শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানুষের ‘আবেগ’ তৈরি হয় অনেক সহজেই-একুশে মিডিয়া - Ekushey Media bangla newspaper

Breaking News

Home Top Ad

এইখানেই আপনার বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ: 01915-392400

নিউজের উপরে বিজ্ঞাপন

Sunday 22 July 2018

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানুষের ‘আবেগ’ তৈরি হয় অনেক সহজেই-একুশে মিডিয়া

ছবিঃ সংগৃহীত


একুশে মিডিয়া, ঢাকা রিপোর্ট:
‘৫৬ শতাংশ কোটা’ এটা বলতে গেলে অনেকটা শোনায়। যার ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানুষের ‘আবেগ’ তৈরি হয় অনেক সহজেই। শুধু মনে রাখতে হবে, ‘আবেগ কিন্তু দামিও হয় আবার সস্তা আবেগও হয়’।
আজকে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আছেন তারা হয়তো অনেকেই জানেন না, কোটা প্রথা বিলুপ্ত হলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর লাভবান হবেন মুষ্টিমেয় কিছু গোষ্টী।
যে কোনো রাষ্ট্রেরই সমাজ ব্যবস্থার বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে চাকরিতে কোটা রাখা হয়। আমাদের দেশেও তাই। আমার মনে হয়, কোটা শুরুই হয় যে কোনো নিয়োগ পরীক্ষার সবগুলো ধাপ অতিক্রম করার পর; যেটা অনেকেই জানে না। চাকরিতে প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা, ভাইভাতে নির্ধারিত নম্বর পেয়ে পাস করার পর কোটা পদ্ধতির শুরু। এর আগে কোটার কোনো কার্যকারিতা নেই।
কোটা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী চার পাঁচজনের খবর আমি জানি, যারা এ পর্যন্ত চাকরির প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই পাস করতে পারেনি। সুতরাং কোটা থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি! ওদের জন্য তো সবই সমান। বিষয়টা তো এমন না যে কোটা না থাকলে তারা এতদিনে চাকরি পেয়ে যেতো।
যেমন ধরুণ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, শেরপুর অথবা নওগাঁ জেলা। অন্যদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা অথবা গাজীপুর জেলা। ওই ছেলেমেয়েদের মধ্যে আর এদের মধ্যে পড়াশোনার মান, সুযোগ-সুবিধার অনেক তফাৎ। সেই আগে থেকেই।
এক্ষেত্রে জেলা কোটা পদ্ধতি না থাকলে দেখা যাবে পশ্চাৎপদ এলাকার মানুষগুলো চাকরিই পাবে না। সুতরাং গ্রাম আর শহরের বৈষম্যও দূর হবে না।
এছাড়া সবাই কোনো না কোনো জেলায় বাস করে, সুতরাং জেলা কোটা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য না। দেখা গেছে যেসব সুশীলরা এই কোটা প্রথার বিরোধিতা করছেন তারাই আবার সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্য দূর করার জন্য দিনরাত চিৎকার করেন। এই স্ববিরোধী অবস্থান তাদের মানায় না।
আশরাফুল আলম খোকন
নারী কোটা ১০ শতাংশ। যারা নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করা কিংবা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে দিনরাত বাহবা কুড়ান তারাই আবার কোটার বিরোধিতা করছেন। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে অনেক মেয়েও এতে বুঝে অথবা না বুঝে অংশ নিয়েছেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে আমাদের দেশের মেয়েরা এখনো অনেক পশ্চাৎপদ। ধর্মীয় ও সামাজিক কিছু কুসংস্কারের কারণে এখনো তারা পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছেন। এই কোটা যদি বিলুপ্ত করা হয় তাহলে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দেশ আরও অনেক পিছিয়ে যাবে। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে গেলে নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। মোট জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে আট কোটি নারী রয়েছে। যাদের জন্যই এই কোটা।
দেশে প্রায় অর্ধকোটি আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী রয়েছে। যারা আসলেই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি। তারা এই রাষ্ট্র ও সমাজেরই অংশ। তাদেরকে পশ্চাতে রেখে দেশ কখনোই এগোবে না। সুস্থ সবল প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাষ্ট্র সেই দায়িত্বই পালন করছে। তাদের জন্য রয়েছে ৬ শতাংশ কোটা। অথচ তথাকথিত বিবেকবান মানুষগুলো এই কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এইবার আসেন আপনাদের মূল আপত্তি যেটা সেটা নিয়ে; মাত্র আড়াই লক্ষ পরিবারের সদস্যদের জন্য কেন ৩০ শতাংশ কোটা- ইনিয়ে বিনিয়ে এইসব বলছেন তো?
আপনাদের মেধাবী বিবেককে জিজ্ঞেস করুন তো সাড়ে সাত কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেন মাত্র আড়াই লক্ষ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সংসার ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল? নিজের জীবন দিয়ে আপনার আমার জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড সৃষ্টি করতে কি স্বার্থ ছিল উনাদের? উনারা কি তখন শর্ত দিয়েছিল যে দেশ স্বাধীন হলে তাদের জন্য চাকরিতে বিশেষ সুযোগ সুবিধা রাখতে হবে?
না, কিছুই চায়নি তারা, শুধু চেয়েছিল আত্মমর্যাদা নিয়ে এদেশের মানুষ বেঁচে থাকবে। তাদের উত্তরসূরীরা পাকিস্তানিদের গোলাম হবে না। আর সেই মানুষগুলোকে প্রতি পদে পদে আপনারা অপমান করছেন। আবার নিজেদেরকে মেধাবী দাবি করছেন। আপনাদের মনুষত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। বিবেক জাগ্রত হোক- এটাই চাই।
বেশি আবেগী কথা বলে ফেললাম? আসেন বাস্তবতার কথা বলি।
প্রথমত হচ্ছে, এই হিসাব মতে দেশের প্রায় সাড়ে ৯ কোটির জন্য রয়েছে ৫৬ শতাংশ, আর সাড়ে ৭ কোটির জন্য ৪৪ শতাংশ। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশ কখনোই পূরণ হয় না। সর্বোচ্চ ৫/৬ শতাংশ পূরণ হয়। মেধার ভিত্তিতে ৩৩তম বিসিএসে ৭৭.৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭.৬৯ শতাংশ এবং ৩৬তম বিসিএসে ৭০.৩৮ শতাংশ ক্যাডার সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে। কারণ, কোটায় যোগ্য মেধাবীদের না পাওয়া গেলে বাকিদের থেকে তা পূরণ করা হয়। সুতরাং কোটার কারণে জাতি মেধাহীন সমাজ পাবে এই যুক্তিটি খুবই অযৌক্তিক।
এখন বলতে পারেন তাহলে এটা যে কোটা ৫/৬ শতাংশের বেশি পূরণ হয় না সেই কোটা এতো বেশি রাখার দরকার কি? এই বিষয়ে আদালতের রায়ের বিষয়টি না বাদই দিলাম। যদি আমি ব্যক্তিগত অভিমত থেকেও বলি, এই ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো সরকারের পক্ষে কমানো সম্ভব না। এটা তাদের প্রতি সম্মানার্থেই কমানো ঠিক হবে না। ইতিহাসে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এটা বাকিজীবন একটা কলঙ্ক হয়ে থাকবে। এর দায় আওয়ামী লীগের সরকার কেন নিবে?
কোটা বিরোধী আন্দোলনতো প্রথম ছাত্র শিবির শুরু করেছিল ২০০৪ সালে, তখন তাদের বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হয়েও তারা এই ৩০ শতাংশ কোটা কমাতে পারেনি, কোনো উদ্যোগও নেয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগের গায়ে এই কলঙ্কজনক দায় চাপানোর উদ্দেশ্য কি তা কারোরই অবোধগম্য হওয়ার কথা না।
এরপরও যদি মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আপনাদের আপত্তি থাকে, তাহলে এর সমাধানেরও সহজ উপায় আছে। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটার বিষয়ে মহামান্য আদালতের রায় রয়েছে, সেখানে আপিল করে জনস্বার্থে একটা মামলা ঠুকে দেন। এই আদালতের মাধ্যমেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম বাংলাদেশে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আবার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে বিচারপতিরা বিব্রতও হয়েছেন।
বিচারের জন্য রাস্তাঘাটে গোলমাল করে অহেতুক ভোগান্তি বাড়িয়ে লাভ নেই। আর যদি রাস্তাঘাটে চিৎকার চেঁচামেচি করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জাতির সামনে হেয় করাই মূল উদ্দেশ্য হয় তাহলে থাকেন, যুদ্ধ রাজপথেই হবে। প্রমাণ হয়ে যাবে, এই দেশটি কি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির, নাকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির। একুশে মিডিয়া।’

No comments:

Post a Comment

নিউজের নীচে। বিজ্ঞাপনের জন্য খালী আছে

Pages