রুশমী আক্তার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) লোহাগাড়ার চুনতি
ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামের এক
নারিকেলগাছে ঝুলছে
বাবুই
পাখির
বাসা।
-নিজস্ব
চিত্র
একসময় বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের তালগাছে সারি সারি বাবুই পাখির বাসা দোল খেত বাতাসে। শিশুদের কৌতূহল, প্রকৃতির সৌন্দর্য আর গ্রামের আকাশে প্রাণের সঞ্চার ঘটাত এই পাখিদের উপস্থিতি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে আজ সেই দৃশ্য যেন অতীতের স্মৃতি। দিন দিন কমে যাচ্ছে তালগাছ, খেজুরগাছ ও নারিকেলগাছ— আর সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা ও তাদের কিচিরমিচির শব্দ।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন আর আগের মতো দেখা মেলে না বাবুই পাখির ঝুলন্ত শিল্পসম বাসা। একসময় এরা ছিল গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সূক্ষ্ম ঠোঁটের কারুকাজে বাবুই পাখি গড়ে তুলত দোলনা আকৃতির নিখুঁত বাসা— তালপাতা, খেজুরপাতা বা নারিকেলপাতার আঁশ দিয়ে তৈরি সেই বাসাগুলো ছিল এক অনন্য প্রাকৃতিক স্থাপত্যের নিদর্শন। সেখানে তারা ডিম পাড়ত, বাচ্চা ফুটাত, আর বাতাসে দুলতে দুলতে জীবনের সুরে মিশে যেত।
গ্রামীণ সমাজে এ দৃশ্য ছিল আনন্দের প্রতীক, বিশেষ করে শিশুদের কাছে। বিকেলবেলা মাঠ থেকে ফিরে গাছের ডগায় তাকিয়ে থাকা, বাসা গোনা, কিংবা পাখির ওড়াউড়ি দেখা— ছিল এক অপরূপ আনন্দঘন সময়। তবে এখন আর সেসব দৃশ্য দেখা যায় না।
বৃক্ষনিধন ও নগরায়ণ দায়ী
স্থানীয়দের মতে, বসতভিটার সম্প্রসারণ, রাস্তা নির্মাণ, এবং নির্বিচার বৃক্ষনিধনের কারণে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে তালগাছ ও খেজুরগাছ। ফলে বাবুই পাখির প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাছ কমে যাওয়ায় পাখিরা বাধ্য হচ্ছে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে।
চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামে এখনও কিছুটা স্মৃতি রয়ে গেছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়ির পাশে উঁচু এক নারিকেলগাছে এখনো ঝুলছে কয়েকটি বাবুই পাখির বাসা। তিনি বলেন,
“প্রতি বছর এই গাছে বাবুই পাখিরা এসে বাসা বাঁধে। সকাল-বিকেল তাদের কিচিরমিচিরে চারপাশ মুখরিত থাকে। তাদের ফিরে আসা আমাদের কাছে আনন্দের বার্তা।”
একই গ্রামের বাসিন্দা আজাদ বলেন,
“যে গ্রামে বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়, সেই গ্রামটা জীবন্ত থাকে। আজ সে প্রাণ নেই, আকাশটাও নিঃশব্দ।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবুই পাখি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তাদের টিকিয়ে রাখতে গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় প্রজাতির গাছ রোপণ, পাখির জন্য নিরাপদ আবাস সৃষ্টি ও নির্বিচার গাছ কাটায় নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
পরিবেশবিদদের মতে,
“বাবুই পাখি প্রকৃতির স্থপতি। তাদের উপস্থিতি জীববৈচিত্র্যের সুস্থতার প্রতীক। এখনই সচেতন না হলে, সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে এই অনন্য প্রজাতিটি।”



No comments:
Post a Comment