কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা তালুকদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে মোট ২৩ বস্তা নথিপত্র জব্দ করা হয়।
দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, জব্দ করা নথিপত্রে দেশে-বিদেশে জাবেদের বিপুল সম্পদ, অর্থ আত্মসাত ও পাচারের তথ্য রয়েছে। এতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। মোট ৫৮২টি নথি উদ্ধার হয়েছে।
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া আরামিট গ্রুপের এজিএম আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালের জবানবন্দির ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। উৎপল পাল দীর্ঘদিন জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন। তার ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে অর্থপাচারের তথ্য মেলে। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের এজিএম হিসেবে সম্পদ কেনা-বেচা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার দুই কর্মকর্তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইলিয়াস তালুকদারের বাড়িতে নথিপত্র লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়েও কোনো নথি উদ্ধার হয়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করে শনিবার দিবাগত রাতে ফের অভিযান চালালে ২৩ বস্তা নথি জব্দ করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান জানান, উদ্ধারকৃত নথিপত্রে সাবেক মন্ত্রীর আরামিট গ্রুপ ও অন্যান্য সম্পদের তথ্য রয়েছে। এসব নথি গত ১৬ সেপ্টেম্বর নগরীর কালুরঘাট এলাকা থেকে ইলিয়াস তালুকদার তার নিজ বাড়িতে এনে লুকিয়ে রাখেন। তবে অভিযানে ইলিয়াস ও তার চাচাতো ভাই ওসমানকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামান, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪-১৮ মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯- ২৩ পর্যন্ত ভূমিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৯-২০ সালে ভূমিমন্ত্রী থাকাকালে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশে সম্পদ গড়ার খবর প্রকাশ হলে তাকে আর মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের ঠিক আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
বর্তমানে তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছে দুদক।
No comments:
Post a Comment