উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■:>>>
নড়াইলের দত্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সীমাহীন অভিয়োগ উঠেছে। টাকা ছাড়া তিনি কিছুই চেনেন না বলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অভিযোগ।
দত্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৮ জুন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে তুষার কান্তি ঘোষ যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক দুর্নীতি। গত চার বছরে স্কুলে আর্থিক এমন কোনো অনিয়ম নেই যা তিনি করেননি।
অভিযোগে জানা যায়, বছরের বিভিন্ন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির কার্ড তৈরি করার কথা বলে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন ছাত্রের কাছ থেকে ৬শ' টাকা করে নিয়ে তাদের উপবৃত্তির টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। গতবছর অন্তত ২০ জনকে নিয়ে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেন এই শিক্ষক।
স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শিল্পী বিশ্বাস, সুখী বিশ্বাস, চুমকি সিকদার বলে, ৯ম শ্রেণীর মাঝামাঝি সময়ে হেডস্যার আমাদের উপবৃত্তির কথা বলে ৬শ’ টাকা করে নিয়েছেন। একই সময়ে ৩শ’ টাকা দেয়ায় উপবৃত্তি হয়নি রিপা খানমের।
৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা, তমা, রাবেয়া জানায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকাকালে তাদের কাছ থেকে উপবৃত্তির ফরম পূরণ করা হলেও উপবৃত্তি দেয়া হয়নি। একই ক্লাসের ফার্স্টবয় সাজ্জাদুল ইসলাম জানায়, স্যারেরা বলেন, মেধাভিক্তিক নাকি উপবৃত্তি দেয়া হয়। আমাকে আজও উপবৃত্তি দেয়া হয়নি।
হাচলা গ্রামের কৃষক কুতুবদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। উপবৃত্তির জন্য হেডস্যার ৬শ’ টাকা চেয়েছেন। আমি ৩শ’ টাকা দিয়েছি। কিন্তু হেডস্যার আমার মেয়েকে উপবৃত্তিও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক বেসরকারি স্কুলগুলোর উপজেলা পর্যায়ে সেশন চার্জসহ বেতন সাকুল্যে ৫শ’ টাকা নেয়ার কথা। কিন্তু দত্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শ্রেণীর ভর্তিতে ৮৫০, ৮ম শ্রেণীর ৯৬০ এবং ৯ম ও দশম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য নেয়া হয় ১হাজার টাকা। যদিও নানা অজুহাতে ভর্তি ফি’র বাইরেও মাত্রাতিরিক্ত হারে নেয়া হয়।
দশম শ্রেণীর ছাত্রী বন্যা বলে, ৯ম শ্রেণীতে আমার গ্যাপ যাওয়ায় হেডস্যার আমার কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। কিন্তু রশীদে লেখা হয়েছে ৮৫০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, অন্য স্কুল থেকে এই স্কুলে ভর্তি হতে এলে তাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়ে থাকেন প্রধান শিক্ষক।
এখানেই শেষ নয়। প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষের ভাই পিযুষ কান্তি ঘোষ একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পদে নিয়োগ পেয়ে এমপিও বন্ধ হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে স্কুলে অনুপস্থিত। পরবর্তীতে পুনরায় এমপিও চালু হলে ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসের বেতন উত্তোলন হয়েছে ৫ বছর অনুপস্থিত এ শিক্ষকের।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাওলানা নাসির উদ্দীন বলেন, আমি ২০১৪ সালে এই স্কুলে যোগদান করি। এই সময় থেকে এই স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক পিযুষ কান্তিকে কখনো দেখিনি। আমি তাকে চিনিও না। কিন্তু আমাদের বেতনের খাতায় তার নাম দেখি।
অনিয়মের বিষয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার দত্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ করা হয়েছে। যেসব টাকা ছাত্রদের কাছ থেকে নেয়া হয় তাই রশীদে লিখে দেয়া হয়। স্কুলে ভর্তি ফি ৫শ’ টাকা নির্ধারিত হলেও অতিরিক্ত টাকা নেবার কথা স্বীকার করেন তিনি। স্কুলে না থেকেও ১০ মাস বেতন তোলার ব্যাপারে তিনি টাকা ফেরতের কথা বললেও কোনো ব্যাংক রশিদ দেখাতে পারেননি।
এদিকে অনুপস্থিত থেকে বেতন উত্তোলনকারী ঢাকার ‘বেঙ্গল সোসাইটি’র ইনভেস্টমেন্ট অফিসার পিযুষ কান্তি ঘোষের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার অ্যাকাউন্টে টাকা আসতে পারে। তবে তা উত্তোলন কিম্বা ফেরত দেয়া হয়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম সায়েদুর রহমান বলেন, আমি ইতোমধ্যে খোঁজ নিয়েছি, অনিয়ম ধরা পড়লে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আর্থিক অনিয়ম বেশি হলে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানো হবে।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment