একুশে মিডিয়া, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:>>>
১৯৯১ সালে এ এলাকায় সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ছব্দুল শেখ নামে এক কৃষক। তিনি ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে স্থানীয় বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান ও জাতীয় দিবসগুলোতে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে এলাকার হাজার হাজার ফুলচাষি প্রতিবছর ফুল বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন উৎসবে এ এলাকায় উৎপাদিত ফুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলতি মাসেই রয়েছে তরুণ তরুণীদের সব থেকে বড় উৎসব দিন বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এছাড়া রয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসের ফুলের বাড়তি চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার ফুলচাষিরা।
ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়েছে লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। এসব ফুল জমি থেকে সংগ্রহ ও মালা গাঁথা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত এ এলাকার মেয়েরা সহযোগিতা করে। ফলে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলনগরী বলে খ্যাত বড়ঘিঘাটি গ্রামের ফুলকন্যা পুতুল, ফারজানা ও আয়েশা বেগম বলেন, সারা বছরই ফুল তোলার কাজ করি। কিন্তু এখন কাজ বেশি। আয় উপার্জনও বেশি হয়। প্রতি ঝোপা ফুল তুলে গেঁথে দিলে ১২ টাকা করে দেয়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ ঝোপা ফুল তোলা যায়।
ত্রিলোচনপুর ইউপির বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষি জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই ফুল চাষ করি। এবছর ১৬ কাঠা জমিতে ফুল চাষ করেছি। যা খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করেছি। আসছে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করব বলে আশা করছি। মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত এই ফুল বিক্রি করতে পারব।
একই গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান বলেন, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। এবছর দুই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছি। আশা করছি এ দিবসে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো।
এছাড়া ২০১৭ সালের নভেম্বরে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চার বিঘা এবং গাজিপুরে দুই বিঘা জমিতে লিলিয়াম ফুলের চাষ করি। নতুন এই ফুলের আদি নিবাস ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় খুব একটা লাভ হয়নি এই নতুন জাতের ফুলে।
বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জের মেইন বাসষ্ট্যান্ডে দেখা যায়, দুপুর থেকে শত শত কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত ফুল ভ্যান, স্কুটার ও ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন পরিবহন যোগে নিয়ে আসছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও কালীগঞ্জ মেইন বাসষ্ট্যান্ড ভরে যায় লাল, সাদা আর হলুদ ফুলে ফুলে।
সারাদেশের আড়ৎগুলোতে ফুল পাঠাতে আসা একাধিক ফুলচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতিবছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালবাসা দিবস প্রভৃতি দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুলচাষের জন্য দারুণ উপযোগী। এ বছর জেলায় ২৪৫ হেক্টর জমিতে লিলিয়াম, গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা গোলাপ, গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশি গাঁধা ফুল চাষ হয়। তবে, দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল এ ফসল সংরক্ষণের জন্য নেই কোন হিমাগার। ফলে যখন বাজারে যোগান বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ দাম কমে যায় তখন লোকসানে বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকেনা ফুলচাষিদের। ফলে কৃষকেরা বঞ্চিত হন ন্যায্যমূল্য থেকে।
একুশে মিডিয়া/এমএ
No comments:
Post a Comment