শিক্ষিত পাগল ‘পর্ব-৫’ : নওমি - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Monday 30 December 2019

শিক্ষিত পাগল ‘পর্ব-৫’ : নওমি



একুশে মিডিয়া, মুক্তমত রিপোর্ট:>>>
লেখক-ফাতেমা আক্তার নওমি:
সুহানা সীমান্তর ধমক শুনে ফ্যালফেলিয়ে কান্না করে দিল। 
---ইসস। এতো বড় মেয়ে কান্না করলে কেমন লাগে মেজাজটা? 
এই মেয়ে চুপ করো । ভুলে যেও না আমি তোমার টিচার।  এক্ষুনি এই ম্যাথটা করে দাও। .
সুহানা চোখ মুছতে মুছতে ম্যাথ করা শুরু করে।  
সীমান্ত মনে মনে ভাবছে, সারার কথা।  অনেক আগে সারা হাসি দেওয়া শিখিয়েছিল। মেয়েদের হাসলে বেশ সুন্দর লাগে। 
তবে, কাঁদতে ও যে এতো অমায়িক বাচ্চাদের মতো লাগে আগে জানতাম না। এবার আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে একটু কেঁদেও দেখতে হবে। 
সুহানাঃ (ধপাস করে খাতাটা সীমান্তর সামনে ফেলে) স্যার ম্যাথ করা শেষ। 
--( একটু তাকিয়ে সুহানার দিকে তাকিয়ে) এভাবে দেওয়ার কি ছিল? 
-- আপনি আমাকে অপমান করেছেন তাই।
-- এই ন্যাকামি করবে না তো! যত্তসব।  
(ধমকের সুরে)এইগুলো কি ছাতার মাথা অংক করছো? 
একটা যদি হতো! এই তুমি এতো ফাউল মেয়ে কেন? 
---হা হা হা। আমি ফাউল। তাও ভালো।  আর আপনি তো পাগল।
---(ধমক দিকে)  এই চুপ। এই ওয়ার্ড টা আর কখনও ইউজ করবে না। ফালতু মেয়ে আর কখনও আসবো না। 
এই কাঁদে আবার এই হাসে। 
--স্যার! স্যার!  প্লিজ।  এমন করবেন না। আসবেন প্লিজ।আমি আর কখনও এমন করবো না কথা দিচ্ছি।  Please, Sir! Please, forgive me!!
--I don't care. তোমার প্লিজ এ আমি মানি না। ইচ্ছে হলে আসবো নাহলে আজই প্রথম আসলাম আর আজই শেষ।
সীমান্ত বেড়িয়ে পড়ল স্টুডেন্ট এর বাসা থেকে থেকে। 
সেদিন রাতে খাবার টেবিলে বসে খেতে খেতে মা বললো,
-- সীমান্ত, আমরা তোর জন্য সুন্দরী একটা মেয়ে দেখেছি। 
--কেন মা? মেয়ে দিয়ে কি করবো? দরকার হলে অন্য কিছু দিও। মেয়ে দিও না। কারণ মেয়েরা এক একটা ঢংগী হয়। 
-- কেন বাবা! মেয়েরা আবার কি করলো?  
আর আমরা মেয়ে দিব মানে তোকে বিয়ে করিয়ে ঘরে বউ আনবো।
-- ( একটু লাজুক হাসি হেসে) ও বউ!! আমার জন্য?
--হ্যাঁ।  বিয়ে করবি বাবা? 
--করবো তো৷ কিন্তু, ২ টা বউ তো লাগবে আমার।  
-- ( মা- বাবা অবাক হয়ে গেল) এ কেমন কথা? ২ টা বউ মানে? 
--২ টা বউ মানে ২ টা বউ। আর তারা দুজন হবে সারা আর সুহানা। 
--আপুর মেয়ে সারা?
-- হ্যাঁ। আর সুহানা হলো আজকের ছাত্রী।  
-এতো বড় ছেলের মুখে এমন পাগলামি কথা শুনে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল রিতা আর সুমন। 
সুমনঃ তুই বুঝতে পারছিস কি বলছিস? তোর পাগলামি সবাই জানে।  আর জেনেশুনে সারার মা- বাবা তোর মতো পাগলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিবে না। ২ টো বউ কিভাবে রাখে মানুষ, যে কিনা নিজের জায়গায়ই ঠিক নেই। 
সীমান্তঃ তোমার মতো একঘেয়ে মহিলার সাথে বাবার মতো বোকা মানুষ গুলোই কাটাতে পারে সারাজীবন। আমি এমন মেয়ের সাথে একদিন ও কাটাতে পারবো না। তাই আমি বিয়ে করলে ২ টাই করবো। 
বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
-বাবা,তুমি আজও জানো না  মায়ের মাঝে extra ordinary বলতে কিছু নেই। 
সুমনঃ ( ধমক দিয়ে)  চুপ কর বলছি। লজ্জা লাগে না তোর? মানুষ বলে নিজেকে পরিচয় দিতে? নিজের মাকে নিয়ে কথা বলছিস?
-- আমি তো মানুষ ই না। আমি নিজেকে রাস্তার কুকুর ভাবি। ঘেও ঘেও ঘেও........ 
---চোখের সামনে থেকে সরে যাও বলছি। এক্ষুনি যাও। 
সীমান্ত নিজের রুমে চলে গেল। খাবার টেবিলে বসে অনবরত কেদেঁই চলেছে রিতা। এমন তো নাও হতে পারতো আমাদের সাথে। 
সুমনঃ সব আমার দোষ।  আমিই যদি সেদিন এতো বড় অন্যায় টা না করতাম।  তাহলে আজ এইদিন টা দেখতে হতো না। 
রিতাঃ থাক!  পুরানো কথা বলে কষ্টটা বাড়িও না। 
-- কিন্তু, আমাদের মেয়েটা কোথায় আছে রিতা? 
জানিনা কতোবড় হয়েছে সে? মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কি জানো? শ্বাসরুদ্ধ করে নিজেকে নিজে মেরে ফেলি। কি করে পারলাম এডুকেটেড হয়ে আনএডুকেডেট এর মতো কাজটা করতে? ছি! ছি!
---আমি তোমাকে তখনই অনেক বারণ করেছিলাম। তুমি তো শুনো নি। 
--সেই পাগলিটাই বা কি করেছে আমাদের মেয়েকে? 
-- আচ্ছা,  একবার খোঁজ নিয়ে দেখবে কোথায় আছে আমাদের মেয়ে? 
--রিতা, এখন ওকে খোঁজা মানেই আমাদের নোংরামি বের হয়ে যাওয়া। তাছাড়া সীমান্ত ও কিন্তু, জেনে যাবে ও আমাদের ছেলে ই না। 
আজ থেকে ২৪ বছর আগে হসপিটালে যখন তুমি কন্যা সন্তানের জন্ম দেও। তখন আমি নিজের বাবা-মাকে খুশি করানোর জন্য নিজের মেয়েটাকে পাগলির কোলে দিয়ে আসি। আর সেই পাগলির জন্ম দেওয়া জারজ ফুটফুটে ছেলে সন্তানটাকে এনে তোমার কোলে দেই। তুমি তো এটা মেনে নিতেই পারো নি। আমিই তো চাপিয়ে দিয়েছিলাম তোমার উপর।  ওইটুকু একটা বাচ্চা পরে ঠিকই আপন করে নিয়েছো। 
একবারও আমাদের মেয়ের কথা ভাবি নি। কিন্তু, দ্যাখো সেই ছোট্ট সীমান্ত আজ কতবড় হয়ে গেছে। ওকে মানুষ করায় তো কোনো কমতি ছিল না আমাদের কিন্তু প্রকৃত মানুষ তো হলো না। পাগলির ছেলে তো পাগল ই হয়েছে। 
---রিতার দু চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।  এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে কেউ নেই আপন বলতে৷ কেন এমন করতে গেলো সুমন?
ছেলে যেমন ই হোক না কেন তার ভালোর জন্য বাবা-মা সব কিছু করতে রাজি।  সুমন ও রিতা দুজনে এসেছেন দোলনদের বাড়িতে। রিতার ও দোয়েলের চাইতে দোলনকেই বেশি পছন্দ।  
দোলন বেশ চটপটে আর প্রানচঞ্চল মেয়ে। দোয়েল সে তুলনায় শান্ত ভদ্র। 
রিতাঃ ভাই,  বিশ্বাস করুন আমাদের বাসায় দোলনের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা দোলনকেই ছেলের বউ করতে চাই। 
দোলনের বাবাঃ এটা সম্ভব নয়। আমার বড় মেয়ে ও আমার কলিজার টুকরো। বেশ ভালো মেয়ে ও বিশ্বাস করুন। আপনারা মনেহয় দোয়েলের পড়াশোনা কম বলে বিয়ে করিয়ে নিতে আগ্রহ কম করছেন। 
এটা আসলে আমার ব্যর্থতা।  তখন আমরা খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে সংসার চালাচ্ছিলাম। ও খুব মেধাবী ছিল। গুণে রুপে মেধায় অপারগ আমার মেয়ে দোয়েল। বাবা বলে বাড়িয়ে বলছি না। এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।  আমরাই ওর পড়াশোনাটা বন্ধ করে দেই৷ 
রিতাঃ আচ্ছা, আমরা যদি দোয়েলের দায়িত্ব নেই? আবার ওর পড়াশোনা করাবো। দোলন ও দোয়েল দুজনেই পড়বে। দোলনকে ঘরে বউ করে নিতে চাই৷ আর দোয়েল ও আমাদের বাসায় ই থাকবে।  ভালো একটা ছেলে দেখে আমরা ই বিয়ে দিব ওকে। 
-- দেখুন এ দায়িত্ব যদি আপনারা ভালোভাবে পালন করতে পারেন। তাহলে আমার আপত্তি নেই।  আমার মেয়ের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে ও ঠিক মন জয় করে নিবে আপনাদের।  মেয়ে ই মনে করবেন তখন। 
দোয়েলের দায়িত্ব নিয়ে রিতা আর সুমন ছেলের জন্য দোলনকে বউ করে নিয়ে আসে। 
দোলনকে একবার দেখে সীমান্ত ও রাজি হয়ে যায় বিয়ের জন্য। সেদিন থেকে রিতা-সুমনের বাসায় ২ জন সদস্য বেড়ে গেল। একজন আসে ছেলের বউ হয়ে আর অপর জন মেয়ে হয়ে। 
সীমান্ত সেদিনের পর থেকে আর সুহানাকেও পড়াতে যায় নি। অনেকবার সুহানা ফোন দিয়ে বলেছিল৷  স্যার, পড়াতে আসেন। 
কিন্তু, স্যার তো আর কখনও যাবেন না। 
.আজ সীমান্ত আর দোলনের বাসর রাত। 
বিছানার মাঝে লেহেঙ্গাটা ছড়িয়ে বসে আসে দোলন। সীমান্ত রুমে আসে। দোলনের দিকে তাকিয়ে বলে, 
-- আপনি কি হাসতে পারেন? 
দোলন একটু মুচকি হাসে। 
সীমান্তঃ আহ! এভাবে হাসলে মেয়েদের মানায় না। হা হা করে জোরে জোরে হাসতে হয়। 
এবার দোলন হি হি করেই হেসে দিল৷ 
সীমান্ত বলে,
-- মেয়েদের এতো ভারি অংলকার কেন পড়তে হয়। 
এখন তো কেউ দেখছে না। যান এগুলো খুলে আসেন। 
দোলন কিছুক্ষণ পর জামদানী একটা শাড়ি পড়ে হালকা সাজে আসে। এখনও তো বেশ সুন্দর লাগছে।  এতো মায়া কেন মেয়েটার মুখে।  সারাদিন দেখতেই ইচ্ছে করে ওই মুখটা।  আর হাসিটা কি বলবো? সারার চেয়ে শত গুনে সুন্দর। এতো সুন্দর বউ আমার কপালে?  
দোলনকে অনেক শ্রদ্ধা করতে হবে। যাতে কখনো ওর কোনো কষ্ট না হয়। একদম ই কষ্ট দেওয়া যাবে না৷ ও যেটা পছন্দ না করে সেটা করা যাবে না। 
মনে মনে এ কথাগুলো ভাবছে সীমান্ত।  
---দোলন আপনি কি এখন ঘুমাবেন? 
--(হাসি দিয়ে)আপনি যা বলবেন তাই।
--আমার মনে হয় আপনি অনেক ক্লান্ত।  ঘুমিয়ে পড়ুন খাটে আমি নিচেই শুয়ে পড়ছি। 
দোলন একটু অবাক হয়ে গেল। এ কেমন স্বামী।  আজ বাসর রাত ওদের। দুজনের মাঝে তো কতো কথাই থাকতে পারে।  সে কিনা ঘুমাতে বলে।  
সীমান্তঃ ও হ্যালো দোলন। কি ভাবছেন? লাইট কি অফ করে দিব? আপনি কি ভয় পাবেন?
দোলনঃ না থাক,  জ্বালানো থাক। 
সীমান্ত মাদুর বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বউ কে নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই। 
দোলন মনে মনে ভাবছে,
আমাকে মেনে নিতে পারলো কিনা,  তাও বোঝা যাচ্ছে না। শুনেছি বিয়েটা নাকি তার মত না নিয়েই হয়েছে। সে কি অন্য কাউকে ভালোবাসে নাকি? ধুর, সেটা থাকলে ও তো মানুষ বলে।  উনি তো কিছুই না বলে নাক ডেকে ঘুমিয়েই যাচ্ছে। আমার তো ঘুম ই আসছে না। 
এ কেমন লোক? পাগল নাকি আল্লাহ ই জানে।  কার কপালে এসে পড়লাম।  ধুর।.
দোলন চোখ খুলেই দেখে পাশে চেয়ারে বসে আছে সীমান্ত।  
সীমান্তঃ গুড মর্নিং। কেমন ঘুম হলো আমাদের বাসায়? 
দোলনঃ গুড মর্নিং। হ্যাঁ ভালো। স্যরি আমার একটু লেট হয়ে গেল। আপনি কখন উঠেছেন?
--৮ টায়। 
দোলন উঠতে গেল। ঠিক তখন ই সীমান্ত বলে উঠলো,
-না আপনি একদম উঠবেন না। আমি আপনার জন্য কফি করে দিচ্ছি।
--(হেসে) বা রে আমি ফ্রেস হবো না?
-- আপনি যা চাইবেন তা ই হবে। যান তাহলে।
রিতা সকাল থেকেই দোয়েলকে দেখছে।  সেই সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠেছে। মেয়েট হাতে হাতে এতো কাজ করে। তাও যেন রিতার ওকে খুব একটা ভালো লাগে না। একটু বোঝাই মনে হয়। সকাল ৯ঃ৩০ টায় বউয়ের মুখ দেখা গেল। একটা নতুন শাড়ি বের করে দিল রিতা দোলনকে। 
-- নেও গোসল করে এই শাড়িটা পড়ে নেও। বাড়িতে বেশ সাজ সাজ রব। 
--কোনো মেহমান আসবে মা? 
--মেহমান তো আসবে ই।  নতুন বউ কে দেখতে আসবে না সেকি হয়। বিয়েতে সবাই আসতে পারে নি।  তাই বলে আজ ও আসবে না? 
কতোদিক আজ সামলাতে হচ্ছে রিতাকে।  সেই সকালে সুমন বাজারের দিকে গেল।  এখন ও ফেরার নাম নেই। 
--- মা, ডাইনিং এ খাবার সাজিয়েছি। আসুন। ভাইয়াকে কি ডেকে নিয়ে আসবো?( দোয়েল)
--(দোয়েল ও আমাকে মা বলে ডাকছে?) হ্যাঁ নিয়ে আসো।
ভাইয়া, ভাইয়া.......
(সীমান্ত দোলনের অংলকার গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল) 
---খেতে আসেন ভাইয়া।
--তুমি কে?
-আমি দোলনের বড় বোন দোয়েল। 
--ও আচ্ছা। যাও আসছি। 
এদিকে বাজার থেকে কয়েকজন লোক নিয়ে সুমন বাজার করে নিয়ে এসেছে। 
-- রিতা দেখো তো লিস্টের সব কিছু ঠিকঠাক এনেছি কিনা?
দোয়েল এগিয়ে গেল। 
-- দেখি বাবা,  আমাকে দেন।
সুমন সাহেবের দোয়েলের প্রতি একটু টান অনুভব হয়। কিন্তু,  এই টান টুকু কাউকে বুঝতে দেয় না সে। 
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে সীমান্ত কতটুকু ভালো হলো বিয়ে করার পর।  সে কি তার পাগলামি গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে?
--------চলবে----------







একুশে মিডিয়া/এমএসএ

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages