ঘড়ির কাটায় রাত তখন ১১ টা বাজে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল সশস্ত্র প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডাকাতি কর্মযজ্ঞে। ওই এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা। এলাকায় ডাকাতের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকাবাসী চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশের ওসি মোঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২৫ জনের পুলিশ সদস্যের টিম নিয়ে দ্রুতগতিতে চাম্বল ইউপির ফরেস্ট বিট সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকার পাদদেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। অতঃপর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। পুলিশি সাহসিকতায় ডাকাতের কবল থেকে অন্তত ২শ পরিবার রক্ষা পেয়েছে। ঘটনাটি সংঘটিত হয় মঙ্গলবার রাত ১১ টায় চাম্বলের খলিফা পাড়া পাহাড়ের পাদদেশের লোকালয়ে। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুপ্রবেশকারী অস্ত্র ও ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ।
এ ব্যপারে বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাঁশখালী থানা ওসি মোঃ কামাল হোসেন বলেন, দুর্গম পাহাড়ী কিছু কিছু এলাকায় ডাকাত দলের আনাগোনা রয়েছে এমন খবর পুলিশ পায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাঁশখালী থানা পুলিশ ডাকাত দলের আস্তানা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে অভিযানেও নেমেছে। তবে মঙ্গলবার রাতে চাম্বলের খলিফা পাড়া পাহাড়ের পাদদেশে সংঘবদ্ধ ডাকত দলের উপস্থিতির খবর এলাকাবাসীর কাছ থেকে পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া ডাকাত দলের আস্তানা নিশ্চিহ্ন করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের বিকল্প আঞ্চলিক মহাসড়ক বাঁশখালী পিএবি সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ পাচার হচ্ছে অস্ত্র ও মাদক। পুলিশ পাচারকারীদের ধরতে যতই অভিযান পরিচালনা করুক না কেন থামছে না পাচারকারীদের দৌরাত্ম। তাছাড়া মহেশখালী হতে উৎপাদিত দেশীয় অস্ত্র বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল, পুঁইছড়ি, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দাগী চিিহ্নত অপরাধী ও ডাকাত দলের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অনায়াসে। এই অস্ত্রের অপ-ব্যবহার হচ্ছে রাতের আঁধারে ডাকাতি ও বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে। অপরদিকে বিভিন্ন এলাকা হতে চিিহ্নত দাগী অপরাধী ও ডাকাতরা সংঘটিত হয়ে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে চাম্বলের খলিফা পাড়া ও হায়দারী মুড়া পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে। এই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের মদদে রয়েছে প্রভাবশালী মহল। ডাকাত দলের অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই প্রাণ নাশের শংকায় শংকিত বসবাসকারী সাধারণ মানুষরা। তাছাড়া প্রতিদিন ডাকাতদলের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে শংকিত হয়ে উঠেছে ওই এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষসহ বন কর্মকর্তারাও। চাম্বলের পাহাড়ের পাদদেশে একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামী মোঃ ইরান (২৭), ফরহাদুল ইসলাম (২৪), জাগের হোছাইন (২৬), মোঃ নেছার (৪৪), বাবুল (৩৮) এর নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে দাগী সন্ত্রাসী ও ডাকাতরা শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে।
প্রতিদিন ওই এলাকার মৃত আবদুচ ছালামের পুত্র বাবুলের চায়ের দোকানে বসে স্বশস্ত্র ডাকাতদল আড্ডায় মত্ত থাকে। তাছাড়া প্রকাশ্য মাদক বিক্রি ও সেবনের আখড়া গড়ে তুলেছে চাম্বলের খলিফা পাড়া পাহাড়ের পাদদেশের এলাকা। মাদক সেবন করতে উঠতি বয়সী তরুণরা যোগ দিচ্ছে ওই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের ঘাঁটিতে।
সব মিলিয়ে বাঁশখালীর চাম্বল অপরাধী ও অস্ত্রধারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে চাম্বল বিট কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অদৃশ্য কারণে মুখ খুলতে রাজি হননি।
No comments:
Post a Comment