একুশে মিডিয়া, নোয়াখালী রিপোর্ট:
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে দিনে দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে নির্বাচনী চিত্র। সক্রিয় হয়ে উঠেছে সব দলের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, ২০০৮ সালে টিকেটপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী মহিলা নেত্রী লুৎফুন্নাহার মুন্নীসহ অন্তত পাঁচজন আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচন করতে চান।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় বিএনপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগের গত দুই মেয়াদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার উন্নয়নের কারণে নৌকার ভোট বেড়েছে এ আসনে। বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে নোয়াখালী-৩ আসন গঠিত। এ আসনে প্রথম সংসদের পর আওয়ামী লীগ জিতেছে কেবল দশম সংসদ নির্বাচনে। ভোটের হিসাবে এখানে বিএনপিই বেশি শক্তিশালী। মাঠ পর্যায়ে ঘুরে জানা গেছে, এখানে আওয়ামী লীগে রয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরোধ।
দৃশ্যমান কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আছে। তারা বলছে, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেটার প্রকাশ ঘটে। তাদের অনুসারীরা ওই দুই নেতার নামে স্লোগান দেয়। ছোট খাটো মারামারির ঘটনাও ঘটেছে একসময়। অন্যদিকে একসময়ে বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকলেও এখন আর তা নেই। বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও বেগমগঞ্জে দৃশত কোনো উন্নয়ন হয়নি।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নোয়াখালী জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কারণ তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের পৈতৃক নিবাস এ জেলায়। ওই সময় তার ছোট ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদের ঐকান্তিক চেষ্টায় বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ী উপজেলায় সড়ক পাকা করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নকর্মকান্ড হয়েছে। সেই সুবাদে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। অবশ্য বিপুল ভোট পেলেও জয়লাভ করতে পারেননি তিনি। পরে জাবেদ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণও বিগত পাঁচ বছরে বেগমগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের ভোটও বেড়েছে। মামুনুর রশিদ কিরণ এমপি হওয়ার আগে চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে। গত পাঁচ বছর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে কিছুটা হতাশ তিনি। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ারব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ এলাকায় আগের মতো আর বিএনপির ঘাঁটি নেই। এখন নৌকার ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। বিরোধ বিষয়ে মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে নেতাকর্মীদের মান-অভিমান থাকতে পারে, সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। বিভেদ থাকলেও নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ।’
মিনহাজ আহমেদ জাবেদ একজন নির্লোভ ও পরোপকারী মানুষ। তিনি নেপথ্যে থেকে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকেন। তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
মিনহাজ আহমেদ জাবেদ বলেন, ‘অবহেলিত বেগম গঞ্জের কী করেছি, তা এলাকাবাসী অবগত আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভায় আমার হাত ধরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।’নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইন্ট্রাম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এটিএম এনায়েত উল্ল্যাহও বিভিন্নভাবে দান, অনুদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করছেন। তার বাবা হাবিব উল্লাহ বাহার মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। এ ছাড়া তার বড় ভাই ডা. এবিএম জাফর উল্লাহ মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব এবং বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
লুৎফুন্নাহার মুন্নী ২০০৮ সালের নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী হয়ে পরাজিত হওয়ার পরও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আগামী নির্বাচন সামনে এলাকায় গণ-সংযোগসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি থাকাকালীণ বিএনপি-জামায়াতের প্রতিহিংসায় বার বার কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেগম গঞ্জের জনগণ আমার পক্ষে অবস্থান নেয়ার পরও দলীয় নেতাদের রোষানলে পড়ে আমাকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দলীয় নেতাকর্মী সহবেগমগঞ্জের মানুষ আমার পক্ষে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করতে পারবো। দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন ফয়সাল। তিনি পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কাজে ভূমিকা রেখেছেন। তার আরেকটি পরিচয় তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম নুরুল হক মিয়ার দৌহিত্র।
নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব কটি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি জয়লাভ করে। এখনো বিএনপিকে শক্তিশালী মনে করে স্থানীয়জনসাধারণ। বিগত সময়ে এখানে দলটিরমনোনয়নপ্রার্থী অনেক নেতার নাম শোনা গেলেও বর্তমানে বরকত উল্ল্যা বুলুই বিএনপির একমাত্র প্রার্থী এটা অনেকটা নিশ্চিত। যদি মামলার কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারেন সেক্ষেত্রে তাঁর সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকী নির্বাচন করতে পারেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহিমও দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন।
জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাক্ষা চন্দ্র দাস বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলায় বরকত উল্যা বুলুর বিকল্প প্রার্থী নেই। এই উপজেলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক। মানুষের সুখ-দুঃখে সব সময় তাকে পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে বরকত উল্ল্যা বুলু বলেন, ‘বেগমগঞ্জের মাটি বিএনপির ঘাঁটি। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে বলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ২০-২৫টি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে নির্বাচন করতে আমরা প্রস্তুত। এরই মধ্যে নির্বাচন করতে এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়েগণসংযোগ, মতবিনিময় সভা করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে আমরা জয়লাভ করব।’
জাতীয় পার্টি থেকে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ও ফজলে এলাহী সোহাগ মিঞা মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জাসদ (ইনু) থেকে দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জলিল চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। একুশে মিডিয়া।”
No comments:
Post a Comment