পশ্চিমা প্রভাব নাকি দেশীয় সংস্কৃতি? ১৪ই ফেব্রুয়ারির সত্যিকারের রূপ - একুশে মিডিয়া একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

ক্লিক করুন

Breaking News

Home Top Ad

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Thursday, 13 February 2025

পশ্চিমা প্রভাব নাকি দেশীয় সংস্কৃতি? ১৪ই ফেব্রুয়ারির সত্যিকারের রূপ

মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম:

প্র

তি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি এলেই বিশ্বব্যাপী ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা বিশ্বে এই দিনটি মূলত ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পরিচিত হলেও, বাংলাদেশে এর গুরুত্ব বহুমাত্রিক। এই দিনে তরুণ-তরুণীরা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে আনন্দে মেতে ওঠেন, একে অপরকে ফুল, উপহার শুভেচ্ছা জানান। তবে এই দিনটি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়; পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি মানবতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশেরও একটি দিন। ধর্মীয় নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অনেকে এই দিনটির উদযাপনকে ভিন্নভাবে দেখেন।

 

বিশেষ দিনগুলোর সমাবেশ:

১৪ই

 ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হয়। এটি জাতীয় বইমেলার অন্যতম প্রাণবন্ত দিন, যেখানে হাজারো বইপ্রেমী একত্রিত হন নতুন বইয়ের সন্ধানে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সঙ্গে এই দিনটির সংযোগ এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।

এছাড়া, ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে "আন্তর্জাতিক বই উপহার দিবস" (International Book Giving Day) হিসেবেও পালন করা হয়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা বহন করে এই দিবসটি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে শিশু তরুণ সমাজের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।

 

সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ততা:

বাং

লাদেশে ১৪ই ফেব্রুয়ারির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পহেলা ফাল্গুন বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন হিসেবে এই দিনটি রঙে, গানে উৎসবে ভরে ওঠে। ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন স্থানে ফুলের মালা, হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে সজ্জিত মানুষ বসন্তকে বরণ করে নেয়। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক অপূর্ব বহিঃপ্রকাশ।

এছাড়াও, ১৪ই ফেব্রুয়ারির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হলো শহীদ মিনার ভাষার মাসের অংশ হিসেবে এই দিনে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে অনেকে ভালোবাসার প্রকৃত অর্থকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। ভাষা শহীদদের প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতির চেতনার উন্মেষ ঘটে, যা এই দিনের আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক।

 

আধুনিক সমাজে দিবসগুলোর প্রভাব:

ছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে, পহেলা ফাল্গুন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বইমেলা একসঙ্গে একত্রিত হয়েছে, যা তরুণ সমাজের মাঝে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব নিয়ে বিতর্কও দেখা যায়। একদল মনে করেন, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই, এটি প্রতিদিনের অনুভূতি হওয়া উচিত। অন্যদিকে, কিছু গোষ্ঠী ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে "মাতৃ-পিতৃ পূজন দিবস" হিসেবে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছে, যা পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্ব দেওয়ার এক নতুন ধারা হিসেবে দেখা যেতে পারে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে মনে করেন, এই দিনটি বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।

 

পক্ষে বিপক্ষে মতামত:

মাজের একাংশ মনে করেন যে, ১৪ই ফেব্রুয়ারি তরুণদের মধ্যে ভালোবাসার মানসিকতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং এটি সম্পর্কের মাঝে আরও আন্তরিকতা সৃষ্টি করে। এটি সামাজিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন মানবিকতার প্রসার ঘটায়।

অন্যদিকে, বিপক্ষ মতাবলম্বীরা বলেন, এই দিনটি পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব এবং ভোগবাদী মনোভাবের প্রতিফলন, যা তরুণদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুলতা অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ায়। তাদের মতে, ভালোবাসা সংস্কৃতি পালন একটি নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাবছর হওয়া উচিত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ কেউ এটিকে অপসংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী মনে করেন।

 

নাগরিক রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান:

না

গরিক সমাজে এই দিনটি উদযাপন নিয়ে ব্যাপক মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ দিনটিকে উদযাপনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি মূল্যবোধের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর কিছু অংশ এই দিনটির বিরোধিতা করে থাকে এবং নৈতিক দিক থেকে তরুণদের সচেতন করার আহ্বান জানায়।

রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই দিনটিকে সরাসরি স্বীকৃতি দেওয়া না হলেও, পহেলা ফাল্গুন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা এবং একুশে বইমেলার উদযাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সরকার প্রশাসনের তরফ থেকে তরুণদের সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা বইমেলার প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হয়। তবে, জনসাধারণের নিরাপত্তা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা থাকে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

 

উপসংহার:

১৪ই

 ফেব্রুয়ারি এখন আর কেবলমাত্র ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়; এটি ভালোবাসার, বইয়ের, বসন্তের, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনের দিন। বাংলাদেশে এই দিনটি পশ্চিমা দেশীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণে নতুন রূপ পেয়েছে। আমাদের উচিত একে সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার পাশাপাশি ভালোবাসার প্রকৃত অর্থপরিবার, বন্ধুত্ব, মানবতা, নৈতিকতা এবং জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা-গভীরভাবে উপলব্ধি করা। পাশাপাশি, নাগরিক রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব থাকবে যাতে এই দিনটি সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে উদযাপিত হয় এবং সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ধর্মীয় ভাবনার প্রতি সম্মান জানানো হয়।

 

লেখক- সম্পাদক, একুশে মিডিয়া

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages