![]() |
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■:
নড়াইল-২ আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির মনোনীত প্রার্থী ওয়ানডে ক্রিকেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজাকে জেতাতে ভোটের মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিখ্যাত এই ক্রিকেটারের ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগীরা।
আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামানও (ধানের শীষ) বসে নেই। নির্বাচনী প্রচার কাজের প্রথম দিনেই ১১ ডিসেম্বর লোহাগড়ায় তার নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। ভয় ও আতংকের মধ্যেও জোটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই প্রার্থীও রয়েছেন ভোটের মাঠে।
নড়াইল-২ আসনে (লোহাগড়া-সদরের একাংশ) আওয়ামী লীগ এবং ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও আরো পাঁচ প্রার্থী নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ লাঙল প্রতীকে, এনপিপির (ছালু) জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম আম প্রতীকে, ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাসির উদ্দীন হাতপাখা প্রতীকে, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান মিনার প্রতীকে এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় সদস্য ফকির শওকত আলী তারা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী এস এম নাসির উদ্দিনের প্রচার-প্রচারণা চোখ পড়ছে। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর পরই নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামানের সমর্থকরা মাঠে নেমে নিজ নিজ দলের পক্ষে ভোট চাইছেন। তবে হামলা ও গ্রেফতার আতংকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে উপস্থিতি কম। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি এখনো ঢাকায় থাকলেও নেতা-কর্মীসহ তার ভক্ত-অনুরাগীরা আছেন ভোটের মাঠে।
দিন-রাত চলছে নৌকা মার্কার প্রচার। মাশরাফিকে বিজয়ী করতে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ক্রীড়াঙ্গন ছাড়াও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা তাদের পক্ষে আছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগের। বিরোধী জোট প্রার্থী এ জেড এম ফরিদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, তার নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পুলিশ বিএনপির নেতাদের আটক করছে।
১১ ডিসেম্বর তার নির্বাচনী একটি কার্যালয় ভাঙচুর করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে তিনি দাবি করেন, ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাশরাফির বন্ধু সুমন দাস বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মাশরাফির জন্য নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৯ সালের এসএসসি পর্যায়ের বন্ধুরা। পাশাপাশি ১৯৯৮ সালের এসএসসির বন্ধুরাও মাশরাফির জন্য বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন।
এ লক্ষে প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত অবধি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মাশরাফির পক্ষে মতবিনিময়, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ করছে তার বন্ধুরা।’ নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম অনিক জানান, ২২ ডিসেম্বর মাশরাফি নড়াইলে এসে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় শামিল হতে পারেন। নড়াইল পৌরসভা, সদর উপজেলার আট ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া পৌরসভা ও লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত।
জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী নওশের আলী জানান, এ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৮২। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৭ হাজার ১০৫ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৬০ হাজার ৬৭৭ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ বরাবরই ভালো ফলাফল করেছে। ১৯৭৩, ৯১, ৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক জয়লাভ করে। তবে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা বর্তমান সংসদ শেখ হাফিজুর রহমান।
আসনটিতে ৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ১৯৭৯ এবং ২০০১ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নড়াইলের মানুষ ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে ধানের শীষ প্রতীক বিপুল ভোটে জয়ী হবে।’তবে তার অভিযোগ, প্রত্যেক নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা থাকায় তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ঠিকমতো অংশ নিতে পারছেন না।
পুলিশের ভয়ে তাদের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাসচন্দ্র বোস বলেন, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাশরাফিকে (নৌকা প্রতীকে) জয়ী করার জন্য বিরামহীন কাজ করছে। লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান রুনু শিকদার বলেন, মাশরাফি ভোটের মাঠে না থাকলেও নির্বাচনে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। এ আসনে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীক জয়ী হবে বলে মনে করেন তিনি। আর জেএসডি প্রার্থী ফকির শওকত আলী বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে পারলে শাসকদের ভরাডুবি হবে।
একুশে মিডিয়া/এমএ




No comments:
Post a Comment