একুশে মিডিয়া, চট্টগ্রাম রিপোর্ট:
বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। দেবে গেছে ব্লক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাব ও নিম্নমানের কাজে বাঁধ ধসে যাচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাবে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৯ কোটি টাকা। ব্যয় বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা।পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের জন্য আলাদা একটি প্যাকেজ নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে দেবে যাওয়া বাঁধ ও ব্লক সংস্কার করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্লকের খারাপ মানের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারে না। চলতি বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ মনিটরিং কাজী তোফায়েল হোসেনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বাঁশখালী উপজেলার পোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি অংশের কাজের সিসি ব্লক বুয়েটের ল্যাবলেটরিতে পরীক্ষা করা হয়।
এতে বিভিন্ন প্যাকেজের তৈরিকৃত ব্লক অত্যন্ত নিম্নমানের এবং স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত। তাতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে তৈরিকৃত ব্লক কেন ল্যাবলেটরিতে পাঠানো হয়নি তা বোধগম্য নয়। ব্লকের খারাপ মানের জন্য মাঠ পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
তবে বাতিল করা ব্লক পরবর্তীতে রিভিউ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া।গত ২৮ জুলাই বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কাজের নিম্নমান এবং স্ফেসিফিকেশন বহির্ভূত সিসি ব্লক বাতিল তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কমিটির প্রধান হলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) ফজলুর রশিদ।
সদস্য সচিব করা হয়েছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিনকে। কমিরি সদস্য হিসেবে আছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (কন্ট্রাক এন্ড প্রকিউমেন্ট সেল) মো. হাফিজুল আলম।কমিটির সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাবে না।’গত রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের প্রেমাশিয়া ও কদমরসুল এলাকায় পরতে পরতে ভাঙন ধরেছে। দেবে গেছে বাঁধের বিভিন্ন অংশ। ভাঙা অংশে সিসি ব্লকও দেবে গেছে। সাধনপুর অংশেও একই অবস্থা। ছনুয়া অংশে এখনো বড় অংশে ব্লক বসানো হয়নি।
ছনুয়াঘাটের উত্তর অংশে ব্লক ক্ষয় হয়ে গেছে।প্রেমাশিয়া এলাকায় বাঁধের উপর বসে জেলেরা ইলিশ মাছের জাল মেরামত করছেন অনেক জেলে। মো. আলী, সামশুদ্দিন, আজমসহ কয়েকজন জেলে জানান, সাগর ও সাঙ্গু নদীর ভাঙনে তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে বহু আগে।
এখন বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন অনেকটা রোধ করা হয়েছে। তবে সাঙ্গু নদীর নোনাবালু দিয়ে ব্লক নির্মাণ ও কাজের নিম্নমানের কারণে বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। বাঁধ ও ব্লক দেবে যাচ্ছে।পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৯ কোটি টাকা।
২০১৫ সালে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ব্যয় ২০৯ কোটি থেকে বেড়ে ২৫১ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। প্রথম দফায় বেড়েছিল সাড়ে ৪২ কোটি টাকা। কাজের মাঝপথে এসে আরেক দফায় ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি টাকা। সময় বেড়েছে তিন দফা। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। চলতি বছর পুনরায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।পাউবো সূত্র জানায়, ২০১১-১২ সালের প্রকল্পের জরিপ করা হয়। ২০১৩ সালে বাঁধের নকশা চূড়ান্ত হয়।
তখনকার রিডিউস লেভেল ধরে (পানির চেয়ে সমতল ভূমি) নকশা ও প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। নদী ও সাগরের গতিপথ পরিবর্তন ও ভূমি স্তর কমে যাওয়ার কারণে বাঁধ উচু করতে হয়েছে।
ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।কাজের মান নিয়ে ট্রাস্কফোর্স কমিটি ও বুয়েটে একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বকোণের একটি সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পোল্ডার নং ৬৪/১এ, ৬৪/১বি ও ৬৪/১সি প্রকল্পের আওতায় বাঁশখালীর পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, গন্ডমারা ও ছনুয়া ইউনিয়নে ৩৬ প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে।
এরমধ্যে পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের প্যাকেজগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। ছনুয়া ও গন্ডামারা ইউনিয়নের কাজ শেষের দিকে। চলতি মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।২৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে আপৎকালীন হিসেবে এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করেছে, ঘূর্ণিঝড় ও উচ্চ জোয়ারের কারণে ক্ষয়ক্ষতির জন্য জরুরিভিত্তিতে কাজ করতে হয়। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও যাচাই-বাছাইয়ের পর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment