এম এ হাসান, কুমিল্লা:>>>
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলোচিত আরিফ হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠিরাসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সকাল এগারটায় উপজেলার মুন্সীরহাট প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে র্যালী শুরু হয়ে মুন্সীরহাট বাজার প্রদক্ষিণ করার পর মুন্সীরহাট বাজারে অবস্থান মানববন্ধন করে নিহত আরিফের সহপাঠিরাসহ এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে আরিফ হত্যার বিচার দাবী করে বক্তব্য রাখেন মুন্সীরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আলম, ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি আবুল কাশেম, অর্থ সম্পাদক সাংবাদিক জগলুল কবির নাসির, প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ শাহ্ আরিফুল ইসলাম লতিফী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদ রানা, শুভপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফুল ইসলাম সাগর, প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ।এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মুন্সীরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা সাংস্কৃতিক লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম মজুমদার ফাহিম, সাংস্কৃতিক লীগ সহ-সভাপতি মীর শাহীন, মুন্সীরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন রুবেল, আব্দুল কাইয়্যুম আবির, শুভপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম সজীব, মো. মারুফ হোসাইন মহসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রুবেল, আ’লীগ নেতা মো. সেলিম, ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দীন মজুমদার রানা, মো. সেলিম, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, মাসুদ প্রমুখ।
এসময় প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, মুন্সীরহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিল।
মানববন্ধনে বক্তারা মেধাবী ছাত্র আরিফের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবীতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ত্রিভূজ প্রেমের কারণে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে মারা যান মুন্সীরহাট প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান কলেজের মেধাবী ছাত্র আরিফুর রহমান আরিফ (২১)।
সে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল কাদির খোকনের বড় ছেলে এবং স্থানীয় মুন্সীরহাট প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রী কলেজের ডিগ্রী শেষ বর্ষের ছাত্র।
রবিবার রাতে নিহতের লাশ চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ নিয়ে যায় এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরে সোমবার সকালে আরিফের লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। একইদিন বিকালে বা’দ আছর মরহুমের নিজ গ্রামে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারী) আরিফ মুন্সীরহাট বাজার থেকে সন্ধ্যার একটু পূর্বে নিজের মোটর সাইকেল চালিয়ে বাড়ী ফিরছিল। এসময় পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তার উপর আক্রমণ করে মারত্মকভাবে আহত করে।
পরে স্থানীয়রা ও পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় নিয়ে যেতে বললে তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায় তার পরিবার।
এদিকে আরিফের অবস্থার অবনতি দেখে টাওয়ার হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে তাকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যায় তার পরিবার। পরে ধানমন্ডি নর্দান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) বিকালে আরিফ মারা যায়।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, নিহত আরিফের সাথে দীর্ঘ তিন বছর ধরে পাশ্ববর্তী বারাইশ পশ্চিম পাড়ার সফিকুর রহমানের মেয়ে লিমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। আরিফ-লিমার প্রেমের সম্পর্কটি তার পরিবার জানতে পেরে গত পাঁচ-ছয় মাস পূর্বে লিমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় আরিফের মা। এসময় লিমার বাবা আরিফের মাকে খালি হাতেই ফিরিয়ে দেন। পরে পরিবারের চাপে লিমাও আরিফের সাথে সম্পর্কের ইতি টানে। বিষয়টি আরিফের মনে বেশ দাগ কাটে।
এদিকে পুরনো প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক শেষ করে লিমা চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার নবগ্রামের মেহেদী হাসান নামে আরেক যুবকের প্রেমে পড়ে যায়। কিছুদিন পূর্বে লিমার জন্য অন্য এক জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলে কোনো এক অজানা কারণে লিমার সে বিয়েটি ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে বিয়ে ভাঙ্গার ঘটনায় আরিফকে দায়ী করে লিমার পরিবার বিভিন্ন সময় আরিফকে হুমকি দিয়ে আসছিল বলে দাবী করে আরিফের স্বজনরা।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার জেরেই লিমার পরিবার আরিফকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোসহ এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment