একুশে মিডিয়া, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:>>>
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজার সংলগ্ন ৮০ নং ভাটই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল আঙ্গিনার সম্পূর্ণটা জুড়ে প্রতি রবিবার বসে বিরাট মহিষের হাট। স্কুলের প্রবেশ দ্বারে রাস্তার উপরে এবং আশপাশে বসে গরু ছাগলের হাট ও অস্থায়ী অসংখ্য দোকান।
মহিষের আক্রমনের ভয়ে প্রত্যেক রবিবার ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি থাকে অর্ধেকেরও কম। হাটেরদিনে স্কুল আঙ্গিনা জুড়ে থাকে ভীতিকর পরিস্থিতি। হাটের কোলাহল এবং পশুর চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে স্কুলের সার্বিক পরিবেশ। তাই শব্দ দূষণের মধ্যেই জানালা দরজা বন্ধ করে, স্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে চালাতে হয় ২৭০ জন কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম।
স্কুল চত্বরের সর্বত্র নোংরা দূর্গন্ধ পরিবেশ। কমলমতি শিশুরা স্কুলে অবস্থানকালে সারাক্ষণ থাকে আতংকে কখন যেন পাগলা মহিষ ছুটে এসে তাদের আক্রমন করে। হাটেরদিন তারা স্কুলে আসতে চায় না। হাট মালিকদের কাছে শিক্ষকরা অসহায়। প্রভাবশালী হাট মালিকদের ভয়ে শিক্ষকরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সাহস করে না। জিম্মি হয়ে আছে ঐ বিদ্যালয়ের কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকগণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রসাশন, শিক্ষা কর্মকর্তা কেহই ব্যবস্থা গ্রহণ করে না এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে।
জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলাসহ পাশের জেলা কুষ্টিয়া, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ও মহিষ ক্রয় বিক্রয়ের জন্য প্রসিদ্ধ হাট হলো ভাটই বাজারের হাট। এই ঐতিহ্যবাহী হাটটি ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহাজনি ও খুচরা ক্রেতা বিক্রেতা আসে এ হাটে পশু ক্রয় বিক্রয় করতে।
হাটের দিনে স্কুলের তিনটি ভবনের সামনেই পশুবহনকারী অবৈধ ভডভডি, নছিমন,করিমন, আলমসাধু সহ নানা ধরনের শত শত যান অবৈধ ভাবে পার্কিং করা থাকে যার ফলে কোন ছাত্রছাত্রী ইচ্ছা থাকলেও শ্রেণিকক্ষের বাইরে আসতে পারে না দরজা বন্ধ করে তাদেরকে শ্রেণি কক্ষের মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে হয়। দরজা খোলা থাকলে মাঝে মধ্যে মহিষ ছুটে দৌড়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ে। মহিষকে ত্যাজি দেখানোর জন্য মহিষের দালালেরা লাঠির মাথায় এক ধরনের সুচারু পেরেক লাগিয়ে, সেই পেরেক স্বজোরে মহিষের শরীরে ফুটিয়ে দেয় তখন মহিষ দিক বেদিক দৌড় দেয়, মাঝে মাঝে ক্লাস চলাকালিন শ্রেণি কক্ষেও ঢুকে পড়ে।
স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক জানায়, “একবার এক লোম হর্ষক দূর্ঘটনা ঘঠেছিলো আমাদের স্কুলে। সালমা ম্যাডামের ছোট বাচ্চাকে স্কুলের মেঝেতে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ছিলো। হঠাৎ একটি মহিষ দৌড়ে সেই কক্ষে ঢুকে পড়েছিলো। সেইবার অল্প একটুর জন্য বেচে গিয়েছিলো সালমা ম্যাডামের ছোট্র বাচ্চাটি। আরেকদিন দুইটি মহিষ স্কুলের অফিস কক্ষে ঢুকে পড়েছিলো, আমরা ভয়ে দৌড় দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলাম।
মহিষের দালাল ও ব্যাপারীরা স্কুলের গেটে এবং বারান্দায় বসে ধুমপান করে, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে, খাওয়া দাওয়া করে, দর কষাকষি করে এবং কখনও কখনও বাক বিতন্ডা এমনকি মারামারিতেও লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভয় পায়। সপ্তাহের রবিবারে আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারি না, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হই। তাই রবিবারে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি উল্যেখযোগ্যহারে কম থাকে।
হাটের দিন পশুর মল, মানব বর্জ ও আবর্জনা দিয়ে স্কুল মাঠ, প্রধান গেট ও বারান্দা নোংরা করে রাখে। দূর্গন্ধ হয়ে থাকে সম্পূর্ণ স্কুল ক্যাম্পাস এবং চারিপাশের পরিবেশ। পরের দিন পরিস্কার না করে ক্লাস চালু করা সম্ভব হয় না। তাই পরের দিন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা একসাথে আমাদেরকে পরিস্কার করে তারপরে ক্লাস শুরু করতে হয়। তাই হাটের পরেরদিন সম্পূর্ণ ক্লাস গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। হাট কর্তৃপক্ষ পরিস্কার করে দেয় না, আমরা তাদেরকে বলারও সাহস পায় না।
এ হাট থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে। অনেক প্রভাবশালীরা এ হাট নিয়ন্ত্রণ করে তাই আমরা সাহস পাই না নিষেধ করতে। স্কুলের সভাপতি আঃ সাত্তারকে হাট মালিকরা বৎসরে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনক্রমেই এখান থেকে হাট সরানো সম্ভব হয়নি।
হাট মালিকের অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, আমার নামে হাট কিনলেও এর প্রকৃত মালিক দুধসর ইউপি চেয়ারম্যান সোয়েব আলী জোয়ার্দার আপনারা তার কাছে জানেন । চেয়ারম্যান এর নিকট গেলে সে বলে, “আমরা এ বছর হাট বাবদ জেলা প্রসাশনকে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা দিয়েছি, ডিসি আমাদেরকে জায়গা দেয় না কেন? তাকে বলেন আমাদের জায়গার ব্যবস্থা করতে।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান গনি’র নিকট জানতে চাইলে সে জানায় গত এক বছর আগে এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পাই যে স্কুলের আঙ্গিনার বাহিরে হাট বসেছে। যদি স্কুলের আঙ্গিনায় হাট বসে তাহলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্কুলে হাট বসেছে আবার তাহা ইউ পি চেয়ারম্যান আমাকে জানাইনি।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment