একুশে মিডয়া, কবিতা:
লেখক: মোঃ ইব্রাহীম ফরায়েজী:
একটি ছেলে আর একটি মেয়ের হঠাৎ করে কলেজ লাইফে পরিচয় হয়, ছেলেটির নাম ইমরান আর মেয়েটির নাম ইভা। পরিচয় থেকে ভাল লাগা আর ভাল লাগা থেকে সৃষ্টি হয় গভীর ভালবাসার। এভাবেই দেখতে দেখতে কেঁটে যায় দুইটি বছর।দুজনেরই শেষ হয়ে যায় কলেজ লাইফ।তারপর মেয়েটির পারিবারিক ভাবে সমস্যা থাকার কারনে তাদের মধ্যে সামনা সামনি দেখা খুব কমই হত।তবে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ হত, তবু ও তাদের মধ্যে ভালবাসার গভীরতা একটু ও কমে যায়নি বরং আরও অনেক বেড়ে গেছে। তবে তারা মাঝে মাঝে একটি পার্কে দেখা করত। হঠাৎ একদিন ছেলেটি মেয়েটি কে বললো তুমি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবা । তোমাকে এক নজর দেখতে অনেক ইচ্ছা করছে।তার পরেরদিন তারা একটি পার্কে দেখা করবে বলে সিধান্ত নেয়। পরেরদিন পার্কে একটি বেঞ্চের দুই প্রান্তে দুইজন বসে আছে, দুইজন দুইজন কে দেখার পর যেন তারা তাদের বাকশক্তিই হাড়িয়ে ফেলেছে এতটাই গভীর ছিল তাদের ভালবাসা। হঠাৎ মেয়েটি ছেলেটি কে জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা ইমরান তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাসো নাকি সবই তোমার অভিনয়। কথাটা শুনার পর ইমরান অবাক হয়ে ইভাকে প্রশ্ন করলো এমন কেন মনে হল তোমার? তখন ইভা বললো এতবার অনুরোধ করলা আজকেই দেখা করার জন্য কিন্তু তোমারি আসতে এক ঘন্টা দেরি। আমি কখন থেকে তোমার পথ চেয়ে বসে আছি তোমার অপেক্ষাই, কখন তুমি আসবা কখন তোমার সাথে দেখা হবে কথা হবে। তখন ইমরান দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো আমি পরে না বরং, তুমি এখানে পৌছানোর এক ঘন্টা আগে থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। তখন ইভা অবাক হয়ে প্রশ্ন করছে বুঝলাম না তোমার কথা? আমি তো সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজতেছি তোমাকে ফোন করতেছি কিন্তু তোমার কোনো সারা নেই। তখন ইমরান বললো আমি এই এক ঘন্টা পর্যন্ত তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম। ইভা প্রশ্ন করলো কেন। লুকিয়ে দেখার কি দরকার আমি তো তোমার সাথেই দেখা করার জন্য এখানে এসেছি। তখন ইমরান বললো তোমার দুইটি চোখ এই একটা ঘন্টা আমাকে যে ভাবে চারও দিকে খুঁজতেছিল তুমি
যে ভাবে আকুল হয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছিলা আমাকে না দেখতে পেয়ে যেভাবে টেনশন ফিল করতে ছিলা তা আমি সবই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেছিলাম, এই সবকিছু আমি যখন লুকিয়ে দেখছিলাম তখন আমার মনে হল আমি মনে হয় এই পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবান মানুষ যে তোমার মত একজন কে নিজের জীবনে এত আপন করে পেয়েছি।তখন ইভা দুচোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো ইমরান আমার এই মনে এই দুটি চোখে শুধু তোমাকে নিয়েই সব স্বপ্ন তুমি সারা জীবন এই স্বপ্ন কে আগলে রেখ কখনো আমার স্বপ্ন গুলো নষ্ট হতে দিও না কখনো না।এরপর ইভা ইমরানকে একটা প্যাকেট দেয় ইমরান প্যাকেট টা খুলে দেখতে পায় তাতে একটা শার্ট আছে। এই দেখে ইমরান বলে ইভা আমি তোমাকে কখনো কোনো উপহার দিতে পারি না তুমি কেন আমাকে এত কিছু দাও। আমার খুবই খারাপ লাগে এই ভেবে যে আমি তোমাকে কখনো ইচ্ছা থাকলে ও কিছু দিতে পারি না। তখন ইভা বলে আমার কিছুই লাগবে না কারন তুমি নিজেই তো আমার আর কোনো কিছুরই আমার দরকার নাই। আর আমি জানি যে তুমি লেখাপড়ার ফাঁকে টিউশনি করে যে টাকা পাও তা তোমার লেখাপড়ার খরচ চালাতেই শেষ হয়ে যায়, আমি সবই বুঝি আমার কোনো কিছুরই দরকার নাই।
তার কিছুদিন পর হঠাৎ ইভা ইমরানের সাথে জরুরী ভাবে দেখা করতে চায় সেদিন ইভার আচরন দেখে ইমরান কিছুটা অবাকই হয়। পরেরদিন সকাল হতেই যে পার্কের বেঞ্চে বসে তারা সব সময় কথা বলতো সেখানে চলে গেল। হঠাৎ ইমরান দেখতে পায় ইভা একটু একটু করে হেঁটে হেঁটে তার দিকে এগিয়ে আসছে ইভার ঠুটে মুখে যেন অনেক কান্তি অনেক টেনশন লেগে আছে। হাঠাৎ করে ইভার এই অবস্থা দেখে ইমরান পুরুপুরি যেন বাকশক্তি হাড়িয়ে ফেলেছে, কোনো কথাই যেন সে বলতে চেয়ে ও বলতে পারতেছে না। তখন ইভা ইমরানের সামনে এসে দাঁড়ালো ইমরানের কপালে একটা চুমু দিয়ে ইমরানের হাতটা অনেক শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো ইমরান তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি মনে হয় তোমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো আর বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না। এই কথাটি বলেই ইভা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
ইভার কথাগুলো শুনে ইমরান মানুষিক ভাবে এতটাই দূর্বল হয়ে গেছে যে সেদিন কোনো কথাই আর বলতে পারলো না। সেদিনের ঘটনার পর ইমরান ইভার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিল এবং ইমরান জানতে পারলো ইভার নাকি দুইটা কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে! ইভাকে বাঁচতে হলে জরুরি ভাবে কমপক্ষে একটা কিডনি দরকার, কিন্তু ইভার আত্নীয় স্বজনরা অনেক চেষ্টা করে ও একটি কিডনি জোগাল করতে পারে নাই, তাই কিডনির অভাবে ইভা নাকি আর বাঁচবে না। হঠাৎ করে ইভার বাড়ির লোকেরা জানতে পারে যে কিডনি পাওয়া গেছে। তারপর জরুরি ভাবে ইভার অপারেশন হয় এবং ইভা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠে।
এতদিনে ইভার মনে ইমরানের জন্য যত ভালবাসা ছিল সবই এখন ঘূণায় পরিণত হয়ে গেছে। ইভা মনে মনে ভেবে নিছে যে এতদিনে আমি কেমন আছি তা একটা বার ও খোঁজ নেবার চেষ্টা বা প্রয়োজন মনে করলো না ইমরান, এই ওর ভালবাসা। ইভা এখন মনে মনে ইমরান কে বেইমান খারাপ ছেলে ভাবে। হঠাৎ একদিন যে পার্কে তারা দেখা করতো সেখানে ইভা গেল এবং ইমরান কে সেই বেঞ্চে বসা দেখতে পেল। ইমরান কে দেখেই ইভা অনেক আজে বাজে কথা বলতে শুরু করলো বেইমান প্রতারক আরো কত কি। কথা গুলো শুনার পর ইমরান অনেক কষ্ট পেল।হঠাৎ ইভা দেখতে পায় ইমরানের পেটের দিক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত দেখে ইভা অবাক হয়ে কি হয়েছে বলে শার্ট উঁচু করে দেখতে চায়, কিন্তু ইমরান দেখতে দেয় না। ইমরান বলে আমার মত বেইমানের রক্ত লেগে তোমার শরীর নোংরা হয়ে যাবে তাই থাক দেখতে হবে না। কিন্তু ইভা জোর করেই শার্ট উঁচু করতে দেখতে পায় ইমরানের কোমড়ের ডান পাশে একটা অপারেশনের দাগ এটা দেখার পর ইভার আর কিছু বুঝার বাকি রইল না। তখন ইভা বললো তোমার এই অবস্থা কেন? তখন ইমরান বলে তোমাকে কিডনি দেবার পর ডাক্তার ঘা শুকানোর জন্য কিছু ঔষুধ লিখে দিছিল কিন্তু টাকার জন্য কিনতে পারি নাই। তখন যে ইভার মনের কি অবস্থা হল তা আর লিখে বুঝানো সম্ভব নয়।
ইভা নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয়ে গেলে কারন যে ইমরান তার জন্য এত কিছু করলো, ইভা তাকেই কিনা ভুল বুঝলো !
এই কি ছিল ইমরানের প্রতি ইভার ভালবাসা আর বিশ্বাস।
একুশে মিডিয়া।”।
No comments:
Post a Comment