রুশমী আক্তার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য- বাংলাদেশের প্রাচীনতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলোর একটি। বিস্তীর্ণ এ বনের গহীনে রয়েছে এশিয়ান হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল। বহু বছর ধরে এই বনাঞ্চল মানবসৃষ্ট চাপ, অনিয়ন্ত্রিত গাছ কাটাসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে প্রাকৃতিক বনভূমি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নতুন এক উদ্যোগ। চুনতি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। একই সঙ্গে আকাশমনি প্রজাতির একক গাছ অপসারণ করে সেখানে প্রাকৃতিক বন পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও উপস্থিত অতিথিরা:
১৫ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দুপুর ১টায় চুনতি অভয়ারণ্যের সাপমারা এলাকায় এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন চুনতি বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূর জাহান, রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজি বাহার উদ্দিন, বিট কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার দফাদার, বনবিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় বন বিভাগের সদস্য এবং গণমাধ্যম কর্মীরা।
বক্তাদের বক্তব্য:
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চুনতি অভয়ারণ্য শুধু হাতির আবাসভূমি নয়; বরং এটি অসংখ্য বন্যপ্রাণীরও নিরাপদ আশ্রয়। দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ ছাড়া এ অভয়ারণ্যের প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক বন ও দেশীয় বৃক্ষের সমন্বয়ই পারে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে।
তাঁরা আরও বলেন, অবশিষ্ট অভয়ারণ্য যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বন বিভাগের কঠোর নজরদারি থাকবে। একই সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগও নেওয়া হবে।
বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম:
উদ্যোগের অংশ হিসেবে আকাশমনি গাছ সরিয়ে অভয়ারণ্যের বনপুকুর ও সাপমারা এলাকার গভীর জঙ্গলে ২০ প্রজাতির দেশীয় গাছের চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চালতা, চম্পা, মহুয়া, বট, কদম, ঢাকিজাম, পুতিজাম, সিভিট, চিকরাশি, অর্জুন, গামার, বকফুল, বহেরা, ছাতিয়ান, জারুল, শিমুল, তেজবহুল, তেলসুর, আমলকি, হরিতকি ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রত্যাশা:
পরিবেশবিদদের মতে, চুনতি অভয়ারণ্যে এ ধরনের দেশীয় বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। হাতির খাদ্যসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্যও আবাসস্থল তৈরি হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও প্রকৃতির প্রতি সচেতনতা বাড়বে।
চুনতি অভয়ারণ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।




No comments:
Post a Comment