অনুমতি ছাড়াই কোটি টাকার বাণিজ্য মেলা: চন্দনাইশে সরকারি কলেজের জমিতে মেলা ঘিরে জনদুর্ভোগ ও ক্ষোভ

মোহাম্মদ ওমর ফারুক, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শুরু হয়েছে কোটি টাকার বাণিজ্য মেলা। বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ মাঠে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হয় এই মেলার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের জায়গায় চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ এবং তোরণের দুই পাশে স্থাপন করা হয়েছে টিকিট কাউন্টার। মেলায় প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা করে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক স্টল স্থাপন করে ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া মূল্যে ভাড়া দেয়া হয়েছে। মেলায় লাইটিং, সার্কাস ও বিভিন্ন রাইড চালু রয়েছে এবং বেচাকেনাও চলছে জমজমাটভাবে।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মেলা মাঠে প্রবেশের জন্য সরকারি খাল ভরাট করা হয়েছে। এতে বৃষ্টিপাত হলে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কের পাশে মেলা বসানোর কারণে যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। মেলা মাঠের পাশেই রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—হাশিমপুর মকবুলিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, যা পরীক্ষার পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।

জানা গেছে, 'পায়রা' নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে আলী ইমরান নামে এক ব্যক্তি মার্চ মাসের শুরুতে জেলা প্রশাসকের কাছে মাসব্যাপী মেলার অনুমতির জন্য আবেদন করেন, তবে প্রশাসন থেকে অনুমতি পাওয়া যায়নি। এরপরও অনুমতি পাওয়া গেছে বলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মেলার আয়োজন করেন তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী আলী ইমরান মিথ্যা তথ্যের আশ্রয়ে কোটি টাকার আয় করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার আয়োজক আলী ইমরান দাবি করেন, জেলা প্রশাসক অনুমতি দিয়েছেন। তবে অনুমতির কাগজপত্র দেখাতে না পেরে তিনি বলেন, "জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।"

চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার মাসে কলেজ, মাদ্রাসা ও মহাসড়কের পাশে অনুমতি ছাড়া মেলা আয়োজন এবং সরকারি খাল ভরাটের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।” তিনি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, “মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ কোনো অনুমতির কাগজ দেখাতে পারেনি। কিন্তু যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে দায় পুলিশের ওপর বর্তাবে। তাই আমরা মেলায় একটি পুলিশ টিম মোতায়েন রেখেছি।”

গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রনজিৎ কুমার দত্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. সুব্রত বরণ বড়ুয়া নিশ্চিত করেছেন, “মেলা মাঠটি আমাদের কলেজের জায়গা।”

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাজিব হোসেন জানান, “আয়োজক কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন, আমি বিধি মোতাবেক রিপোর্ট দিয়েছি। তবে অফিসিয়ালভাবে অনুমতির কোনো কপি আমার হাতে আসেনি।”

জেলা প্রশাসকের অনুমতির বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, “এরা একটি দুষ্টচক্র। জেলা প্রশাসন এ ধরনের কোনো মেলার অনুমতি দেয়নি।”