![]() |
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জীব বৈচিত্র্য জরিপ সমীক্ষা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এ লক্ষ্যে নগরীর ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ডে জীব বৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী,উদ্ভিদ,অনুজীব প্রজাতির জরিপ সমীক্ষা, আবিস্কার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের প্রয়োজনীয়তা এবং জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বায়োডাইভার্সিটি রিসার্চ গ্রুপ অব বাংলাদেশ (বিআরজিবি)’র চেয়ারম্যান ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জরিপকরণ প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. বদরুল আমিন ভূঁইয়া। প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রাথমিক ভাবে ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আগামীকাল সকালে শুলকবহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে প্রকল্প কাজ উদ্বোধন করা হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে আজ দুপুরে চসিক সম্মেলন কক্ষে বিআরজিবি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে বিআরজিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বদরুল আমিনের উপস্থাপিত তথ্যে জানা যায়, পাইলট প্রকল্পের আওতায় শুলকবহর ওয়ার্ড এলাকায় কি পরিমাণ গাছ-পালা,পশু-পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণির প্রয়োজন তার সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ , জনসংখ্যার অনুপাতে গাছ-পালা,পশু-পাখিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণির ভারসাম্য কতটুকু সে বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি কোন ধরণের প্রাণি প্রজাতির অপ্রতুলতার কারণে পরিবেশে কোন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং সমাধানের উপায় উদ্ভাবনে পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ড এলাকায় জরিপের স্থান নির্বাচন,উদ্ভিদকূল,পতঙ্গ,স্বাদু পানির শামুক-ঝিনুক,মাছ,ব্যাঙ,সরীসৃপ,পক্ষীকূল,স্তণ্যপায়ী ও গৃহপালিত প্রাণি এবং অন্যান্য প্রাণির উপর জরিপ কাজ পরিচালনা করা হবে।
ওয়ার্ড এলাকায় কি পরিমাণ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণি আছে,যারা অক্সিজেন গ্রহণ করে-কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। কি পরিমাণ গাছ আছে যা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং প্রাণিদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে, এই গাছ কিভাবে বন্য প্রাণিকে আশ্রয় ও খাদ্য প্রদান করে, মানুষের ব্যবহৃত সরঞ্জাম-আশ্রয়ের উপকরণ প্রদান করে এ বিষয়ে জন-সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হবে।
এই প্রকল্পে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিনুদ্দিন মৃধা,অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল পাশা,অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন,অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল মিঞা,অধ্যাপক ড. এম মারুফ হোসেন,অধ্যাপক ড. এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী,অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকী,ড. শেখ আবদুল মান্নান,ড. মাহমুদা বেগম,সন্তোষ মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জীব বৈচিত্র্যের প্রাণি ও উদ্ভিদকূল আমাদের অক্সিজেন,খাদ্য দিয়ে থাকে। তাছাড়া অনুজীবসমূহ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একত্রিত হয়ে পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলে। যানবাহন , শিল্প কারখানা হতে নির্গত ধোঁয়া হৃদরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। এ থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষ রোপনের বিকল্প নেই।তাছাড়া উপকারি প্রাণি,পতঙ্গ দ্বারা ফসলের পরাগায়ন,আপদ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।কিন্তু এসব বিষয় সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। আমরা প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা ফেলে নালা-খাল ভরাট করছি। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করছি। পাহাড় কেটে, পুকুর,জলাশয় ভরাট করে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করছি। আমরাই দিন দিন পৃথিবীকে আমাদের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি।
তিনি আরো বলেন, জীব বৈচিত্র্য সমীক্ষা জরিপের মাধ্যমে সংরক্ষণ কাজের ফলে এলাকার প্রাণি,উদ্ভিদের সঠিক একটি পরিসংখ্যান সংগ্রহসহ জনসচেতনতাও বৃদ্ধি হবে। তাছাড়া এই জরিপ কাজ নগরায়নে পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। জরিপ কাজ পরিচালনা শেষে বিআরজিবি চসিকের কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করবে। রিপোর্ট অনুসন্ধান করে পরবর্তীতে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে এই জীব বৈচিত্র্য জরিপ ও সংরক্ষণ কাজ পরিচালনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি আগামী বাজেটে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম,চসিক প্রধান নির্বাহি মো. সামসুদ্দোহা,প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ,নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিমসহ বিআরজিবি গবেষক দল উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment