবন এখন মিমের।  কলেজ,  কোচিং, আর পড়াশোনার মাঝেই তার কেটে যায় সারাদিন।  সে যখন ৬ বছরের ছিল তখন তার মেঘলামা ছিলো। এখনো খুব বেশি মনে পড়ে মেঘলামাকে। তবে স্মৃতিগুলো আগের মতো জীবন্ত নেই। যান্ত্রিক জীবনে সবাই যার যার মতো করে ব্যস্ত। তবে মনে হয়, সেই দিন গুলি যদি আবার ফিরে পেতাম! মেঘলামার কথা মনে পড়লেই চোখ জলে ভরে উঠে।
কোথায় তুমি মেঘলামা?  কোথায় আছো তুমি? কেমন আছো তুমি?তুমি কি কখনো আর আসবে না?  কোনো দিনও তোমার সাথে আর দেখা হবে না?

.সেদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে। প্রচণ্ড জ্যাম ছিলো রোডে।  বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য ওয়েট করছিলো মিম। হঠাৎ দেখলো, একটা কালো গ্লাস লাগানো গাড়ি জ্যামে পড়ে বার বার হর্ন বাজাচ্ছিলো।  এমন ভাবে হর্ন বাজাচ্ছিলো দেখে মনে হচ্ছিলো যেন,  গাড়িটির বেশ তাড়া।
ওদিকে পাত্তা না দিয়ে মিম মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দেখছিলো।  বাসার যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কিনা। ঠিক সেই মুহুর্তে ,কালো গাড়িটির গ্লাস নামানো দেখলো,  আর চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো মিম, মেঘলললআমা...................
দৌড়ে গাড়িটির কাছে যেতে না যেতেই গ্লাস উঠিয়ে দিলো। মিম রোড এর মাঝেই গাড়িটির উপরে বার বার হাত নেড়ে বললো। মেঘলামা, দেখো আমি তোমার মিম।  মেঘলামা আমাকে চিনতে পারছো তুমি? জ্যামের কারনে সব গাড়ি গুলোই স্থির ছিলো।
কিছুক্ষণ পর, গ্লাস টা আবার খুললো। এবার মিম স্পষ্ট দেখলো মেঘলামাকে।  আসলেই আমার মেঘলামা। কোথায় ছিলে তুমি?  কেন তুমি আমায় ছেড়ে গেলে?  তুমি জানো আমি তোমাকে কতো মিস করি। চলো  না আমাদের বাসায়? আমার ছোট একটা ভাইও আছে। মিম আনন্দের সাথে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
. মেঘলা মা বলে,  কে তুমি? আর আমার নাম কি করে জানলে? আর আমাকে মা কেন বলছো?
মেঘলার কথাগুলো শুনে মিম থমকে গেলো।
-কি বলছো মেঘলামা? আমি তোমার মিম।
রোডে জ্যাম ক্লিয়ার হয়ে গেলো, সাথে সাথে কালো গাড়িটা স্টার্ট দেওয়া শুরু করলো।
পিছন থেকে গাড়িটির কাছে ছুটতে লাগলো মিম।১১ বছর আগের সেই দিনটির মতো চিৎকার করে বলতে থাকে,
- মেঘলামা আমাকে ছেড়ে যেও না মা। মেঘলা মা তুমি যেও না।  মেঘলামায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া.........
.......

কুশনের  সাথে গাঁ এলিয়ে বেডের পাশে মা বসে আছে।
মিম চোখ মেলে বলে,
-মেঘলামা.....

- কি হয়েছে মা?  কিছু লাগবে?

-মেঘলামা কোথায়?  আবারও চলে গেলো কেন? ওই দিনের মতো? এতো ডাকলাম আমি। চিনলোই না আমাকে।আমি কি খুব খারাপ মেয়ে মা? খুব বাজে? আমাকে বারবার কেন ছেড়ে যায় মেঘলামা?
কান্নায় ভেঙে পড়লো মিম।
মা বলে,দ্যাখ মা, তুই তো বড় হয়েছিস। এই রকম পাগলামি করলে চলবে? ভাগ্যিস অন্য একটা লোক তোকে রোডের থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো বলে তেমন কিছু হয় নি।  একবার ভাব তো, তুই যেভাবে গাড়ির পেছন পেছন ছুঁটছিলি।অন্য একটা গাড়ি এসে যদি মেরে দিতো? কি হতো তখন?
আবার সামনেই তোর এইচ.এস.সি এক্সাম, কি হতো! আর পাগলামি করিস না। আল্লাহ মানুষ কে কখন কি করে তা শুধু তিনিই জানেন।
যাই হোক, যে লোকটা তোকে বাঁচিয়েছে সে রোডে এই চিঠিটা পেয়েছে। পড়ে দ্যাখ, আশা করি বুঝতে পারবি।

মায়ের হাত থেকে চিঠিটা নিলো মিম।কোনো খাম ছিল না সাদা একটা কাগজে বড় বড় করে অনেক কিছু লেখা।
মিম মামনি..
আমি তোমাকে খুব মিস করি। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।  সবসময় আমার মনে হয় আমার একটা মেয়ে আছে নাম মিম। অনেক খুশি হয়েছি তোমাকে দেখে। এতো বড় হয়ে গেছে আমার মামনিটা।  অনেক ইচ্ছে করছিলো একটা বার তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে।  তোমার কপালে হাতে একটা চুমু দিতে। কিন্তু,  কি করবো বলো?আমি তো তোমার সেই মেঘলামা নই। আমি তো একজন পতিতা হয়ে গেছি। আমার ভাই আমাকে সেদিন নিয়ে এসেছিলো ঠিকই কিন্তু বাসায় নিয়ে যায় নি। কিছু বাজে লোকের কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই থেকে আমি আর তোমার মেঘলা মা নই। আর আমার পাপিষ্ঠ হাত দিয়ে তোমার ওই নিষ্পাপ মুখটা স্পর্শ করার মতো এতো বড় অন্যায় আমি কি করে করি বলো?মেঘলামাকে ক্ষমা করে দিও। আর অনেক বড় হও তুমি। আর আজ থেকে জানবে তোমার মেঘলামা মারা গেছে। গাড়িটা থামিয়ে কথা গুলো লিখে দিলো, সে মেঘলা নয় এক পতিতা!
.
.চিঠিটা পড়ার পর, বিরাট এক শব্দ করে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো মিম, মেঘলামা.................!!

কিছু কিছু মানুষ আমাদের জীবনের সাথে এমন ভাবে মিশে যায়। যাদেরকে আমরা চাইলেও ভুলতে পারি না।তার জন্য মায়া নামের অদৃশ্য বস্তুটা সবসময় ঘিরে থাকে।

সমাপ্ত...
 
 
 



একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages