একুশে মিডিয়া, প্রতিবেদক:
বাঁশখালীতে জাঁকজমক আয়োজনে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হলো সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বড় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠান, এতে সার্বিক সহযোগিতা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো রাজনৈতিক দল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন।
১৩ অক্টোবর (রোববার) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা উৎসব সম্পন্ন করেছে বাঁশখালীতে বসবাসরত সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও সব ধরনের বিভ্রান্তি ও আতংকের অবসান ঘটিয়ে কোনো ধরনের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই নির্বিঘ্নে শান্তিপূর্ণ ভাবে জাঁকজমক আয়োজনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এই দুর্গোৎসব।
এবারের দুর্গোৎসব অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্নে ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে দায়িত্ববোধ থেকে নিরলস ভাবে কাজ করেছে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকরা। সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামি আন্দোলন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সাংবাদিক, সামাজিক, মানবিক সংগঠনসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সম্মিলিত ভাবে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সার্বিক সহযোগিতা করে সম্প্রীতি বজায় রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দুর্গোৎসবকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা করায় বাঁশখালী থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সকল রাজনৈতিক দলসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন বাঁশখালী পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতনী ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
বাঁশখালীতে ৮৮ টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা ও ১৬০ টি ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক বাবু কান্তি দেব, বাঁশখালী থানা কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাঃ শান্তনু দাশ, সেক্রেটারি লিটন দাশ,কালীপুর ইউনিয়ন পূজা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রনি সরকার, পৌরসভা সভাপতি নির্মল রুদ্র, অধির চক্রবর্তী, পুকুরিয়া সভাপতি সুবল দে, সাধনপুর ইউপির সাধারণ সম্পাদক সুজন দাশ, চাম্বল ইউনিয়ন সভাপতি নিউটন দাশ, বৈলছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি শেখর চৌধুরী দে, জনি শীল দে, কালীপুর ইউনিয়ন সভাপতি প্রকৌশলী রনি সরকার, পুঁইছড়ী ইউনিয়ন সভাপতি রাম প্রসাদ দেব, শেখেরখীল ইউনিয়ন সভাপতি প্রণব দেব, শীলকূপ ইউনিয়ন সভাপতি শিপন দাশসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানান যায়, সেনাবাহিনী, পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা, আনসার ভিডিপি, চৌকিদার, স্বেচ্ছাসেবক, ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং পাশ্ববর্তী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের সার্বিক সহযোগিতার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে তারা দুর্গাপূজা উৎসব পালন ও রাত ৯টার মধ্যে সব প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করেছে।
বাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রণব কুমার দাশ বলেন, এবছর আরো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে পেরেছি, বাঁশখালীর পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি পর্যন্ত পশ্চিম এলাকা থেকে পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সব পূজা মণ্ডপে গিয়েছি, পরিদর্শন করতে গিয়ে রাতে কোন মণ্ডপে জামায়াত ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা হয়েছে, আবার কোন মণ্ডপে বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আমাদের প্রতিটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। কোনো ধরনের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই সবাই একদম শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করেছে, বাঁশখালী থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলার প্রশাসন এবং বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এবং আশপাশের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের যে পরিমাণ সহযোগিতা ও সহানুভূতি পেয়েছি তাতে আমার মনে হয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপনে নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। তাই আমরা বাঁশখালী উপজেলা পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনসহ সকল রাজনৈতিক দল ও সকল ধর্মের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালীতে এবছর ৮৮ টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ১টিতে পূজা করতেছেনা, বাকী ৮৭ টি মণ্ডপে দূর্গা পূজা ও ১৬০ টিতে ঘট পূজা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করেছে। ৮৭ টি দুর্গা পূজা মণ্ডপের মধ্যে ১টিতে প্রতিমা বিসর্জ্জন দিবেনা, বাকিসব পূজা মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জ্জন সম্পন্ন করা হয়েছে। দুর্গোৎসব অনুষ্ঠান শুরু থেকেই নিয়মিত ভাবে মণ্ডপ গুলো যথারীতিতে পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল গুলোও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছে এবং সহযোগিতাও করেছে, এ সহযোগিতা আমাদের জন্যেও একধরনের সাপোর্টিং মনে করছি, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে, পূজা মণ্ডপ গুলোতে সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জ্জন ও অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে। পূজা উদযাপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁশখালীর কোথাও কোনো মণ্ডপে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এমনকি পূজা কমিটির পক্ষ থেকেও এই সংক্রান্তে কোনো ধরনের অভিযোগ আসেনাই।
No comments:
Post a Comment