একুশে
মিডিয়া, প্রতিবেদক:ই-একুশে মিডিয়া
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মানুষের দীর্ঘ দাবি ছিলো টেকসই বেড়িবাঁধ,অবশেষে বাঁশখালীর মানুষের স্বপ্ন পূরন হলেও সমুদ্রের আগ্রাসন ও পানির স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে খানখানাবাদের কদমরসুল পয়েন্টের প্রায় ১ কি.মি. সিসি ব্লক বেষ্টি বাঁধ, সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে বার বার নির্বাচিত সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ।
২১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতের খানখানাবাদ পয়েন্টে কদমরসুল উপকূল বেড়িবাঁধ পানির স্রোতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাটি পরিদর্শন করেন আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার, চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবুল হক চৌধুরী, খানখানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা আবুল কালাম, জেয়াবুল হক, আব্দুল খালেক, মোঃ আরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, সকালের সময় প্রতিনিধি মুহাম্মদ দিদার হোসাইন, জনবাণী প্রতিনিধি মোহাম্মদ এরশাদ, সাংবাদিক আনোয়ারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।
বাঁশখালীর মানুষের একমাত্র প্রাণের দাবী ছিলো উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, এরই প্রেক্ষিতে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সম্প্রতি সংসদে বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবীর কথা উত্থাপন করেন তিনি।
এতে উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সম্প্রতি ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল। বিগত ১৯ মে ২০১৫ সালে ওই প্রকল্পটি পাস হয়। দীর্ঘ কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছিল, যাহার আওতায় ছিলো বঙ্গোপসাগর বেড়িবাঁধ ও সাঙ্গু নদীর বাঁধের প্রায় ১৪ কি.মি পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ। ওই প্রকল্পের প্রায় ১০ শতাংশ কাজ গত ২০২২ সালে শেষ হলেও দুই এক বছর যেতে না যেতেই খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় প্রায় ১ কি মি. সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের বেশ কিছু অংশ সমুদ্রের প্রবল স্রোতে তলিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি সেই বাঁধের সিসি ব্লক ও নির্মাণ কাজের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে।এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সিসি ব্লক সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে আরো প্রায় ৬'শ মিটারের অধিক বাঁধ বিলীনের শঙ্কাও রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কতৃপক্ষ তলিয়ে যাওয়া বাঁধে বালুভর্তি জিওব্যগ বসানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা পানির প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ভাঙন নীতি। বাঁধের মাত্র কয়েকশ মিটার দূরবর্তী অংশে সমুদ্রে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ড্রেজার পাইপলাইনের মাধ্যমে জিওব্যাগে বালুভর্তি করে ভাঙন রোধ করতে জিওব্যাগ বসানো হচ্ছে। তবে দ্রুত এই ভাঙন রোধ করা না গেলে অবশিষ্টাংশের সিসি ব্লক গুলো যে কোনো মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা করছে অনেকে। দীর্ঘস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া না হলে বাঁধ বিলীন হয়ে খানখানাবাদের কদমরসুলসহ পুরো এলাকা মুহূর্তেই প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, কদমরসুল এলাকার প্রায় ১ কি.মি. বাঁধ তলিয়ে ও ধসে গেছে। বিষয়টি আমি এমপি মহোদয়কে জানিয়েছি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাঁধ ভাঙন রোধ করতে বালুভর্তি করে জিওব্যাগ বসাচ্ছে। তবে কিছুতেই ওই জিওব্যাগ গুলোর ঠাঁই হচ্ছে না সেখানে। কদমরসুল থেকে সামান্য পশ্চিমে বিশাল বালু চর জেগে উঠার কারণে পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতে সমুদ্রের পানির স্রোতধারা একনাগাড়ে কদমরসুল উপকূলের বেড়িবাঁধের দিকে পড়ছে। যার ফলে বাঁধের গোড়ার মাটি পানির স্রোতে সরিয়ে যাওয়াতে সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের প্রায় ১ কি.মি.বাঁধ তলিয়ে এবং ধসে পড়েছে। জেগে উঠা চরের বালু গুলো দ্রুত নিষ্কাসন করা না হলে অথবা (ওই চরের) বালু গুলো উত্তোলন করা না হলে পানির স্রোত কোন ভাবেই রোধ করা সম্ভব হবেনা। আর পানির স্রোত রোধ করতে না পারলে ভাঙন রোধ করাও সম্ভব হবেনা। তাই ওই চরের বালু গুলো দ্রুত নিষ্কাসন করতে কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন জসিম হায়দার।
পরিদর্শনকালে সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঁশখালীর মানুষের প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিতে বলেছি, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার কথা রেখেছেন। অনেক কষ্ট করেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের প্রকল্প নিয়েছিলাম, এতে কাজও হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে কদমরসুল উপকূলের পশ্চিমাংশে বিশাল বালু চর জেগে উঠার কারণে পানির স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে।পানির স্রোতধারা একনাগাড়ে কদমরসুল উপকূলের দিকে পড়ার কারণে বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
যার ফলে সিসি ব্লক বেষ্টিত কদমরসুল উপকূল এলাকার বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাচ্ছে। খবর পেয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি, এরপর তারা বালুভর্তি করে জিওব্যাগ বসিয়ে ভাঙন রোধ করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও পানির স্রোতের গতিপথ স্বাভাবিক করতে এবং বাঁধ ভাঙন রোধ করতে কদমরসুল উপকূলের উত্তর পশ্চিমাংশে সমুদ্রে জেগে উঠা চরের বালু অপসারণ করা খুবই জরুরি, তাই এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের সাথে আমি কথা বলেছি কিভাবে জেগে উঠা চরের বালু দ্রুত অপসারণ করা যায়। এসময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাকে বলেন, আপনারা বিআইডব্লিউটিএ এর সাথে সমন্বয় করে জেগে উঠা ওই চরের বালু গুলো দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করেন। যাতে বাঁশখালীর উপকূলের মানুষের বাড়িঘর সমুদ্রের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা যায়।
No comments:
Post a Comment