একুশে মিডিয়া, রিপোর্ট:
১ই ডিসেম্বার ২০২২ ইং। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মিছিল ও চাষাঢ়ার বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচি পালন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। এ আয়োজনের মূল আয়োজক ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করলেও তাদের পথে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে দলীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে।
ঘটনাটি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে। শহরের ডিআইটি এলাকা থেকে বিজয় র্যালি শুরু করে জেলা বিএনপি। প্রচুর নেতাকর্মীর অংশ গ্রহণে হওয়া র্যালিটি শহরের কালীরবাজার মোড়ে এলে হাওয়া হয়ে যান গিয়াসউদ্দিন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বড় মিছিল দেখে ঘাবড়ে গিয়ে তিনি পালিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই ডিআইটি এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করে জোরালো বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। সমাবেশ শেষে বিজয় র্যালি শুরু হয়।
র্যালি শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলে ঘাবড়ে যান গিয়াসউদ্দিন। কারণ, ওই সময় নিজেদের কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বিজয় দিবস উপলক্ষে নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছিলেন।
বিএনপির বিজয় র্যালিটি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। দুই পক্ষ ‘জয় বাংলা’ ও ‘জিয়া’ শ্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠা মাত্র সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এগিয়ে আসেন।
এ সময় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা গিয়াসউদ্দিন ঘাবড়ে যান। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা এগিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে যান ও নিজের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দেন।
বিএনপির মিছিল এগিয়ে গিয়ে শহরের কালীরবাজার মোড়ে পৌঁছলে হারিয়ে যান গিয়াসউদ্দিন। এরপর থেকে তাকে মিছিলে দেখা যায়নি। পরে জেলার সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা মিলে চাষাঢ়ায় বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে কর্মসূচি শেষ করেন।
নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্লোগানে ভয় পেয়ে মিছিল থেকেই চলে যেতে চাচ্ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। নেতাকর্মীরা না করায় তিনি কালিরবাজার মোড় পর্যন্ত আসেন। পরে সেখান থেকেই কাউকে কিছু না বলে সটকে পড়েন। বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক না করে চলে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা তার সমালোচনা করেন।
মিছিলে থাকা একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সটকে পড়ার আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিংবা শীর্ষ নেতাদের কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দিন। মিছিলের মাঝপথে তিনি উধাও হয়ে যান।
এ ঘটনায় হাস্যরস করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে মাঠে নেমেছিল। তবে তা সম্ভব হয়নি। খোকন সাহাকে দেখে ভয় পেয়ে চাষাঢ়া পর্যন্ত যাওয়ার সাহস পাননি গিয়াস। মাঝপথেই সটকে পড়েন।
এ ঘটনার পরে দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় খোকন সাহা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা যে স্লোগান দিয়েছে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেত আমাদের। তারা চেয়েছিল আমরা যাতে হামলা করি। আগামী দিনের জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, জেলা বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গিয়াস মূলত ভয়ে পালিয়েছিলেন। চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা থাকতে পারে এ শঙ্কায় তিনি কাউকে কিছু না বলে চলে যান। কারণ, সমাবেশে তিনি শামীমকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামনে পড়ে তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment