আশিক, রাবি প্রতিনিধি:>>>
নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষকদের অন্তঃদ্বন্দ ও ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা ও কৃষি অনুষদের ছয়টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ সেশনজটে পড়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগে প্রায় এক বছরের বেশি সময়ের জট রয়েছে। তবে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট এবং শিক্ষকদের অন্তঃদ্বন্দ্ব নিরসন হলে সেশনজটের সমাধান মিলবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
কৃষি অনুষদের বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুষদের চারটি বিভাগের মধ্যে শুধু ফিশারীজ বিভাগে সেশনজট নেই। বাকি তিনটি বিভাগে একবছর সময়ের জট রয়েছে। এগ্রোনমী এ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগে ১৩ মাস, ভেটেরিনারি এ্যান্ড এলিমেন্ট সায়েন্সেস বিভাগে ১৮মাস ও ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে একবছরের সেশনজট রয়েছে।
অনুষদের শিক্ষার্থীরা বলেন, কৃষি অনুষদের প্রত্যেকটি বিভাগে শিক্ষকদের মধ্যেও দলাদলি দেখা যায়। দলাদলিকে কেন্দ্র করে পূর্বে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের নজিরও রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবন প্রভাবিত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। একইসঙ্গে অনুষদের বিভাগগুলোর ল্যাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে।
জানতে চাইলে কৃষি অনুষদের ডীন অধ্যাপক সালেহা জেসমিন বলেন, শেণিকক্ষের সঙ্কট রয়েছে এটা সত্য। তবে বেশ কিছু কক্ষ নির্মানাধীন রয়েছে সেগুলোর কাজ শেষ হলে শেণিকক্ষের সমস্যাও থাকবে না। আমাদের অনুষদভুক্ত ল্যাবগুলো সমৃদ্ধ। সেখানে প্রতি বছরের নির্দিষ্ট বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা হয়। এছাড়াও বিভাগগুলেতে বিশেষ করে সেমিস্টার পদ্ধতি করায় সেশেনজট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভাগগুলো নিজ জায়গা থেকে সেশনজট কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
এদিকে চারুকলা অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫-১৬ সেশনে। কিন্তু ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পড়াশোনা শেষ হয়নি। ২০১৬ সালে চারুকলা বিভাগকে ভেঙ্গে তিনটি বিভাগ নিয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে গঠিত হয় চারুকলা অনুষদ। ২০১৫-১৬ বর্ষের অনুষদভুক্ত শিক্ষার্থীরা নিদিষ্ট সময়ে ফলাফল পেয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারলেও পূর্বের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো তাদের স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারছেন না। ২০১০-১১ বর্ষের শিক্ষাথীদের পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফল ঘোষণা করা হয় নি।
চারুকলা অনুষদের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকার কারণে সবগুলো বিভাগ একত্রে পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া শিক্ষকদের গাফিলতি, খাতা মূল্যায়নে অনীহা ও সময়মতো ফলাফল প্রকাশ না হওয়ার ফলে সেশনজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষায় না বসা, কোর্স ঠিকমতো শেষ না হওয়া ও শ্রেণিকক্ষের সংকটই মূলত চারুকলা বিভাগের সেশনজটের কারণ। তবে এখন চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তর করার ফলে আর কোনো জটের সৃষ্টি হবে না বলে আশা করছি। আমরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছিয়ে আছে শুনেছি। তাদের অনেক প্র্যাকটিক্যাল বিষয় ও কোর্স আছে এজন্য সময় লাগে। তবে অনুষদের সবকয়টি বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছি কিভাবে দ্রুত নিয়মিত হওয়া যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। আর কৃষি অনুষদের জট আছে কিনা খোঁজ নিতে হবে। তবে ফিশারিজ বিভাগ সম্পর্কে জানি সেখানে নেই। অন্য যে বিভাগগুলোতে জটের কথা শুনছি খোঁজ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবো। যাতে করে সেশনজটের সমস্যার সমাধান হয়।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment