শিক্ষিকা হাবিবা যখন বৃক্ষপ্রেমী - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Saturday 3 April 2021

শিক্ষিকা হাবিবা যখন বৃক্ষপ্রেমী

হাসনাইন আহমেদ হাওলাদার:

প্রকৃতি গাছপালা প্রত্যেকটি মানুষকে কাছে টানে। প্রকৃতিতে সবুজের ছোঁয়া মানুষের মন বিগলিত করে দেয়। সে কারনে প্রতিটি মানুষ প্রকৃতি, গাছপালা, ফুল-ফল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালোবাসে। 

এর মধ্যে কিছু মানুষের প্রকৃতির প্রতি দূর্বলতা যেন ভিন্ন মাত্রায়। সেইসব মানুষ গুলো তাদের নিজের শখ মিটাতে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়ে তা লালন পালন করেন। আবার সেগুলোকে নিজের সন্তানের মত আদর করে, সে গাছের একটি পাতাও যদি অন্য কেউ ছিঁড়ে সেটা যেন তাকে আঘাত করে। যদি কোনো গাছের ডাল ভেঙে যায় তাহলে যেন শোক পড়ে যায় তার। এটি সত্যিই প্রকৃত একজন গাছ প্রেমী মানুষের বৈশিষ্ট্য। এমনই একজন গাছ প্রেমী সৌখিন মানুষ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ড্যাফোডিল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা হাবিবা আক্তার (মিনজু)

বোরহানউদ্দিন পৌর ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় নিজ বাসার বড় একটি ছাদে তিনি প্রায় কয়েক বছর হলো বাগান শুরু করেছেন। সরেজমিনে তার ওই ছাদ বাগানে যেতেই সবুজের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যেনো এক অন্যরকম অনুভুতি যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা। ছাদের যেদিকে চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ছাদের সাজানো বাগান। ছাদের পাশাপাশি বাড়ির চারপাশের বেলকোনেও ঝুলছে ঝুলন লতা। ফুটেছে নানান রঙের ফুল।
তাঁর এই বাগানে রয়েছে শাপলা, গোলাপ, জবা, বেলি, টগর, রজনীগন্ধা, কাঠগোলাপ, এডেনিয়াম, জলগোলাপ, লিলিয়াম, হাজারীগোলাপ, গ্লাডিওলাস, কামেনী, রঙন, অলকনন্দা, পর্তুলিকা, নয়নতারা, ল্যানটিনা, কাটামুকুট, ডায়ান্থাস, অপরাজিতা, মিনিয়েচার কাটা মুকুট, থাই টগর সহ নানান জাতের ফুল গাছ। রয়েছে বিভিন্ন জাতের ফল গাছও। এছাড়াও তিনি ছাদে বিভিন্ন জাতের সবজীও চাষ করে থাকেন।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- শিক্ষিকা হাবিবা আক্তারের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১২ জাতেরও বেশি গোলাপ আর ২৫ প্রজাতির অন্যান্য ফুল গাছ। যেগুলোর সৌন্দর্য চোখ ফেরাতে দেয়না, দেখলে যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যায়।

তবে সবচেয়ে সচেতনতার বিষয় হচ্ছে- তিনি মাটিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সারই কিন্তু প্রয়োগ করে থাকেন। নানান জাতের এই ফুলের চারা সংগ্রহের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রত্যেকটা গাছ সংগ্রহের পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগ, কষ্ট আর শ্রম। যখন যেখানেই তিনি যান সেখানেই তার পছন্দের গাছটি খোঁজেন। কখনো বাসে, কখনো লঞ্চে করে জার্নি করে বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি গাছ কিনে আনেন। পর্যন্ত তিনি তার বাগানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন।

এছাড়া সারা বাংলাদেশে অনলাইনের মাধ্যমেও তিনি গাছ কিনে থাকেন। এক কথায় গাছ তার নিজের সন্তানের চেয়ে কমনয়। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, একবার তিনি অনলাইনে চারাগাছ অর্ডার করে নাহিদ নামক এক প্রতারকের ফাঁদে পড়ে প্রায় দশ হাজার টাকাও হারিয়েছেন।
হাবিবা আক্তার জানান, শুধু তিনি তার বাসায় নন স্কুলেও একই ভাবে গাছ লাগানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তার নিজের বাগান থেকে গাছ নিয়ে নিজে পরিশ্রম করে তার কর্মরত স্কুলেও গাছ লাগিয়েছেন। সেই বাগানে এখন ফুল ফুটেছে। তিনি বলেন স্কুল বন্ধ না থাকলে এতদিন তিনি স্কুলকেও সবুজে ঘেরা ছায়ানীড় করে তুলতেন। হাবিবা আক্তার বলেন, আল্লাহ যখন করোনা নামক এই অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্ত করে আবার স্কুলে ফেরত নিয়ে যাবে, তখন তিনি তার স্কুলের পরিকল্পনা কে পরিপুর্ন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে।

এব্যাপারে ড্যাফোডিল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ হাসনাইন বলেন, মিসেস হাবিবা একজন কোমল হৃদয়ের মানুষ। তার বৃক্ষ পালন এবং ফুলের বাগানের পরিচর্যার বিষয়টি প্রায়ই আমাকে বলতেন। আমিও এতে খুব আগ্রহী হতাম। উনি একজন বৃক্ষপ্রেমীই নয় বরং মানব প্রেমীও বটে। মানবতার সেবায় রয়েছে তার অসামান্য অবদান। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি রয়েছে তার যথেষ্ট স্নেহ মমত্ববোধ। সত্যিই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল।

বাগান বিষয়ে এত আগ্রহ কেন? এই প্রশ্নের জবাবে হাবিবা আক্তার বলেন, আসলে ছোট বেলা থেকেই তিনি যেখানে যতটুকু জায়গা পেতেন গাছ লাগিয়ে দিতেন। তার লাগানো বিভিন্ন জাতের গাছ তার আঙ্গিনায় এখোনো শোভা ছড়িয়ে রয়েছে।

গাছের যত্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বিদ্যালয় যখন খোলা ছিলো তখন বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফিরে তিনি তার বাগানে গভির রাত্রী পর্যন্ত কাজ করেছেন। এখন বিদ্যালয় বন্ধ তাই গাছের পরিচর্যায় সময় কাটান। এছাড়া কখনো প্রচন্ড তীব্র রোদে, কখনো বা বৃষ্টিতে ভীজে - ঘন্টা ধরে বাগানের যত্ন নেন। সবকিছু মিলে মনে হয় সে একজন বৃক্ষ মানব। তিনি সকলের উদেশ্যে বলেন আসুন আমরা বেশি বেশি করে গাছ লাগাই, বাগান করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সবুজের সমারোহে গড়ে তুলি

 

 

একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages