লেখক: সাংবাদিক-শাহ্ মুহাম্মদ শফিউল্লাহ:
বাংলাদেশে মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পেশা হচ্ছে গাড়ি চালক।
আমাদের দেশে পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বাস, মিনিবাস, কার, অটোরিকশা ও মাল পরিবহনের প্রদান মাধ্যম ট্রাক ও মিনি ট্রাক ইত্যাদি। আমরা সাধারণ মানুষ যাদের নিজস্ব যানবাহন নেই আমরা সাধারণত এগুলোতে যাতায়াত করে থাকি।
এগুলোতে যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অনেক সময় আমাদের হেনস্থার শিকার হতে হয় পরিবহন শ্রমিকদের হাতে।
অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
অনেক সময় দেখা যায় রাস্তায় ড্রাইভারদের গাড়ি চালানোকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, অনেক মানুষ হতাহত হয়।
এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়, ধর্মঘট ডাকে। এর ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
রোগী কিংবা অফিস-আদালত, কর্মস্থলে যাওয়ার সময় পরিবহন শ্রমিকদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয়। আবার পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হচ্ছে গাড়ি চালানো। তাদের উপর তাদের পরিবারের অনেক সদস্য নির্ভরশীল।
কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তারা গাড়ি চালাতে পারে না, এর ফলে তাদের পরিবারকে অনেক সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়।
অনেক পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা এসব ধর্মঘট সমর্থন করে না। কারণ একদিন তাদের গাড়ি বন্ধ রাখলে তাদের পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু তাদের কিছু করার নেই। কারণ তারা শ্রমিক নেতাদের কথার বাইরে চলতে পারে না।
আবার অনেক সাধারণ পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের একটি কিংবা দুটি গাড়ি ড্রাইভারদের কাছে ভাড়া দেওয়া থাকে। সেই আয়ের টাকা দিয়ে তাদের পরিবার চালায়, তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালায়।
কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তাদের গাড়ি ড্রাইভার চালাতে পারে না, এর ফলে গাড়ি ভাড়া পায় না, তাদের পরিবার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় পরিবহন ধর্মঘটের সময় অনেক ড্রাইভার লুকিয়ে গাড়ি চালায় তার পরিবারের প্রয়োজনের জন্য কিন্তু তাদের অন্য ড্রাইভার কিংবা তাদের কোনো শাখার দায়িত্বশীলদের সামনে পড়লে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
অনেক সময় সাধারণ যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে শ্রমিকদের হাতে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। সরকার আইন করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে।
অনেক স্কুল-কলেজের সামনে কিংবা পরীক্ষার কেন্দ্রের সামনে বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আহত-নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা সংঘবদ্ধভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
কিন্তু এটা কেন জানতে মন চায়? তারা অন্যায় করবে এর প্রতিবাদ করলে আবার তারা সংঘবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে। অনেক সময় দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের অন্যায়কারী শ্রমিককে গ্রেপ্তার করতে যায় তাহলে তারা গ্রেপ্তার করতে পারে না উল্টো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ করে বসে পরিবহন শ্রমিকরা।
আবার অনেক সময় তাদের যদি গ্রেপ্তার করে তাহলে শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘট শুরু করে। এদের অন্যায়ের কি প্রতিকার নেই?
এরা এত ক্ষমতা কিভাবে পেল? তাদের এই ধর্মঘটের কারণে দূর-দূরান্তে অনেক সময় চাকরির ইন্টারভিউসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করা যায় না। অনুরোধ করলে কিংবা প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
আমাদের সাধারণ মানুষের কি অপরাধ? আমরা এই শ্রমিক সংগঠনের হাতে কেন জিম্মি হয়ে থাকব? আমাদের রাস্তায় গাড়ি চাপা দিবে আবার এর প্রতিবাদ করলে আমাদের হামলা করে বসবে।অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করবে এর প্রতিবাদ করলে তারা সংঘবদ্ধভাবে আমাদের উপর হামলা করবে, এর কি কোনো প্রতিকার নেই? প্রতিকার করতে গেলে প্রথমে সরকারকেই উদ্দ্যোগ নিতে হবে।
দেশ এভাবে চলতে পারে না। আইন পরিবর্তনের জন্য দেশের কোটি কোটি মানুষকে জিম্মী করে আইন পরিবর্তন সম্ভব নয়। সমযোতা ছাড়া মানুষকে জীম্মী না করে সরকারের দায়িত্বশীল থেকে এবং মালিক ও শ্রমিক নেতাদের এক টেবিলে বসে সমন্বয়ের মাধ্যমে আইন পরিবর্তন সম্ভব। এই পরিবর্তনে পার্লামেন্টে ছাড়া কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তাই শ্রমিকদেরকে আইন পরিবর্তন করতে হলে সংসদ বসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment