রুশমী আক্তার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
সাহস, মনোবল ও মেধা থাকলে ঘরেই বসে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব- এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লোহাগাড়ার তরুণী শারমিন আক্তার। গৃহিণী পরিচয় পেছনে ফেলে তিনি এখন সফল হ্যান্ড পেইন্ট উদ্যোক্তা। বাড়ির বারান্দায় বসে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কুর্তি ও শিশুদের পোশাকে মনোমুগ্ধকর নকশা এঁকে প্রতি মাসে আয় করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের মাইজবিলা গ্রামের বাসিন্দা শারমিন আক্তারের বয়স ২৯। সংসার, সন্তান এবং নিজের ব্যবসা- সব সামলেই তিনি এগিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোগ। পাঁচ বছর আগেও তিনি ছিলেন পুরোপুরি গৃহিণী। এখন তিনি এলাকার অন্যান্য নারীদের জন্যও অনুপ্রেরণার আদর্শ।
তুলির আঁচড়ে স্বপ্নের পথে:
প্রতিদিন অবসর পেলেই ঘরের বারান্দায় বসে কাজে মন দেন শারমিন। তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন ফুল, পাতা ও রঙিন নকশার বাহার। তাঁর হাতের কাজের বিশেষত্ব- প্রতিটি ডিজাইনই ইউনিক এবং একদমই হাতে আঁকা।
সম্প্রতি তাঁকে একটি সাদা পাঞ্জাবিতে নীল পাতার নকশা করতে দেখা যায়। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন- “পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, কুর্তি থেকে শুরু করে বাচ্চাদের জামা- সব ধরনের পোশাকেই হ্যান্ড পেইন্ট করি। অর্ডার পাই মূলত ফেসবুক পেজে। চাহিদামতো ঢাকার পোশাক কারখানা থেকে কুরিয়ারে কাপড় এনে কাজ করি।”
শুরু হয়েছিল একটি পাঞ্জাবি থেকে:
২০২০ সালে বিয়ের পরের বছর ঈদে স্বামীর জন্য একটি পাঞ্জাবিতে নকশা করতে গিয়েই তাঁর উদ্যোগের যাত্রা। এরপর ধারাবাহিকভাবে আরও ১৫টি পাঞ্জাবিতে নকশা করেন। ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড করলে মাত্র এক সপ্তাহে সব বিক্রি হয়ে যায়। ১২ হাজার টাকা পুঁজিতে প্রথম উদ্যোগে লাভ হয় ৮ হাজার টাকা।
২০২২ সালে ‘Sharmins Hand Paint’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে নিয়মিত অর্ডার পেতে শুরু করেন। এখন মাসে গড়ে ৫০টি পোশাক পেইন্ট করেন। ঈদ, বৈশাখ বা উৎসব মৌসুমে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। গত ঈদে তিনি পেয়েছিলেন ১৫০টিরও বেশি অর্ডার- আয় হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
পরিবারই তাঁর শক্তি:
শারমিনের স্বামী আবদুল্লাহ আল মামুন পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনিই সবসময় সহযোগিতা করে আসছেন। দম্পতির দুই সন্তান—রাওয়াহা তাফানুম (৪) ও রুফাইদা তারান্নুম (১)।
স্বামী মামুন বলেন-
“নারীদের ঘরে আটকে না রেখে তাঁদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ দেওয়া উচিত। শারমিনের আগ্রহ দেখে সবসময় পাশে থেকেছি। ভবিষ্যতে লোহাগাড়া উপজেলার কেন্দ্রে নারীদের পরিচালনায় একটি বুটিক শপ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”
প্রশাসনের প্রশংসাও পাচ্ছেন:
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের লোহাগাড়া উপজেলা কার্যালয়ের ক্রেডিট সুপারভাইজার মো. দিদারুল আলম বলেন- “প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের এগিয়ে নিতে এমন উদ্যোগের বিকল্প নেই। আমরা প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। সফল নারী উদ্যোক্তাদের জয়িতা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিতও করা হবে।”
শারমিনের লক্ষ্য-অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী করা:
“ইচ্ছাশক্তি আর পরিবার সহযোগিতা পেলে নারীরা অনেক কিছু করতে পারে”- বললেন শারমিন আক্তার। তিনি চান, তাঁর মতো আরও নারীরা ঘরে বসেই কাজ শিখে স্বাবলম্বী হোক। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।




No comments:
Post a Comment