একুশে মিডিয়া, ডেক্স:ই-একুশে মিডিয়া
কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি তা নিয়ে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। দেশের সবচেয়ে বড় সাংবিধানিক এই পদে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে জোর গুঞ্জন। সরকারি দলের মনোনিত প্রার্থীই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন তা অনেকটা নিশ্চিত। মূলত- সেই কারণে সরকারি দলের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদে সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার নাম আলোচনা হলেও চট্টগ্রামবাসী স্বপ্ন দেখছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে। যদিও বিষয়টি নিয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রের কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং একজন সাবেক উপাচার্য ও দুইজন বিচারপতির নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আছে।
বিষয়টি অনেকটা দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করায় দলের কোনো পর্যায়ের নেতারা এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। তবে মোশাররফ হোসেন যেহেতু একজন বর্ষীয়ান নেতা ও রাজনৈতিক মহলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং কখনো আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা প্রশ্নে আপস করেননি, সেহেতু দলীয় প্রধান তাঁকে বিবেচনা করতে পারেন বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা।
তাঁর অনুসারীরা বলছেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তিনি কখনোই দলের বিরুদ্ধে যাননি। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নানা লোভনীয় প্রস্তাব তিনি বার বার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ১৯৭৫-পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহ্বান তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের আদর্শে অবিচল থেকেছেন। লোভ-লালসা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। দীর্ঘ জীবনে দেশ, মানুষ আর আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। প্রতারণা, ভণ্ডামি, শঠতাকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। দল তাঁকে মন্ত্রী বানালে দলের হয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন। আবার মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার পরও তিনি কখনো দল ও দলীয় প্রধানের আস্থা হারাননি। তা ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনের আগের প্রেক্ষাপটে এমন একজনকে দরকার যিনি সব অবস্থায় দলের হয়ে লড়বেন।
এ বিষয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বাংলানিউজকে বলেন, মোশাররফ ভাইয়ের নাম রাষ্ট্রপতি পদে শোনা যাচ্ছে। যদি হয়, এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব ও গৌরবের বিষয়র। তিনি রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের সুসময় ও দুঃসময় দলের প্রতি আনুগত্য রেখে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রদেশিক পরিষদের একবার ও ছয়বার জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জন্য তিনি জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত ছিলেন। মোশাররফ ভাইয়ের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সব ধরণের গুণ রয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মোশাররফ ভাই প্রজ্ঞাবান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। রাজনীতির ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে একটি পর্যায়ে এসেছেন। তিনি যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে সত্যিকার একজন রাজনীতিবিদের মূল্যায়ন হবে বলে আমি মনে করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিষয়টা পুরোটাই নির্ভর করছে দলীয় প্রধানের ওপর। তবে মোশাররফ ভাইয়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে দেশের অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী তিনি। বারে বারে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগ পেয়েও গ্রহণ করেননি। এগুলো বিবেচনায় আসতে পারে। ’
বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৬৬ সালে ছয় দফায় যোগ দিয়ে মোশাররফ হোসেন পুরোদস্তুর রাজনীতিক বনে যান। ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ এবং ১৯৯৬ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব ছাড়াও আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন, বিমান-পর্যটন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো, জনমুখী প্রকল্প গ্রহণ, দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সামনের কাতারে ছিলেন মোশাররফ। সরকারিভাবে বাজেট-বরাদ্দ ছাড়াও তার বাবা এস রহমানের নামে গঠিত ট্রাস্টের মাধ্যমে নিজ উদ্যোগেও তিনি মীরসরাইয়ে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। একুশে
মিডিয়া’র সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment