![]() |
একুশে মিডিয়া, এম এ হাসান, কুমিল্লা:
কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়াস্থ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের রাবেয়া বসরী স্কুল ছাত্রী হোস্টেলের এসএসসি পরীক্ষার্থী শামসুন নাহার মীম (১৫) আত্মহত্যা করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। ৫নভেম্বর রবিবার নিয়মিত মর্নিং শাখার ক্লাস করে মীম অন্য বান্ধবীদের সাথে হোস্টেলে আসে। স্কুলের পার্শ্ববর্তী ছাত্রী হোস্টেল থাকায় স্কুল হতে হোস্টেলে আসতে ছাত্রীদের তেমন কোন সময়ও লাগতো না।
দুপুরের খাবারের জন্য হোস্টেলের সকল ছাত্রী তাদের নির্ধারিত ডাইনিং স্পেসে গেলেও সেখানে অনুপস্থিতি থাকেন শাসসুন নাহার মীম (১৫)। মীমকে দুপুরের খাবার টেবিলে দেখতে না পেয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজার জন্য মীমের বান্ধবী সুমাইয়া, স্মৃতি, মীম, প্রভা, তামান্না ও সায়মা হোস্টেলের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সকল ফ্লোরে খোঁজাখুঁজি করেও মীমকে দেখতে পায়নি।
তাদের বান্ধবী মীমকে দেখতে না পেয়ে তখন তারা রাবেয়া বসরী হোস্টেল ফ্লোর ইনচার্জ আফরোজা আক্তার ও হোস্টেল ইনচার্জ রুমি আক্তারকে হোস্টেলে মীমের অনুপস্থিতির কথা জানায়।
পরবর্তীতে হোস্টেল ফ্লোর ইনচার্জ আফরোজা আক্তার রাবেয়া বসরীর পুরো বিল্ডিং খোঁজাখুজিঁর পর শামসুন নাহার মীমের ২য় তলার রুমের পাশে অরক্ষিত রুমে সিলিং ফ্যানের সাথে অজ্ঞান অবস্থায় মীমের নিথর দেহ ঝুলে থাকতে দেখেন। মীমের নিথর দেহ ঝুলে থাকতে দেখে তাৎক্ষণিক হোস্টেল ইনচার্জ রুমি আক্তার, শিক্ষক আয়শা বেগম ও ফ্লোর ইনজার্জ আফরোজা আক্তার সিলিং ফ্যানের সাথে মীমের ঝুলন্ত দেহটিকে নামিয়ে স্থানীয় পপুলার হাসপাতালে নেন।
পপুলার হাসপাতালে নেওয়ার পর হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার মীমকে মৃত ঘোষণা করেন। রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী মীমের আত্মহত্যার ঘটনায় পুরো রাবেয়া বসরী হোস্টেলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মীম কেনই বা আত্মহত্যা করেছে? এ আত্মহত্যার পেছনে কি কোন রহস্য আছে কি?এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শামসু নাহার মীমের বান্ধবীদের সাথে কথা বললে তাহারা জানান-২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী নয়ন নামের একটি ছেলে মীমকে খুব বিরক্ত করতো। সে প্রতিদিনই স্কুলের সামনে এসে মীমকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। মীমকে প্রেমের প্রস্তাব ও বিরক্ত করার বিষয়টি জানতে পেরে কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের কর্তৃপক্ষ নয়নকে বিদ্যালয় হতে বহিস্কার করেন। স্কুল হতে বহিস্কার করার পরেও নয়ন মীমকে পছন্দ করার কারনে সে প্রতিদিনই রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো এমনকি মীমের সাথে তখন তাহার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নয়ন কিছুদিন মীমের সাথে সর্ম্পক করার পরে সে বিদেশে পাড়ি দেয় বলে জানান মীমের সহপাঠীরা।
এ দিকে মীমের নিকটস্থ বান্ধবীরা একুশে মিডিয়াকে বলেন, হোস্টেলে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও শামসুন নাহার মীম লুকিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো, গত কয়েকদিন আগে মীমের মোবাইল ফোন হোস্টেল ইনচার্জ রুমি ম্যাডাম নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে লুকিয়ে আবার সে ব্যবহার করতো। এমনকি ওই মোবাইল ফোন হতে নয়নের সাথে মীম নিয়মিত যোগাযোগ করতো বলে জানা যায়।
সহপাঠীদের দাবি-মীমের আত্মহত্যার পিছনে কে রয়েছে তা হয়তো মোবাইল ট্রেকিং করলে বেড়িয়ে আসবে!
মীমের আত্মহত্যার বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন এর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমান গণি পিপিএম একুশে মিডিয়াকে বলেন, আমি গোপন সংবাদে কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ছাত্রী হোস্টেলে মীম নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পেরে পুলিশ পরিদর্শক রকিবুল ইসলামকে তাৎক্ষণিক ফোর্স নিয়ে সেখানে পাঠাই।
শামসুন নাহার মীম ২০১৫ সালের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া অবস্থায় কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ভর্তি হয় এবং চলতি বছরেই হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করার সিদ্বান্ত নেওয়ায় তাহার মা মনোয়ারা বেগম মীমকে রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের রাবেয়া বসরী নামক ছাত্রী হোস্টেলে ভর্তি করান।
মীম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভিতরচর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল মোত্তালেবের একমাত্র কন্যা। মীমের আত্মহত্যার ঘটনায় পুরো চৌদ্দগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী শামসুন নাহার মীমের আত্মহত্যার রহস্য বের করতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় মামলা তদন্তকারী পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ পরিদর্শক রকিবুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি একুশে মিডিয়াকে জানান, আমরা মীমের আত্মহত্যার পেছনে কি রয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করবো। ঘটনাস্থল হতে মীমের আত্মহত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
No comments:
Post a Comment