মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম:
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের মিনজিরীতলা অজোপাড়া গ্রাম। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারী ) রাত সাড়ে ৯টা । বাবা-মা-ছেলে-মেয়েরা একসাথে কাছারী ঘরে বসে রাতের খাবার সেরে নেন। এ অবস্থায় ওই ঘরে ২ বছরের শিশু মেয়ে লুপা আক্তার ঘুমিয়ে পড়ে। মো. মিরহাজ (১৩) মোবাইলে কাটুন দেখছিল। দুইজন কাছারী ঘরে থাকা অবস্থায় ওই ঘরের দরজা বাইর থেকে আটকে বাবা মো. ইদ্রিছ, মা রুবি আক্তার, বড় ছেলে হেফাজুল ইসলাম(১৬) ও অপর কন্যা পুস্পা আক্তার (৫) সবাই কাছারী ঘর ছেড়ে ২০ হাত দূরে তাদের মূল ঘরে যান। রাত ১০টায় প্রচন্ড বিস্ফোরণ ও দাউ দাউ আগুনের শব্দ পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখেন লুপা আক্তার (২) ও মো. মিরহাজ(১৩) মুর্হুতে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।
তাদের এ কাছারী ঘরের সাথে ইলিয়াছ ও আবুল কাশেম নামের দুই ব্যক্তির আরও ২টি ঘর ছিলো। ওই ২টি ঘরও মুর্হুতে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। ওই ঘরের লোকজন আগুন দেখে বের হয়ে যাওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। ৩টি ঘরেই ছিলো গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা, পাশাপাশি বসতেরও ব্যবস্থা। ৩টি ঘর পুড়ে আনুমানিক ২২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই স্থানীয়রা সনাতন পদ্ধতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। মো. ইদ্রিছ ও মো. ইলিয়াছ দুইজনই প্রবাসী, তারা একমাস আগে ওমান ও মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। আবুল কাশেম স্থানীয়ভাবে ব্যবসা করেন। অপরদিকে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া সন্তানদের লাশ দেখার পর থেকে মা রুবী আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তাদের মূল ঘরেই। কিছুক্ষণ পর পর মুর্ছা যাচ্ছেন। মো. মিরহাজ স্থানীয় বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে সহপাঠী ও প্রতিবেশিদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে এসেছে।
পোড়া বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শন করে পাড়ার লোকজনের সাথে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে, পোড়া ৩টি বাড়িতেই বসত করার পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডারে রান্নার কাজও হতো। লেখাপড়ায় তেমন একটা শিক্ষিত নয় গৃহবধূদের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের তেমন একটা প্রশিক্ষণ কিংবা ধারণা নেই। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাসের চুলার গ্যাস ছাড়ার সুইচ কোন কারণে খোলা ছিলো। ওই অবস্থায় বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালানোর জন্য সুইচ অন করলে সুইচের মধ্যে র্স্পাক করে গ্যাস আর স্পার্কের আগুনে মিশ্রণ হয়ে আগুন লেগে যায়। কেননা ওই ৩টি ঘরে অন্য কোন কারণে আগুন লাগার রহস্য খুঁজে পাচ্ছেন না ঘরের লোকজন।
বাঁশখালী উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। নিহত দুই জনের জন্য সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পোড়া বাড়িতে প্রতি পরিবারে ১০০ কেজি চাউল, ১০ লিটার তেল, আলু, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সরল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ৩টি পরিবারে আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা করে ১৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আরও সহযোগিতা করবেন।
No comments:
Post a Comment