মোহাম্মদ ছৈয়দুল
আলম:
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দরিদ্র
জনগোষ্ঠীর জন্য
সরকারের বরাদ্দকৃত টিসিবির পণ্য
এক
শ্রেণির অসাধু
সিন্ডিকেট মধ্যরাতে চুরি করে
স্থানীয় বাজারে
মুদির
দোকানে
বিক্রিকলে হাতেনাতে আটক করেন ট্রাক
চালক
হেলপার
ও
লেবারসহ চার
জনকে। প্রশাসনের উপস্থিতি টের
পেয়ে
মূল
ডিলারের প্রতিনিধি মারুফ
ও
রিয়াদ
পালিয়ে
যায়। এ
সময়
টিসিবির পণ্য
বোঝাইকৃত একটি
ট্রাক
জব্দ
করা
হয়। ট্রাকে
থাকা
জব্দকৃত পণ্যের
মধ্যে
রয়েছে
৩৬
কার্টন
সয়াবিন
তেল,
১৬
বস্তা
চিনি,
১৩
বস্তা
ডাল। যার
মূল্য
(টিসিবি
অনুয়ায়ী) ১
লাখ
৩০
হাজার
২৫০
টাকা।
এসব পণ্য বাহারছড়া ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ও সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমান উল্লাহ চৌধুরীর বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত ডিলার আমান উল্লাহ চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত মো. মারুফুল হক ও রাহাদুল আলম রিয়াদ পালিয়ে গেলেও ট্রাক চালক, হেলপার ও শ্রমিকসহ মোট চারজনকে আটক করেছেন প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে সাধনপুর ইউনিয়নের পূর্ব বৈলগাঁও এলাকা থেকে টিসিবির পণ্য বোঝাইকৃত ট্রাকসহ তাদের আটক করে প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয় সাংবাদিক ও বাসিন্দারা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাঁশখালী প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা জানতে পারে, বাহারছড়া ইউনিয়নের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের ভর্তুকিমূল্যে বরাদ্দকৃত টিসিবি পণ্য ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন থেকে দুটি ট্রাকে করে প্রধান সড়কের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন দোকানে রাতের আঁধারে বিক্রির উদ্দেশ্যে। সাংবাদিকরা উপজেলা প্রশাসনকে জানালে মধ্যরাতে সময় বাঁশখালীর থানা পুলিশসহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় গুনাগরীস্থ আলম স্টোরে টিসিবির পণ্য বিক্রিকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করলে মারুফ ও রিয়াদ নামের দুই ব্যাক্তি সাংবাদিকদের উপর হামলার চেষ্টা করেন, পরে পণ্য বোঝায়কৃত ট্রাকটি গুনাগরী ত্যাগ করে প্রধান সড়ক হয়ে প্রধান সড়কে দূরত্ব গতিতে পালিয়ে যায়, এতে পিছনে পিছনে রয়েছেন সাংবাদিকরা, গাড়ীটি সাধনপুর আল ফারুক মাদ্রাসা সংলগ্ন অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, সাংবাদিকদের লক্ষ্য বুঝতে পেরে গাড়ী থাকা ডিলারের প্রতিনিধি মারুফ একাধিক ব্যাক্তির সাথে ফোনে কথা বলেন, পরে সে গাড়ী থেকে মেনে নিজেকে সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দাবী করে সাংবাদিকদের হুমকি-ধুমকি দিতে থাকেন। অবশেষে মারুফ নামের লোকটি মহিলা আওয়ামী লীগের একনেত্রীর সাথে ফোনে কথা বলার জন্য সাংবাদিকদের বলেন। নেত্রী সাংবাদিকদের বলেন যে, আপনাদের কি সমস্যা? আপনাদের সমস্যা থাকলে কাল সকল ১০টায় উপজেলায় আমার সাথে দেখা করেন, কি জন্য দেখা করবো প্রশ্নের জব্বাবে তিনি বলেন, পণ্যগুলো আমার দোকানে বিক্রি করি, আপনার কি সমস্যা, আমি কি কামাল ভাইকে ফোন দেব? নাকি আরো উপরে ফোন দেব? উত্তরে সাংবাদিক বলেন, আপনার সেখানে উচ্ছা সেখানে ফোন দিন ধন্যবাদ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, টিসিবির পণ্যের ডিলার মেসার্স আমান এন্ড ব্রাদার্সের দুটি ট্রাক মধ্যে একটি বৈলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন থেকে আটক করতে সক্ষম হন অপরটি পালিয়ে যায়।
এ সময় বিষয়টি বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরীকে অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।
এসময় ট্রাকে থাকা বৈলগাঁও এলাকার সেহাবুল হক (প্রকাশ চা সেহাবুল হক) এর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা দাবীদার মো. মারুফুল হক ও বাণীগ্রাম এলাকার তৌহিদুল আলমের ছেলে রাহাদুল আলম রিয়াদ সাংবাদিকদের হামলার চেষ্টা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাঁশখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জসীম উদ্দিন বলেন, টিসিবির পণ্য চুরি করে রাতের অন্ধকারে গুনাগরীতে আলম স্টোর নামক একটি দোকানে বিক্রি করা হচ্ছিল। এ সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতা দাবীদার মারুফ। পরে ট্রাক চাপা দিতে চায়। এসময় সে বারবার বাঁশখালী উপজেলা মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিরা মনির সাথে কথা বলিয়ে দিতে চাচ্ছিল। এসময় সে বলে, মালামাল সরকারি, আমরাও সরকারি মানুষ। আপনারা কারা? আপনারা কিসের সাংবাদিক?’
জানা যায়, এ ঘটনায় জড়িত মো. মারুফুল হক বাঁশখালী মহিলা যুবলীগের সাধারণ হীরা মনির মামাতো ভাই। সেই সুবাদে হীরা মনির নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে আসছিলেন মারুফ।
আটক ট্রাক চালক ও হেলপার জানান, বাহারছড়া থেকে টিবিসির পণ্যগুলো নিয়ে এসেছেন তারা। মারুফ ও রিয়াদ নামের দুই যুবক গাড়ি ভাড়া করেছেন। ১ সপ্তাহ আগেও দুই ট্রাক মাল বিক্রি করেছেন তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাহারছড়া ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী ও সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যে মালামালগুলো জব্দ করা হয়েছে এসব আমার নয়। আমি গতকালকে বাহারছড়ায় মালামাল বিতরণ করেছি। আমার কাছে ডকুমেন্টস আছে। আপনি উপজেলা সদরে আসলে প্রত্যয়নপত্রসহ সব কাগজ দেখাতে পারবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘টিসিবির পণ্য অবৈধভাবে বিক্রির সময় একটি ট্রাক জব্দ করেছি। এ সময় টিসিবির পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। মালামালসহ জব্দকৃত ট্রাক বাঁশখালী থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জব্দ করা টিসিবির পণ্যগুলো বাহারছড়া ইউনিয়নে বিতরণের জন্য বরাদ্দ ছিল। বাহারছড়ার ডিলার এগুলো বিতরণ না করে মুদি দোকানে বিক্রি করছিলেন। যাদেরকে আটক করেছি, তারা জানিয়েছেন, এ কাজে ডিলার জড়িত। এর দায় ডিলারকে নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment