মুক্তমত-একুশে মিডিয়া:
সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাঁশখালীর প্রধান সড়ক খুবই বিপদজনক। অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর বলে একটা কথা আছে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো মারাত্মক কিছু সমস্যা যেভাবে আমাদের মনে ছাপ ফেলার কথা, এখন সেভাবে ছাপ ফেলে বলে মনে হয়না। অথচ যে কোনো সময় যে কোন মুহূর্তে আপনি আমিও ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে পারি। আমরা সবাই হয়তো নিদারুণ কষ্টকর ঘটনাগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি অথবা অতি শোকে পাথর হয়ে গেছি।
রাতের ছবিঃ বাঁশখালীর প্রধান সড়ক |
প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁশখালীর কোথাও না কোথাও আহত কিংবা মৃত্যুর সংবাদ বিগত কয়েক বছর থেকে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার খবর খুব গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আসে না। এটা সম্ভবও না। কিছু কিছু সড়ক দুর্ঘটনার পর সরকারের দায়িত্বশীলদের টনক নড়ে তারপর আবার নতুন কোন দুর্ঘটনার খবরে আগেরটি চাপা পড়ে যায়।
কোন কোন মৃত্যুর খবর বিচ্ছিন্নভাবে পত্রিকার এক কোণে পরে থাকে। একটি মৃত্যু মানেই একটি পরিবারের চরম বিপর্যয়। যারা প্রিয়জন হারায় কেবল তারাই সেই কঠিন মর্মবেদনা উললব্ধি করতে পারে। বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও মৃত্যুর মিছিল দেখে অন্তত তাই মনে হয়। এভাবেই অপরিণত বয়সের মেধাবী নাগরিক হারিয়ে পরিবারের পাশাপাশি দেশও পিছিয়ে যাচ্ছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ কতটা ভারী তা বুঝতে সমর্থ হওয়া অবশ্যই উচিৎ। দূর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে বিছানায় কাতরায় তাদের কষ্ট মৃত্যু যন্তণা থেকে কোন অংশে কম নয়। অনেকে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে বেঁচে থেকে অবর্ননীয় কষ্ট ভোগ করছে। তবু কি আমরা সচেতন হচ্ছি? তাই আসুন অন্যের জায়গায় একবার নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিই।
বাঁশখালীতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ সমূহ,
দ্রুতগতি সম্পন্ন যানবাহন * মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি, * মাছের পোনা বাহিত গাড়ি থেকে পরা পানি * লবন বাহিত গাড়ি থেকে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরা লবন * রাস্তার উপর গজিয়ে উঠা অবৈধ সিএনজি ষ্টেশন * রাস্তায় উভয় পার্শ্বে অবৈধ ছোট ছোট দোকান, বিভিন্ন স্হাপনা ও হাট-বাজার * লাইসেন্স বিহীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ড্রাইভার প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে পতিত হওয়া বেশির ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দ্রুতগতি আর চালকের অজ্ঞতাই দায়ী। কারণ সারাদিন লবনের গাড়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সময় কিছু লবন রাস্তায় পরে আর সে লবনে সন্ধ্যা থেকে সারারাত কুয়াশা পরলে লবন গলে বিটুমিনের সাথে মিশে মারাত্মক ভাবে পিচ্ছিল হয়ে যায়।
এছাড়াও রয়েছে মাছের গাড়ি থেকে পরা পানিও লবন বিটুমিনের সাথে মিশে পিচ্ছিল হওয়ার বিষয়। ঐ পিচ্ছিল সড়কে তখন গাড়ীর নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না- আর এই ব্যাপারটাই অনেক ড্রাইভার আর বাইকার'রা জানেনা বলেই দ্রুতগতির কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটে। বাঁশখালীর প্রধান সড়ক এমনিতেই চলাচলরত যানবাহন অনুযায়ী সরু তাও আবার অনেকাংশে ফুটপাত বিহীন।
পরিশেষে মাননীয় জেলা প্রশাসক, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়, বাঁশখালী পুলিশ কর্মকর্তা মহোদয় এর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন জানাই- ট্রাকে উপরে নীচে ট্রিপল দিয়ে লবন পরিবহন অথবা নদীপথে লবন পরিবহনে বাধ্য করা, মাছের পোনা বাহিত গাড়িতে নিচে ট্রিপল দিয়ে রাস্তার পানি পরা রোধে নজরদারি করা, ফুটপাত সহ রাস্তা প্রশস্তকরণ, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স, রাস্তার দুপাশের স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া সহ কর্তৃপক্ষের কঠোরতা সর্বোপরি জনসচেতনতাই পারে বাঁশখালী বাসীকে গাড়ী দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা করতে।। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো লিফলেট আকারে প্রচার করলে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করি।
লেখক-সুশীল দে টুটু, সমাজকর্মী।
No comments:
Post a Comment