রবিউল ইসলাম,ঝিনাইদহ:>>>
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে রোববার ঝিনাইদহের চারটি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। এর পর একে একে বিভিন্ন উপজেলার ফলাফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও চারটি উপজেলার দুইটিতে হেরেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সর্ব্বোচ ৯০ হাজার ২১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলেন একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জে এম রাশিদুল আলম। তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ২৬৭ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে যুবলীগ নেতা রাশিদুর রহমান রাসেল ৭৮ হাজার ২৪৭ ভোট ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরতি দত্ত ৬৩ হাজার ৭০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৪৯ হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী নৌকা প্রতীক নিযে আওয়ামী লীগের মশিয়ার রহমান জোয়ারদার নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫৭৩ ভোট। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে শিলু ও রেশমা নির্বাচিত হয়েছেন।
শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শিকদার মোশাররফ হোসেন সোনা পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪১০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের নায়েব আলী জোয়ারদার পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৫০ ভোট। তবে শৈলকুপা উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জাহিদুন্নবী কালু ও নিলুফা ইসমিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু। আর মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় ওই পদটি ছিল একবারেই নিয়ম রক্ষার ভোট।
আর সে কারণেই পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদটি নিয়েই চলছিল এবারের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনী ভোটযুদ্ধ। এ পদের প্রতিদ্বন্দ্বী দুজন প্রার্থীর মধ্যে বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগ নেতা শিবলী নোমানী ৬৪ হাজার ১০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত হাঁস প্রতীকের শাহানাজ পারভীন পেয়েছেন ৬৫ হাজর ৩১৫ ভোট।
কালীগঞ্জের ঈশ্বরবা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল: জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ১৫নং ঈশ্বরবা দাখিল মাদ্রসা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুর দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান এ তথ্য জানান।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও কালীগঞ্জ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল আলীম বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছিল। হঠাৎ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন ব্যক্তি এসে আমার সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে জোর করে সিল মেরে বাক্সে ভরে দেয়। বিষয়টি আমি জেলা রিটার্নিং অফিসারকে জানালে তিনি ভোটগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ দেন।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কিছু দুষ্কৃতিকারী কেন্দ্রে প্রবেশ করে জোর করে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মারতে থাকে। তারা আনুমানিক ৪৭৩টি জাল ভোট দিয়েছে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়। পরে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। এই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৮৯০টি ভোট রয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) ইউনুচ আলী বলেন, ‘জাল ভোট দেওয়ায় ঈশ্বরবা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে কেন্দ্রের নির্বাচনি সামগ্রী পুলিশ পিকআপে করে উপজেলা নির্বাচন অফিসে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে শৈলকুপায় সংঘর্ষ: কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও আনারস মার্কার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৮/১০ আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের অভিযোগ, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র নৌকার প্রার্থী নায়েব আলীর জোয়ার্দারের সমর্থকরা তার পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের ৮/১০ জন আহত হয়। এসময় ১০ মিনিটের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দীন বলেন, মির্জাপুর কেন্দ্রে হালকা একটু গোলযোগ হয়েছিল। তবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। সেখানে বিজিপি রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি ভালো।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, সকালের দিকে মির্জাপুর কেন্দ্রে একটু গোলযোগ হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিত শান্ত করেন। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। গোলযোগের সময় ভোট বন্ধের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
তিন ঘণ্টায়ও দেখা মেলেনি ভোটারের: ভোট শুরুর তিন ঘণ্টা পরও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা চাপরাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ভোটারের দেখা মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে পোলিং এজেন্ট প্রথম ভোটার হিসেবে ভোট দেন। এ কেন্দ্রে ৩১০০ ভোটার রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আরাপপুর নিউ একাডেমি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় মাত্র ১৮টি ভোট পড়েছে। এখানে ভোটার রয়েছে প্রায় ১৩০০। কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর কেন্দ্রে ৩৪০৪ ভোটের মধ্যে ১১টা পর্যন্ত ৬টি ভোট পেড়ছে। কালুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা পর্যন্ত মাত্র ৪০ জন তাদের ভোট দিয়েছে। এখানে মোট ভোটার ২৯৭৮ ভোট। এরমধ্যে কয়েকটি বুথে একটি ভোটও পড়েনি। শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় ঘণ্টায় ৩১২৭ ভোটের মধ্যে মাত্র দু’জন ভোট দিয়েছেন।
সাড়ে ৫ ঘণ্টায় ১০ ভোট: কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় মাত্র ১০ ভোট পড়েছে। ওই কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা খোস গল্পে মশগুল এবং আনসার সদস্যদের ফোনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এ চিত্র ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এম এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মহিলা ভোট কেন্দ্রের।
রোববার বেলা দেড়টার সময় কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তারা গল্পে মশগুল। এ ছাড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা ফোনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেলা দেড়টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ১ নং বুথে ২টা, ২ নং বুথে ০, ৩ নং বুথে ০, ৪ নং বুথে ১ ও ৫ নং বুথে ৭টি ভোট পড়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রটিতে সাড়ে ৫ ঘণ্টায় মাত্র ১০টি ভোট পড়েছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment