দিদার হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে রেজিস্ট্রেট দলিল মূলে দীর্ঘ দেড়যুগের অধিক ভোগদখলে থাকা জায়গার মালিককে দখল উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে বসতঘর ভাংচুর করে মালামাল লুটসহ ভাড়াঘরে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তালা লাগিয়ে দিয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সন্ত্রাসীরা প্রাণে মারার হুমকি অব্যাহত রাখায় আতংকে দিনাতিপাত করছে ভুক্তভোগী পরিবার।
ঘটনাটি উপজেলার উত্তর জলদীর রুহুলাপাড়া এলাকায় ঘটেছে,নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভুক্তভোগী মালতী সুশীলের পরিবার।
৮ মে (সোমবার) সকাল ১০ টার দিকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দ্বারা জায়গা পরিমাণ করার কথা থাকায় অভিযুক্তরা পূনরায় দ্যা,কিরিচ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের উপর হামলা করার জন্যে ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। এসময় পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হলেও তাদের কয়েকজন লোক ক্ষুদ্ধ হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলে এখানে সাংবাদিকদের কাজ কি? সাংবাদিকরা কেন আসছে?এইসব কথা বলতে থাকে তারা।এসময় সাংবাদিকরা ভিডিও ও ছবি তুলতে চাইলে ওই সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ছবি,ভিডিও করতে বাঁধা দিতেও দ্বিধা করেনি।পরে আগত সার্ভেয়ার দ্বারা নালিশী জায়গা পরিমাণ করা হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পারিবারিক সুত্রে জানা যায়,বিগত ২০০৭ সালের ১২ নভেম্বর তারিখে উত্তর জলদী গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার বাবুল সুশীলের স্ত্রী মালতী সুশীলের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ৪১৭৪ নং সাব কবলা মূলে ১৩ গণ্ডা ১ কড়া ১ ক্রান্তি দখলীয় জায়গাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখলস্থিত থাকিয়া ওই জায়গার কিছু অংশে বসতঘরসহ ভাড়াঘর নির্মাণ করে এবং অবশিষ্ট জায়গার কিছু অংশ নাল ও পুকুরে মাছে চাষ এবং পুরো এরিয়াতে আম,কাঁঠাল, কলা ও লিচুসহ নানা ধরনের ফলজিগাছ নিয়ে বেষ্টিত ওই জায়গাতে ভোগদখলে স্থিত আছে মালতী সুশীল।
এরই মধ্যে বিশেষ টাকার প্রয়োজন হওয়াতে ওই জায়গা থেকে সাড়ে ৫ গণ্ডা জায়গা একজনের কাছে বিক্রি করে দখল বুঝিয়ে দিয়েছে মালতী, যাহাতে ওই খরিদা মালিক বর্তমানেও দখলে আছে।দীর্ঘ দেড়যুগের অধিক সময়কাল পর্যন্ত ওই ঘরে ভাড়াটিয়া কয়েকটি পরিবারসহ ও নিজের বসতঘরে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করলেও চেচুরিয়া কে. বি বাজার এলাকার টুটুন চক্রবর্তী ও অন্যান্য অভিযুক্তরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে মালতী সুশীলের ভাড়াটিয়াদের প্রাণেমারার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, এসময় মালতীর স্বামী বাবুল সুশীল বাঁধা দিলে তাকে মারধর করে তারা এবং ঘরভাংচুর করে ওই ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
এব্যাপারে মালতী সুশীল তাঁর স্বামী বাবুল সুশীল বলেন,আমাদের দলীলি জায়গাতে দীর্ঘ দেড়যুগের অধিক দখলে থাকিয়া বসতঘর ও ভাড়াঘর নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করিতেছে,কিন্তু বিগত ২/৩ মাস পূর্বে একই উপজেলার চেচুরিয়া কে.বি বাজার এলাকার ননী গোপাল চক্রবর্তীর পুত্র টুটন চক্রবর্তী,দক্ষিণ জলদির মৃত চিন্তাহরণ চৌং এর পুত্র অশোক চৌং,নজির আহমদের পুত্র সব্বির আহমদ,শাহ আলমের পুত্র মোঃ জসিম উদ্দিন, মৃত্যু আব্দুস সালামের পুত্র আব্দুল জলিল নামের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তাদের আরো ২০/৩০ জনের সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন হঠাৎ করে আমাদের জায়গা জবর দখল করার লক্ষ্যে আমাদের নির্মাণকৃত ভাড়া ও বসতঘরে বেআইনি অস্ত্র-সস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা ও দা,কিরিচ নিয়ে আমাদের উপর হামলা করেছে,এসময় তারা আমাদের ভাড়াটিয়া কয়েকটি পরিবারকে ভাড়াঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালাবদ্ধ করে দিয়েছে।এসময় ওই সন্ত্রাসীরা ৩০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্থের আমাদের একটি বসঘর ভাংচুর করে ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।এছাড়াও রান্নাঘর, গোয়ালঘর পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে তারা।এসময় আমি ৯৯৯ তে কল দিয়ে আইনীসহায়তা চাইলে বাঁশখালী পুলিশ সেকেন্ড অফিসার রাজীব পোদ্দার এবং এএস আই আজিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসলেও এবিষয়ে আমি বাঁশখালী থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি কামাল উদ্দিন আমার অভিযোগ খানা না নিয়ে কয়েকদিন পরে থানা যেতে বলেছে এবং কয়েকদিন পরে তিনি মামলার এজাহার নিতে পারবে বলে আমাকে পাঠিয়ে দেন।
তাই আমি উপায়ান্তর না দেখে পুলিশ সুপার বরাবরসহ বিভিন্ন প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরে আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জায়গা সংক্রান্তে ন্যায় বিচারের দাবিতে ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি।
এছাড়াও ওই জায়গা সংক্রান্তে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও নিয়েছে জায়গার মালিক মালতী সুশীল।বর্তমানে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা মদপান করে আমি ও আমার পরিবারকে প্রাণে মারার হুমকি- ধমকি দিচ্ছে এবং জায়গা জবরদখল করার জন্যে পাহাড়া দিয়ে রাখছে বলেও জানান ভুক্তভোগী পরিবার।এসময় বাবুল সুশীল ও তাঁর স্ত্রী মালতী সুশীল আরো বলেন, সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা এখন নিরাপত্তাহীন হয়ে দিনাতিপাত করছি।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে মালতীর বসতঘর ও ভাড়াঘরে দরজায় সন্ত্রাসীদের দেয়া তালা ঝুলতে দেখা গেছে এবং ঘরভাংচুর করে নিয়ে যাওয়ার সকল দৃশ্যও বিদ্যামান রয়েছে।সন্ত্রাসীদের আক্রমণ ও জায়গা জবর দখল থেকে বাঁচতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে আকুতি জানান ভুক্তভোগী মালতীর পরিবার।
এবিষয়ে অভিযুক্ত টুটন চক্রবর্তী বলেন,আমাদের দলীলের জায়গা দাবি করছি,জবরদখল চেষ্টা নয়। মালতী আদালত থেকে যে নিষেধাজ্ঞা নিয়েছে তা আদালত আবার স্থগিত করেছে। স্থগিত করার কি ডকুমেন্টস আছে তা জানতে চাইলে,স্থগিত আদেশ পাওয়ার প্রার্থনায় আদালতে আবেদন করার কিছু কাগজ দেখালেও স্থগিত আদেশ পাওয়ার যথাযথ কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি টুটন চক্রবর্তী।ঘর ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করেই বিষয়টিকে এড়িয়ে চলে যায়।
বাঁশখালী থানা সেকেন্ড অফিসার রাজীব পোদ্দার জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে আদালতে বেশ কয়েকটি আছে,তাদের উভয় পক্ষকে পরস্পর সমন্বয় করার কথা বলেছি,যাতে কোন ঝামেলায় না জড়ায়,সোমবার দু'পক্ষের প্রতিনিধি নিয়োগ করে নালিশী জায়গাটি সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment