ছবি : সংগৃহীত
একুশে মিডিয়া, বিশেষ রিপোর্ট:
অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই দিয়া যখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন তার হাতে ছিল একটি বাহারি রঙের ছাতা। রোদ/বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য তার মা ছাতাটি তাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই গাড়ি চাপায় সব শেষ। ফ্লাইওভারের গা ঘেষে পড়ে যায় ‘রক্তাক্ত দিয়ার’ নিথর দেহ, পাশেই পড়েছিল সেই ছাতাটি।
মেয়েকে যেখানটায় বাস পিষে দিয়ে গেছে; সোমবার (৩০ জুলাই) সকালে সেখানটায় বসে মেয়ের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ছাতার অংশ ধরে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে দিয়ার বাবা।
সাংবাদিকদের আবেগাপ্লুত হয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এটাতো দুর্ঘটনা না। এটা তো হত্যা?
মীমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকিরও পেশায় বাসচালক। তিনি ২৭ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালান। ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে একতা পরিবহনের চালক তিনি। বাসের চাকায় আদরের মেয়েকে হারিয়ে এই বাবা কখনও বিলাপ করছিলেন, কখনও রাগে-ক্ষোভে আবার চিৎকার করছিলেন।
বলছিলেন, ২৭ বছর ধইরা বাস চালাই, একটা অ্যাক্সিডেন্টও করিনি। আর সেই বাসই কেড়ে নিল আমার মেয়ের প্রাণ।
এই কষ্টে আর বাসই চালাবেন না বলে জানান শোকাহত জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ঢাকায় যারা বাস চালায়, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নাই। হেলপাররা এক বছর পরই চালক হয়ে যায়। তিনি চালকের প্রশিক্ষণ দিতে চান। যাতে আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।
রবিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর একজন দিয়া খানম ওরফে মীম।
বাসচাপায় প্রাণহানির ঘটনায় গতকাল রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করছেন নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম।
এদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ক্ষমাপ্রার্থনা, বাসচালকদের গ্রেফতার, লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে সোমবার (৩০ জুলাই) বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেয় তারা।
অপরদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘পদত্যাগ সমাধান নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ। সরকার সেটাই করবে। একুশে মিডিয়া।’
No comments:
Post a Comment